পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগরের নিচেই পাহাড় ও পর্বতশ্রেণী রয়েছে, তবে প্রশান্ত মহাসাগর (Pacific Ocean)-এর নিচে সবচেয়ে বেশি পর্বতমালা ও আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
কারণ:
-
মিড-ওশান রিজ (Mid-Ocean Ridge):
- প্রশান্ত মহাসাগরে পৃথিবীর দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয় পর্বতমালা রয়েছে, যেমন প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার (Pacific Ring of Fire)।
- এখানে ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বেশি হয়।
-
মারিয়ানা ট্রেঞ্চ ও গভীরতম পর্বত:
- মারিয়ানা ট্রেঞ্চ-এ চ্যালেঞ্জার দীপ (Challenger Deep) নামে জায়গা রয়েছে, যা পৃথিবীর গভীরতম বিন্দু (প্রায় ১১ কিমি গভীর)।
- এর চারপাশে অনেক বিশাল পর্বত ও গভীর খাদ রয়েছে।
-
জলতলের নিচে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি:
- প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে হাওয়াইয়ান-ইম্পেরর চেইন, টোঙ্গা ট্রেঞ্চ, কুরিল-কামচাটকা ট্রেঞ্চ-এর মতো অনেক আগ্নেয় পর্বতশ্রেণী রয়েছে।
সুতরাং, পাহাড় বা পর্বতের সংখ্যা ও উচ্চতার দিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরই সবার শীর্ষে।
বিশ্বের কোন মহাদেশে সবচেয়ে বেশি পাহাড় ও পর্বত রয়েছে?
এশিয়া (Asia) মহাদেশে সবচেয়ে বেশি পাহাড় ও পর্বতশ্রেণী রয়েছে।
কেন এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি পাহাড়? (রহস্য ও কারণ)
১. হিমালয় ও টেকটোনিক প্লেট সংঘর্ষ
- ভারতীয় প্লেট ও ইউরেশীয় প্লেটের সংঘর্ষের ফলে হিমালয় পর্বতমালা গঠিত হয়েছে।
- এটি এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারণ প্লেটগুলোর সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
-
বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বত এখানেই
- এভারেস্ট (৮,৮৪৮ মিটার)
- কে-২, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, মাকালু ইত্যাদি শৃঙ্গগুলো এশিয়াতেই অবস্থিত।
-
বিভিন্ন বিশাল পর্বতশ্রেণী
- হিমালয়, কারাকোরাম, হিন্দুকুশ, আলতাই, উরাল, তিয়েন শান, কুনলুন, আনাতোলিয়ান পাহাড় ইত্যাদি বিশাল পর্বতশ্রেণী রয়েছে।
-
প্রাকৃতিক রহস্য ও বৈচিত্র্য
- হিমালয়ে এখনও অনেক অনাবিষ্কৃত স্থান ও রহস্যময় অঞ্চল রয়েছে।
- অনেক গবেষক দাবি করেন, হিমালয়ের কিছু এলাকায় পরিচিত প্রাণীর বাইরে কিছু রহস্যময় প্রাণীর অস্তিত্ব থাকতে পারে (যেমন ইয়েতি)।
- শম্ভালা ও গোপন উপত্যকার কিংবদন্তি - কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, হিমালয়ের গভীরে এক রহস্যময় স্থানে উন্নত সভ্যতা থাকতে পারে।
উপসংহার:
এশিয়া মহাদেশে সবচেয়ে বেশি ও সবচেয়ে উঁচু পর্বতশ্রেণী রয়েছে, যার প্রধান কারণ টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ। সেইসঙ্গে, এখানকার অনেক অঞ্চল এখনও রহস্যে ঘেরা, যা অভিযাত্রী ও গবেষকদের জন্য আকর্ষণীয়।
পাহাড় ও পর্বত কিভাবে ও কখন তৈরি হয়?
পাহাড় ও পর্বত তৈরি হয় টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং ক্ষয়প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এর গঠন লক্ষ-কোটি বছর ধরে হয়ে থাকে।
পাহাড় ও পর্বত গঠনের প্রধান কারণ:
১. টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ:
- পৃথিবীর ভূত্বক (crust) বিভিন্ন প্লেটের তৈরি, যা ধীরে ধীরে স্থানান্তরিত হয়।
- যখন দুটি প্লেট একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করে, তখন ভাঁজ সৃষ্টি হয়ে পাহাড় গঠিত হয়।
- উদাহরণ: হিমালয় পর্বত (ভারতীয় প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের সাথে ধাক্কা খেয়ে গঠিত)।
-
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত:
- ম্যাগমা ভূগর্ভ থেকে উঠে আসে এবং ঠান্ডা হয়ে কঠিন হলে আগ্নেয় পর্বত তৈরি হয়।
- উদাহরণ: মাউন্ট ফুজি (জাপান), মাউন্ট কিলিমানজারো (আফ্রিকা)।
-
ক্ষয়প্রক্রিয়া ও ভূমিধস:
- নদী, বরফ ও বাতাসের ক্ষয়ের ফলে নতুন পাহাড় বা পাহাড়ের পরিবর্তন হয়।
পাহাড় ও পর্বতে বিদ্যমান মূল্যবান সম্পদ
পাহাড় ও পর্বতের অভ্যন্তরে প্রচুর খনিজ ও মূল্যবান সম্পদ পাওয়া যায়, যেমন:
- স্বর্ণ (Gold) & রূপা (Silver) – হিমালয় ও দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালায় পাওয়া যায়।
- হীরক (Diamond) – আফ্রিকার কিম্বারলাইট পাহাড় থেকে উত্তোলন করা হয়।
- তামা (Copper) & লোহা (Iron) – উরাল, রকি পর্বত ও হিমালয়ে প্রচুর পাওয়া যায়।
- কয়লা ও তেল (Coal & Petroleum) – পর্বতের নিচের স্তরে ব্যাপক পরিমাণে মজুদ থাকে।
- নানা রকম মূল্যবান পাথর – নীলা (Sapphire), পান্না (Emerald), চুনি (Ruby) ইত্যাদি পাহাড় থেকেই পাওয়া যায়।
পাহাড় ও পর্বতের সৃষ্টি: বিজ্ঞান ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ
বিজ্ঞান অনুযায়ী:
- পাহাড় ও পর্বত পৃথিবীর ভূ-গঠনের স্বাভাবিক অংশ এবং এটি পরিবেশ ও আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে।
- এগুলো জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে, নদীর উৎপত্তিস্থল হিসেবে কাজ করে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ:
- কুরআনে পাহাড়কে "পেরেক" বা "শিকড়" হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা পৃথিবীকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
- "আর আমি পাহাড়গুলোকে পৃথিবীর জন্য পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করেছি।" (সূরা আন-নাবা: ৭)
খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মে:
- বাইবেলে বলা হয়েছে যে, পাহাড় ঈশ্বরের সৃষ্টির মহৎ অংশ এবং এটি আশীর্বাদের প্রতীক।
- "পর্বতমালা থেকে আসে শক্তি, কারণ ঈশ্বরই তা সৃষ্টি করেছেন।" (সামস ১২১:১-২)
হিন্দু ধর্মে:
- হিমালয়কে পবিত্র মনে করা হয় এবং এটি শিবের বাসস্থান বলে বিবেচিত হয়।
- মহাভারতে উল্লেখ রয়েছে যে, পাহাড় দেবতাদের বসবাসস্থল ও শক্তির উৎস।
পাহাড় ও পর্বতের উপকারিতা
-
জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ:
- বৃষ্টিপাত সৃষ্টি করে এবং মরুভূমিকে রোধ করে।
-
নদী ও জলাধারের উৎস:
- প্রায় সব বড় নদীর উৎস পাহাড় (যেমন: গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, নীলনদ)।
-
প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ:
- ভূমিধস ও ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে সাহায্য করে।
-
পর্যটন ও অর্থনীতি:
- পাহাড়ি এলাকা পর্যটকদের আকর্ষণ করে এবং অর্থনৈতিক সুবিধা এনে দেয় (যেমন: সুইজারল্যান্ডের আল্পস, নেপালের হিমালয়)।
-
ঔষধি গাছপালা ও খাদ্য:
- পাহাড়ে নানা রকমের ভেষজ উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যা ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার:
পাহাড় ও পর্বত শুধু ভূ-প্রাকৃতিক গঠন নয়, এটি পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা, মূল্যবান খনিজ সম্পদের আধার ও ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞান ও ধর্ম উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই পাহাড়ের সৃষ্টি ও উপকারিতা বিস্ময়কর ও অপরিহার্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Heartfelt Thanks for your valuable comments.