বৃহস্পতিবার, মে ০৮, ২০২৫

০৩। আজিকে এই খুশির রাতে

"ভালোবাসা আর শংকায় বাজে সদা মনের বীণা" কবিতায় কবি আরিফ শামছ্ আল্লাহর কাছে একজন পাপী, অথচ প্রেমময় বান্দার হৃদয় নিংড়ানো ক্ষমাপ্রার্থনা তুলে ধরেছেন। এটি আত্মগ্লানি, আত্মসমর্পণ, ঈমান ও ভালোবাসার এক নিখাদ কাব্যিক আবেদন, যা মানুষের হৃদয়ে নিজেকে নতুন করে চিনে নেয়ার আহ্বান জানায়।


ভালোবাসা আর শংকায় বাজে সদা মনের বীণা,
মাফ পেয়েছি কী ক্ষমাশীল দয়াময়!
তা' জানিনা।
হৃদয়ের গভীর হতে কি বিষাদের মর্ম বেদনা,
তীব্র হতে তীব্রতর অসহনীয়, তবু হারাতে চাইনা।
বুকে হাত দিয়ে বলি, কতবার যে তোমায় স্মরেছি,
পলে পলে অনুপলে, দানা পানি সামনে পেয়েছি।
ভূলে ও হাত চলেনি তা' নিতে বরং "রোজা রেখেছি"।
ভাংতে পারিনা কোন ভাবে, কিভাবে দাঁড়াবো সেদিন!
ভালবাসি তোমায়, ভালবাসা পেতে চাই সদা,
পদে পদে ভূল আর অবাধ্যতা! যদি করো ক্ষমা।
দূর্বল আর শেষ নবীর (সাঃ) অনুসারী "অনেক দাবী"!
তাঁ'র সুন্নাহ, রীতিনীতি কতটুকুইবা মানিতে পারি!
রাহমান তুমি, রাহীম তুমি ওগো পরম দয়াময়,
আজিকে এই খুশির রাতে ক্ষমা, রহমতের অনুনয়।
যতো আবেদন, বাহারি চাওয়া, দু'জাহানের তরে!
তোমার বান্দা, মহানবী (সাঃ) প্রিয় উম্মত; 
যেনো হয় কথা-কাজে।

আরিফ শামছ্

কবিতা বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা
কবিতা: ভালবাসা আর শংকায় বাজে সদা মনের বীণা
কবি: আরিফ শামছ্


১. কাব্যিক বিশ্লেষণ:

এই কবিতাটি একান্ত অনুভবের, হৃদয়ের গহীনে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা, আত্মগ্লানি, ঈশ্বরপ্রেম এবং আত্মসমর্পণের এক আন্তরিক অনুরণন।

  • কবি এখানে আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।
  • মানবিক দুর্বলতা, অপরাধবোধ, ভালোবাসা এবং ঈশ্বরের করুণা — সব মিলে এক উচ্চস্তরের কাব্যিক অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে।

২. ছান্দসিক ও মাত্রাগত গঠন:

  • কবিতাটি মুক্তছন্দে রচিত।
  • সরল বাক্য প্রয়োগে ভাবের গভীরতা এসেছে, তবে নিয়মিত মাত্রাবিন্যাস অনুপস্থিত — যা আবেগপ্রবণ স্বগতোক্তির ছন্দ সৃষ্টি করে।
  • অন্ত্যমিল নেই, তবে মাঝে মাঝে অলITERATION এবং ধ্বনির পুনরাবৃত্তি আছে — যেমন: "তীব্র হতে তীব্রতর অসহনীয়", "ভুল আর অবাধ্যতা" ইত্যাদি।

৩. সাহিত্যিক মূল্যায়ন:

  • ধর্মীয় অনুভবের কবিতা, যেখানে মানব-প্রেম ও ঈশ্বর-ভক্তির মিলন ঘটেছে।
  • কবি একদিকে আত্মোপলব্ধি করছেন, অন্যদিকে নবীজীর (সাঃ) উম্মত হিসেবে ক্ষমা প্রার্থনা করছেন।
  • "বুকে হাত দিয়ে বলি, কতবার যে তোমায় স্মরেছি…" – এতে রোমান্টিক প্রেমআধ্যাত্মিক প্রেম দুটোই মিশে গেছে, সৃষ্টি করেছে দারুণ দ্ব্যর্থতা।

৪. রসাস্বাদন:

  • করুণ রসভক্তিরস প্রধান।
  • কবির অসহায় অনুভব ও ক্ষমা প্রার্থনা পাঠকের হৃদয়ে বেদনার সুর তোলে।
  • প্রেম, পাপ, অনুশোচনা ও ক্ষমার মধ্যে যে টানাপোড়েন — তা কবিতার রসকে গভীর করেছে।

৫. আলোচনা ও সমালোচনা:

শক্তি:

  • কবিতায় গভীর আত্মজিজ্ঞাসা রয়েছে, যা পাঠককে আত্মসমালোচনার পথে আহ্বান করে।
  • সাহসিক আবেগ-প্রকাশ: কবি নিজের ভুল, ভালোবাসা, দ্বিধা ও অনুতাপ নির্দ্বিধায় প্রকাশ করেছেন।

সীমাবদ্ধতা:

  • কিছু পঙ্‌ক্তিতে ভাষা ও ব্যাকরণে শৈল্পিকতা আরও বাড়ানো যেত।
  • ছন্দ ও গঠন আরও সংহত করলে পাঠে গতি ও রসাস্বাদন উজ্জ্বল হতো।

৬. প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ:

  • কবিতাটি সম্ভবত রমজানের শেষ রাত বা ঈদের প্রাক্কালে লেখা, কারণ এতে আছে "খুশির রাত", "রোজা", "ক্ষমা চাওয়া" ইত্যাদি প্রসঙ্গ।
  • এই প্রেক্ষাপটে কবির মনজুড়ে আছে – ভালোবাসার আকুতি, গুনাহের ভয়, আত্মজিজ্ঞাসা এবং পরম স্রষ্টার করুণার প্রত্যাশা

৭. মানব জীবনে তাৎপর্য ও গুরুত্ব:

  • কবিতাটি একাধারে একটি আত্মশুদ্ধির অনুশীলন এবং আধ্যাত্মিক আত্মসমর্পণের পাঠ
  • এটি মানুষকে শেখায়—
    • ভুল স্বীকার করতে,
    • ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করতে,
    • আত্মসমালোচনার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ হতে,
    • ও আল্লাহর দরবারে বিনীত হতে।

৮. সারাংশ:

এই কবিতায় কবি নিজের অপরাধবোধ, ভালোবাসা, গুনাহ, রোজা, এবং নবী (সাঃ)-এর উম্মত হিসেবে আত্মপরিচয় তুলে ধরে আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভালোবাসা ও শংকার মধ্য দিয়ে তাঁর হৃদয়ের মর্মবেদনা প্রকাশ পেয়েছে।


৯. সারমর্ম:

"ভালবাসা আর শংকায় বাজে সদা মনের বীণা" কবিতায় কবি আরিফ শামছ্ আল্লাহর কাছে একজন পাপী, অথচ প্রেমময় বান্দার হৃদয় নিংড়ানো ক্ষমাপ্রার্থনা তুলে ধরেছেন। এটি আত্মগ্লানি, আত্মসমর্পণ, ঈমান ও ভালোবাসার এক নিখাদ কাব্যিক আবেদন, যা মানুষের হৃদয়ে নিজেকে নতুন করে চিনে নেয়ার আহ্বান জানায়।


 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Heartfelt Thanks for your valuable comments.

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান

📄 প্রবন্ধ শিরোনাম: “কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান” ✍️ লেখক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)...