“ব্রয়লার মুরগীর আবিষ্কার ও ইতিহাস” নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ – ইতিহাস, জাতের মিশ্রণ, কোম্পানির ভূমিকা, টাইমলাইন, উদ্দেশ্য ইত্যাদি।
---
🐔 ব্রয়লার মুরগীর আবিষ্কার: ইতিহাস, কারণ ও জেনেটিক মিশ্রণ
১. প্রাচীন সূচনা
ব্রয়লার মুরগীর মূল শিকড় বন্য জঙ্গলের মুরগী (Red Junglefowl, Gallus gallus)।
ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মানুষ প্রথমে এই মুরগীকে পোষ মানায়।
প্রাচীনকালেই চীন, ভারত ও ইউরোপে দেশি জাতের মুরগী তৈরি হয়, যেগুলো ডিম ও মাংসের জন্য ব্যবহৃত হতো।
---
২. আধুনিক যুগের আবিষ্কার (১৯শ – ২০শ শতক)
১৮২০–১৮৫০: ইংল্যান্ডে Cornish Chicken তৈরি হয়, শক্ত শরীর ও বুকের মাংস বেশি।
১৮৬০–১৮৮০: আমেরিকায় White Plymouth Rock জনপ্রিয় হয়, প্রচুর ডিম ও নরম মাংসের জন্য।
১৯২০–১৯৩০: আমেরিকায় প্রথম Cornish × Plymouth Rock ক্রস করে “ব্রয়লার” নামের দ্রুত বেড়ে ওঠা মুরগীর জন্ম।
১৯৪৮: আমেরিকায় “Chicken of Tomorrow Contest” হয়, যেখানে সেরা দ্রুত-বর্ধনশীল জাত নির্বাচিত হয়। এখান থেকেই বাণিজ্যিক ব্রয়লার শিল্পের সূচনা।
---
৩. জেনেটিক মিশ্রণ
আধুনিক ব্রয়লার জাত তৈরি হয়েছে কয়েকটি নির্বাচিত প্রজাতি মিশিয়ে:
1. Cornish (ইংল্যান্ড) → বুকের মাংস ও দেহের আকার বড় করতে।
2. White Plymouth Rock (আমেরিকা) → ডিম উৎপাদন ও দ্রুত বেড়ে ওঠার ক্ষমতা।
3. New Hampshire, Rhode Island Red → টিকে থাকার ক্ষমতা ও মাংসের গুণমান।
4. Leghorn, Sussex ইত্যাদি → রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে।
👉 ফলাফল: এমন এক হাইব্রিড জাত তৈরি হলো যেটি ৩০–৪০ দিনে ২ কেজি ওজন হয়, স্বল্প খরচে অনেক মাংস দেয়।
---
৪. বহুজাতিক কোম্পানির ভূমিকা
ব্রয়লার এখন “হাইব্রিড লাইন” যা গোপনভাবে বড় কোম্পানির হাতে নিয়ন্ত্রিত।
তারা মূলত ৪ ধাপের মাধ্যমে জাত নিয়ন্ত্রণ করে:
1. Great-Grandparent Stock (GGP) – মূল জেনেটিক লাইন।
2. Grandparent Stock (GP) – নির্বাচিত লাইন।
3. Parent Stock (PS) – যেগুলো থেকে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়।
4. Commercial Broiler – খামারিদের হাতে আসে (Day Old Chick)।
বিশ্বের শীর্ষ ব্রয়লার কোম্পানি:
Cobb-Vantress (USA)
Ross-Aviagen (UK/USA)
Hubbard (France)
Lohmann (Germany)
👉 বাংলাদেশ ও ভারতীয় উপমহাদেশে Cobb 500, Ross 308, Hubbard Classic সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
---
৫. উদ্দেশ্য
বিশ্ব জনসংখ্যাকে সস্তায় প্রোটিন সরবরাহ করা।
দ্রুত ও বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানো।
কম খাবারে বেশি মাংস পাওয়া (Feed Conversion Efficiency)।
আন্তর্জাতিক বাজার দখল ও লাভবান হওয়া।
---
৬. সমস্যা
অ্যান্টিবায়োটিক ও কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
দেশি মুরগীর বিলুপ্তির ঝুঁকি।
বহুজাতিক কোম্পানির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরতা।
পরিবেশ দূষণ ও জেনেটিক বৈচিত্র্য কমে যাওয়া।
---
৭. সমাধান
অর্গানিক ও জৈব ব্রয়লার পালন।
দেশি মুরগী ও উন্নত জাতের হাইব্রিড উন্নয়ন।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ।
ক্ষুদ্র খামারি সুরক্ষায় সরকারি নীতি সহায়তা।
---
📌 উপসংহার
ব্রয়লার মুরগী মূলত Cornish × Plymouth Rock ক্রস থেকে শুরু হয়ে, পরে আরও বিভিন্ন জাত মিশিয়ে আধুনিক হাইব্রিডে রূপ নেয়। আজকের দিনে এটি বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রোটিনের একটি প্রধান উৎস, তবে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা ও উন্নত নীতি অপরিহার্য।
---
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Heartfelt Thanks for your valuable comments.