জাতীয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
জাতীয় লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৫

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চুরি করা সম্পদ পাচার: সমস্যা, আইন ও সমাধান

“বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চুরি করা সম্পদ পাচার: সমস্যা, আইন ও সমাধান”
---

বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চুরি করা সম্পদ পাচার: সমস্যা, আইন ও সমাধান

ভূমিকা

বিশ্বায়নের যুগে একদিকে যেমন পুঁজি ও বাণিজ্যের প্রবাহ সহজ হয়েছে, অন্যদিকে উন্নয়নশীল 
দেশগুলো থেকে অবৈধ অর্থ পাচারও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণের দেশগুলো থেকে প্রতিবছর বিপুল অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে পাচার হচ্ছে। নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যথার্থই বলেছেন—
“দক্ষিণের দেশগুলো থেকে চুরি করা সম্পদ করস্বর্গ ও ধনী দেশে পাচার ঠেকাতে কঠোর আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো তৈরি করা জরুরি।”

এই প্রবন্ধে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে চুরি করা সম্পদ পাচারের কারণ, বিদ্যমান আইন, চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান আলোচনা করা হলো।


---

১. বাংলাদেশে চুরি করা সম্পদ পাচার

ক) বাস্তবতা

গ্লোবাল ফিনান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (GFI)-র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭-৮ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়।

প্রধান মাধ্যম:

আন্ডার-ইনভয়েসিং ও ওভার-ইনভয়েসিং (আমদানি-রপ্তানিতে মূল্য কম/বেশি দেখানো)

হুন্ডি চক্র

দুর্নীতি ও কালো টাকার বিদেশে স্থানান্তর

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিদেশে সম্পদ গড়া।



খ) উল্লেখযোগ্য উদাহরণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি (২০১৬): প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে পাচার হয়।

রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিদেশে বাড়ি-সম্পদের খবর গণমাধ্যমে প্রায়ই আসে।


গ) বিদ্যমান আইন

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধিত): বিদেশে পাচার রোধ ও অভিযুক্তদের শাস্তির বিধান।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) অর্থ পাচার রোধে কাজ করে।

হাইকোর্ট একাধিকবার সরকারকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে।


ঘ) সীমাবদ্ধতা

রাজনৈতিক প্রভাবশালী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া।

বিদেশি রাষ্ট্র থেকে সহযোগিতা না পাওয়া।

প্রমাণ সংগ্রহে জটিলতা।

---

২. আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

ক) বৈশ্বিক বাস্তবতা

দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে প্রতিবছর শত শত বিলিয়ন ডলার ধনী দেশ বা করস্বর্গে পাচার হয়।

করস্বর্গ (Tax Haven): সুইস ব্যাংক, পানামা, কেম্যান আইল্যান্ডস, দুবাই ইত্যাদি।

উন্নত দেশগুলো অনেক সময় এই অর্থ গ্রহণ করে নিজেদের আর্থিক স্বার্থে ব্যবহার করে।


খ) বিদ্যমান আন্তর্জাতিক কাঠামো

1. United Nations Convention Against Corruption (UNCAC, 2005)

বাংলাদেশসহ ১৮৭ দেশ স্বাক্ষর করেছে।

চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।



2. SDG 16.4 (জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য)

২০৩০ সালের মধ্যে অবৈধ অর্থ প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করার লক্ষ্য।



3. Addis Ababa Action Agenda (2015)

উন্নয়নশীল দেশ থেকে অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।



4. Financial Action Task Force (FATF)

মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন রোধে বৈশ্বিক কাঠামো।



5. World Bank StAR (Stolen Asset Recovery) Initiative

পাচারকৃত সম্পদ উৎস দেশে ফেরত আনতে সহায়তা করে।



6. Switzerland Foreign Illicit Assets Act (FIAA)

বিদেশি দুর্নীতিবাজদের সুইস ব্যাংকে রাখা অর্থ ফ্রিজ ও ফেরত দেওয়ার আইন।

গ) সীমাবদ্ধতা

উন্নত দেশগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব।

জটিল আইনি প্রক্রিয়া।

উৎস দেশের দুর্বল প্রমাণ ও অনুসন্ধান ব্যবস্থা।
---

৩. ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর প্রস্তাবনার তাৎপর্য

ড. ইউনূস বলেছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি আজ দক্ষিণের দেশগুলো থেকে চুরি হওয়া সম্পদ ধনী দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে। তাই:

একটি কঠোর আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো তৈরি করা জরুরি।

ধনী দেশগুলোকে বাধ্য করতে হবে চুরি হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্য।

উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এক হয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।
---

৪. সমাধান প্রস্তাব

বাংলাদেশ পর্যায়ে

1. মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের কঠোর প্রয়োগ।


2. রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দুর্নীতি দমন কমিশন।


3. ব্যাংক ও কাস্টমসে স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ।


4. পাচারকারীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।



আন্তর্জাতিক পর্যায়ে

1. UNCAC-কে আরও শক্তিশালী করা ও বাধ্যতামূলক বাস্তবায়ন।


2. করস্বর্গ দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক চাপে আনা।


3. উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানো।


4. বিশ্বব্যাংক ও IMF-এর মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া সহজ করা।

---

উপসংহার

বাংলাদেশ ও অন্যান্য দক্ষিণের দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো থাকলেও সেগুলো কার্যকর হচ্ছে না। তাই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মতো চিন্তাবিদদের আহ্বান অনুযায়ী একটি কঠোর ও কার্যকর আন্তর্জাতিক আইন কাঠামো তৈরি অপরিহার্য। বাংলাদেশকেও অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি অভিযান জোরদার করে বৈশ্বিক সহযোগিতা চাইতে হবে। অন্যথায় উন্নয়নশীল দেশগুলো কখনোই দারিদ্র্য ও বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে পারবে না।

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

দাড়ি রাখবো কেনো?

দাড়ি রাখার গুরুত্ব: ধর্ম, স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিত্বের আলোকে ভূমিকা দাড়ি রাখা শুধু একটি ফ্যাশন বা ব্যক্তিগত পছন্দ নয়; এটি মুসলিম পুরুষের ঈমা...