শনিবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৫

জুলাই সনদ

 দুইটি “জুলাই সনদ / চুক্তি” বা পরিবর্তনশীল দলিলের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা — একটি হলো ঐতিহাসিক ১৭৯৩ সালের (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত) যা “জুলাই সনদ” হিসেবে পরিচিত, আর অন্যটি হলো সাম্প্রতিক ২০২৫ সালের (যেটি “জুলাই সনদ” বা “জুলাই জান্তা / জুলাই ঘোষণাপত্র” নামে আলোচিত)।


১. ১৭৯৩ সালের “জুলাই সনদ” (Permanent Settlement)

পরিচিতি

১৭৯৩ সালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গসহ) জমি ও রাজস্ব ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে— এই নিয়মই হলো Permanent Settlement.

সাধারণভাবে বলা হয়, কোম্পানি জমিদার (মালিক্‌ভুক্ত ভূমিদার) শ্রেণিকে চিরস্থায়ী মালিকূপায় স্বীকৃত করে ও রাজস্ব প্রদান নির্দিষ্ট হার নির্ধারণ করে।

যদিও “জুলাই সনদ” নামে বাংলা ভাষায় ব্যবহার হয়, কিন্তু মূল আইন বা চুক্তিটি “Permanent Settlement of Bengal” নামে পরিচিত।

উদ্দেশ্য ও বৈশিষ্ট্য

কোম্পানি রাজস্ব (land revenue) সংগ্রহে স্থিতিশীলতা আনতে চেয়েছিল।

জমিদারদের জন্য: তারা হয়েছিল চিরস্থায়ী ভূমি-মালিক (proprietor) এবং তাঁদের উপর নির্ধারিত রাজস্ব দিতে থাকবার বাধ্যবাধকতা।

কৃষক বা চাষীদের ক্ষেত্রে: তারা সাধারণত ‘রায়েত’ বা কৃষক-ভাড়াটিয়া হিসেবে হয়ে পড়ল, অধিক সুরক্ষা পাননি।

রাজস্ব হার স্থায়ী (বা দীর্ঘমেয়াদী) করে দেওয়া হয়—অর্থাৎ ভবিষ্যতে সরকার বারবার হার বাড়াবে না এমন ধারণায়।

প্রভাব ও ফলাফল

ইতিবাচক দিক: কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা স্থিতিশীলতা আসে।

নেতিবাচক দিক:

কৃষক শ্রেণীর অধিকার হ্রাস পায়, জমিদারদের দাপট বেড়ে যায়।

অনেক জমিদার রাজস্ব দিতে না পারলে তাঁদের জমি বিক্রয় বা নিলামে পড়তে হয় (“Revenue Sale Law 1793”)।

জমিতে বিনিয়োগ বা চাষাবাদ উন্নয়ন তেমন হয়নি, অর্থনৈতিক পটভূমিতে চাষীদের জন্য ভালো ফল হয়নি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অর্থ

এ চুক্তি মূলত ব্রিটিশ শাসনামলে হয়েছিল, তখন ‘বাংলা’ ছিল বৃহত্তর ইংরেজবাহী অঞ্চল।

আজকের বাংলাদেশে জমি-মালিকানা কাঠামো, কৃষক–ভাড়াটিয়া সম্পর্ক, ভূমি রেকর্ড ইত্যাদিতে এই শাসনমালার ভূমিকাটা বিষয়বস্তু হিসেবে রয়েছে — অর্থাৎ একটি ঐতিহাসিক প্রভাব।

২. ২০২৫ সালের “জুলাই সনদ / July Charter”

পরিচিতি

২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্টের দিকে বাংলাদেশের মধ্যে ছাত্র / যুব-আন্দোলনা ও গণঅভ্যূত্থান হয়, যার ফলস্বরূপ রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের দাবিগুলো যাত্রা করে।

এ প্রেক্ষাপটে, ২০২৫ সালে ও (বাংলায় “জুলাই সনদ” বা “জুলাই ঘোষণাপত্র” হিসেবে) তৈরি হচ্ছে ও আলোচনা চলছে।

উদাহরণস্বরূপ: ২০২৫ সালের ২ জুলাই সরকার “16 জুলাই” কে দ্বিতীয় পক্ষীয় ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।

“জুলাই সনদ” শব্দটি ২০২৫ সালের রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় এসেছে, বিশেষ করে (NCP) বলেছে তারা ৩ আগস্ট “জুলাই সনদ” বা “জুলাই ঘোষণা” করব–এর পরিকল্পনা করেছে।

মূল বিষয় ও দাবিগুলো

দাবিগুলো মধ্যে রয়েছে: আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের জন্য ন্যায়বিচার, সংবিধান-সংশোধন, নির্বাচন ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সংস্কার।

বিশেষত “জনস্বার্থে লেখিত দলিল” হিসেবে দাবি করা হচ্ছে যাতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ও শহীদদের মর্যাদা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হয়।

অনলাইন সংবাদ অনুযায়ী, “জুলাই সনদ” বা “জুলাই জান্তা” খসড়া গত ২৮ জুলাই পাঠানো হয়েছে গণমাধ্যম ও দলগুলোর কাছে।

বর্তমান অবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

এই “জুলাই সনদ / কর্টার” এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি — বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশগ্রহণকারী মাঝেমধ্যে বিরোধ দেখাচ্ছে।

আন্দোলন-শহীদ-পরিবার এবং জনতার দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রুত বাস্তবায়ন ও আইনগত গ্যারান্টি চাওয়া হচ্ছে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে, দেশের সরকারের দৃষ্টিতে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে — যেমন “এক বছর পর জুলাই-আন্দোলনার পর দেশ ‘অনিশ্চয়তায়’ রয়েছে” শীর্ষক বিশ্লেষণ।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

যদি “জুলাই সনদ / July Charter” সফলভাবে কার্যকর হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার, জবাবদিহিতা ও সংবিধান-সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের দিকে বড় ধাপ হতে পারে।

তবে বাস্তবতায় এটি অচিরেই আইনগত বেজ বা গ্যারান্টি পায় কিনা, রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি পায় কিনা — তা বড় প্রশ্ন।

জনসাধারণের অংশগ্রহণ, আন্দোলনের স্মৃতি ও শহীদ-পরিবারের দাবিগুলো যদি রূপ পায়, তাহলে এটি বাংলাদেশের প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মাইলফলক হতে পারে।

৩. তুলনামূলক সারাংশ

বিষয় ১৭৯৩ সালের সনদ ২০২৫ সালের সনদ / চুক্তি

সময় ও প্রেক্ষাপট ব্রিটিশ আমল, ভূমি ও রাজস্ব সংগ্রহ আধুনিক বাংলাদেশ, গণআন্দোলনা ও রাজনৈতিক সংস্কার

উদ্দেশ্য জমিদারদের স্বত্ত্বায়ন ও রাজস্ব সংগ্রহ নিশ্চিত করা শহীদ-আন্দোলনকারীদের স্বীকৃতি, সংবিধান-সংশোধন, রাজনৈতিক সংস্কার

কার জন্য জমিদার শ্রেণী (ল্যান্ডলর্ড) ও কোম্পানি আন্দোলনকারীদের, সাধারণ জনগণ, রাজনৈতিক দলগুলি

মূল চ্যালেঞ্জ কৃষক বিপর্যয়, জমি-অধিকার হ্রাস বাস্তবায়ন, আইনগত বাধা, রাজনৈতিক ভাঙ্গন

সম্ভাব্য ফলাফল দীর্ঘমেয়াদে ভূমি-ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং কৃষক অবস্থা সংকট রাজনৈতিক সংস্কার, সংবিধানীয় পরিবর্তন, শহীদদের মর্যাদা স্থায়ী করা।

http://arifshamsacademybd.blogspot.com/2025/10/blog-post_43.html

#post #share #education #students #teacher Ariful Islam Bhuiyan Ariful Islam Bhuiyan ভালোবাসি দিবানিশি ভাদুঘর প্রবাসী কল্যাণ সংস্থা প্রবাসী-পরবাসী । Probashi-Porobashi Khaleda Akter Bhuiyan শিক্ষা ও শিক্ষক-Education & Teacher জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় National University কবি কবিতার


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Heartfelt Thanks for your valuable comments.

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

জুলাই সনদ

 দুইটি “জুলাই সনদ / চুক্তি” বা পরিবর্তনশীল দলিলের বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা — একটি হলো ঐতিহাসিক ১৭৯৩ সালের (চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত) যা “জুলা...