শনিবার, জুন ২৮, ২০২৫

কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান

📄 প্রবন্ধ শিরোনাম:
“কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান”
✍️ লেখক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)
📚 রেফারেন্স: ChatGPT (OpenAI), ২০২৫
---

🔶 ভূমিকা

বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও প্রযুক্তির দ্রুত গতিশীলতার যুগে সৃষ্টিশীল কাজের মূল্য এবং তার সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি। লেখা, কবিতা, ছবি, সফটওয়্যার, ভিডিওসহ নানা কনটেন্ট প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এগুলোর ব্যবহার, প্রচার বা বাণিজ্যিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনত অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নই। এই প্রবন্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন, লঙ্ঘনের ধরন, কারণ, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
---

🔷 কপিরাইট কী?

কপিরাইট (Copyright) হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা সৃষ্টিশীল কাজের উপর তাদের আইনগত স্বত্ব। এটি অন্যকে সেই কাজ অনুমতি ছাড়া কপি, ছাপা, প্রচার বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার থেকে নিষেধ করে।

---

🔷 জাতীয় কপিরাইট আইন (বাংলাদেশ)

আইন: The Copyright Act, 2000 (Act No. XXVIII of 2000)

সংশোধন: ২০০৫ ও পরবর্তী খসড়া আইন সংশোধন (২০২৩ প্রস্তাবিত)

স্বত্বাধিকার সময়কাল: লেখক জীবিত থাকা অবস্থায় + মৃত্যুর পর ৬০ বছর

রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ: Bangladesh Copyright Office

---

🔷 আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন

1. Bern Convention (1886):
বাংলাদেশসহ 180+ দেশ এই কনভেনশনে যুক্ত। এতে বলা হয়, কোনো কাজ প্রকাশের সাথে সাথেই তা কপিরাইটের আওতায় পড়ে, আলাদা রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই।

2. TRIPS Agreement (WTO):
কপিরাইট সুরক্ষাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আইনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।

3. WIPO (World Intellectual Property Organization):
জাতিসংঘের অধীনস্থ সংস্থা, যা আন্তর্জাতিক কপিরাইট রক্ষা ও প্রচারে কাজ করে।

---

🔷 কপিরাইট লঙ্ঘনের কারণ

কারণ উদাহরণ

অজ্ঞতা অনেকেই জানে না লেখার উপর কপিরাইট থাকে
প্রযুক্তির অপব্যবহার সহজেই কপি-পেস্ট করে ফেলা যায়
বাণিজ্যিক লোভ অন্যের কনটেন্টে নিজের নামে বই প্রকাশ
নৈতিক অবক্ষয় ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যের কাজ আত্মসাৎ করা

---

🔷 ChatGPT থেকে লেখা নিয়ে নিজের নামে চালানো কি কপিরাইট লঙ্ঘন?

না, সাধারণত নয়—কিন্তু শর্ত আছে।

OpenAI-এর নীতিমালা অনুযায়ী:

> “You own the output you create with ChatGPT, unless used to violate laws or others’ rights.”

📌 তবে সতর্কতা প্রয়োজন:

আপনি যদি এআই-এর লেখা হুবহু কপি করে বলেন আপনি নিজে লিখেছেন, এবং তা অন্যের লেখার মতো হলে—এটি নৈতিক প্ল্যাজিয়ারিজম।

আপনি যদি শিক্ষা বা সহায়তার অংশ হিসেবে AI-র লেখা নিজের ভাষায় রূপান্তর করেন বা উৎস উল্লেখ করেন, তবে তা বৈধ ও নৈতিক।

---

🔷 কপিরাইট লঙ্ঘনের সমস্যা

1. ❌ লেখকের ন্যায্য সম্মান ও আর্থিক ক্ষতি

2. ❌ সমাজে সৃষ্টিশীলতার অবমূল্যায়ন

3. ❌ শিক্ষার্থী ও গবেষকদের মধ্যে ভ্রান্ত শিক্ষা

4. ❌ আইনি জটিলতা, জরিমানা, বই প্রত্যাহার

5. ❌ আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সম্মানহানি

---

🔷 সমাধান

করণীয় ব্যাখ্যা

উৎস উল্লেখ করা যেখান থেকে নেওয়া হয়েছে, সেটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন
Creative Commons লাইসেন্স জানা কোন লেখা উন্মুক্ত, কোনটা নয়—জানতে হবে
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন Bangladesh Copyright Office-এ রেজিস্ট্রার করা যায়
নৈতিক শিক্ষা প্রদান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে “Plagiarism” ও “Copyright” বিষয় অন্তর্ভুক্তি
AI-Generated Disclosure AI এর সহায়তায় লেখা হলে তা স্বীকার করা উচিত

---

🔶 উপসংহার

অবকাঠামো, প্রযুক্তি, অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও যদি আমাদের নৈতিকতা, শিক্ষা ও মেধাস্বত্ব রক্ষার মানসিকতা না থাকে, তবে সেই উন্নয়ন হবে অসার ও অস্থায়ী। কপিরাইট আইন মানা কেবল আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়—এটি একজন সৃষ্টিশীল মানুষের প্রতি সম্মান, সমাজের প্রতি দায়িত্ব এবং নিজের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

---

📌 আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)
লেখক ও সমাজ পর্যবেক্ষক
স্থান: রিয়াদ, সৌদি আরব
📧 Email: ariful01711@gmail.com
📞 WhatsApp:+966510429466
---


শুক্রবার, জুন ২৭, ২০২৫

যখন এক জেদ আত্মশুদ্ধির পথে নেয়

🕌 “যখন এক জেদ আত্মশুদ্ধির পথে নেয়”

একটি ইসলামিক শিক্ষা-কথা

“বাবা, আমি বাইক চাই। আজই। আর যদি না দাও—ঘরে ফিরব না।”
ছেলের কণ্ঠে একরাশ রাগ আর হঠকারিতা।
মায়ের চোখে পানি, কণ্ঠে কাঁপা কাঁপা সুর:
“বাবা, একটু খেয়ে নে তো… দুই দিন কিছু মুখে দিসনি। আল্লাহর ওয়াস্তে…”

এক গরিব পরিবারের মধ্যে জেদ ও ভালোবাসার সংঘাত যেন শুরু হয়ে গেছে।
ছেলের নাম আবদুল্লাহ—আজ তার দ্বাদশ শ্রেণির শেষ পরীক্ষা।
বাবা আগেই বাইকের কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু এক মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে এখনো সেরে ওঠেননি।

আবদুল্লাহ বলল:
“আমি কিছু শুনতে চাই না মা। আমার বাইক চাই। না হলে আমি আর বাড়ি ফিরব না। দিদিকে বলো, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকুক টাকাসহ।”
—এই কথা বলে সে পরীক্ষাকেন্দ্রে পা রাখল।

---

📖 জীবনের পরীক্ষা ও আল্লাহর হেদায়েত

পরীক্ষার পর বিশেষ একটি পরীক্ষা নেয় ভাগবত স্যার, যার বিষয় এবার:
"আমার পারিবারিক ভূমিকা ও দায়িত্ব"

আবদুল্লাহ প্রথম প্রশ্ন পড়ল:

১. আপনার পরিবারের প্রত্যেকে দিনে কত ঘণ্টা কাজ করেন?
✦ বাবা: ১৫ ঘণ্টা (ফ্র্যাকচারের পরও অটো চালান)।
✦ মা: ১৬ ঘণ্টা (ঘর, রান্না, সেলাই কাজ)।
✦ দিদি: ১৩ ঘণ্টা (কলেজ, পার্ট টাইম, মাকে সাহায্য)।
✦ আমি: ১০ ঘণ্টা (পড়া ও বিশ্রাম)।

📿 আবদুল্লাহর চোখে আলোর ঝলকানি আসে:
“আমার এই আয়েশি জীবনের পেছনে মা-বাবা-দিদির কত কষ্ট!”

---

২. পরিবারের মাসিক আয়: ১৫,০০০ টাকা।
৩. নিজের রিচার্জ, সিরিয়াল, সিনেমা হলে সময়—সব মনে আছে।
৪. কিন্তু আলু, তেল, চালের দাম? বা কোন আটা মিলে গম পিষে আটা হয়? — কিছুই জানে না।

⏳ ৫. কখনও খাবার নিয়ে বিরক্ত হয়েছ?
আবদুল্লাহ লিখল:
“আলু ছাড়া কিছু হলে রাগ করে খাওয়া ছেড়ে দিই…”
মায়ের সেই গ্যাসের যন্ত্রণার ছবি মনে পড়তেই চোখে জল চলে এলো।

📌 ৬. শেষ জেদ?
"বাইক না দিলে ঘরে ফিরব না" — এটি লিখেই থেমে গেল।

---

☝️ বদলে যাওয়া মন—তাওবার ঝরনা

১০. এই ছুটিতে পারিবারিক দায়িত্ব পালনের পরিকল্পনা?
— উত্তর আর লেখা হয়নি। কারণ সে অনুভব করে, এই প্রশ্নের উত্তর কলমে নয়, কাজে দিতে হবে।

---

🕌 প্রিয় নবীর শিক্ষা ও পরিবারের হক

রাসূল (ﷺ) বলেন:

> “তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জবাবদিহি করবে।”
📚— (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

আবদুল্লাহর হৃদয়ে যেন এই হাদীসের অর্থ জেগে ওঠে।

---

💔 যখন বাইকের টাকাও আসে...

পরীক্ষা শেষে দিদি টাকাসহ দাঁড়িয়ে।
“এই নে আট হাজার। মা-বাবা ধার করে, আমার বেতন আগাম নিয়ে, পকেটমানির টাকা জোগাড় করেছে।”

বন্ধু বাইক নিয়ে আসে।
আবদুল্লাহ তাকিয়ে বলে,
“ভাই, বাইকটা অন্য কাউকে দে। আমি এখনো প্রস্তুত নই।”

---

🌙 ইসলামি আত্মপরিবর্তনের চূড়ান্ত পরিণতি

বাড়ি ফিরে বলল:
“মা, বাবা—সরি। এখন থেকে বাবা অটো চালাবেন না। আমি চালাব। আর আজ রাতের খাবার আমি রান্না করব—সবার প্রিয় খাবার।”

মায়ের চোখ ভিজে গেল।
ভাগবত স্যার বাড়িতে এসে বললেন,
“আবদুল্লাহ, তুমি জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় পাশ করেছ।”
আবদুল্লাহর উত্তর:
“স্যার, এবার বুঝেছি—পরিবারের হক আদায় করাই প্রকৃত শিক্ষা।”

---

🌟 গল্প থেকে শিক্ষা:

ইসলাম আমাদের শেখায় দায়িত্ববোধ, কৃতজ্ঞতা ও আত্মত্যাগ।

জেদ নয়, নম্রতা এবং পারিবারিক দায়িত্বই প্রকৃত মুমিনের পরিচয়।

এই পৃথিবীর পরীক্ষার চেয়েও বড় পরীক্ষা হলো—আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি।
______________
Collected 

নির্জল/স্থির পানি (Still Water) এর কাজ, সুবিধা ও অসুবিধা

নির্জল/স্থির পানি (Still Water)। নিচে এর কাজ, সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করছি:

---

✅ Still Water (স্থির পানি) কাদের জন্য উপকারী ও কী কাজে লাগে:


📌 Still Water মানে কী?


"Still Water" হলো এমন পানি যাতে কোনো গ্যাস (যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড) মেশানো নেই।


একে আমরা সাধারণত বোতলজাত পানীয় জল হিসেবেই চিনি।


🟢 সুবিধা:


1. পান করার জন্য নিরাপদ ও বিশুদ্ধ:


সাধারণত পরিশোধিত বা মিনারেল ওয়াটার হিসেবে বোতলজাত হয়।


2. শরীরের জন্য হাইড্রেটিং:


শরীরে পানির অভাব পূরণ করে, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, কিডনিকে কার্যকর রাখে।


3. বাচ্চা, বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য উপযোগী:


যেহেতু এতে কোনো গ্যাস বা অতিরিক্ত উপাদান নেই, তাই সহজে হজম হয়।


4. ঔষধ খাওয়ার সময় আদর্শ:


গ্যাসযুক্ত পানির চেয়ে ওষুধ গ্রহণের সময় স্থির পানি ভালো।


5. ক্লাসিক স্বাদ:


কার্বনেটেড পানির মত ঝাঁঝালো নয়; অনেকেই এমন পানিই পছন্দ করেন।


🔴 অসুবিধা:


1. গরমে দ্রুত গরম হয়ে যেতে পারে:


ঠাণ্ডা না রাখলে গ্রীষ্মে দ্রুত গরম হয় এবং পান করতে অস্বস্তিকর লাগে।


2. প্লাস্টিক বা বোতলের উপর নির্ভরতা:


পরিবেশ দূষণের একটি কারণ হতে পারে (যদি বোতল রিসাইকেল না হয়)।


3. কার্বনেটেড পানির মতো মুখে ফ্রেশ অনুভব করায় না:


কেউ কেউ ঠাণ্ডা বা বুদ্বুদযুক্ত পানি বেশি পছন্দ করেন।


4. মূল্য কিছুটা বেশি:


ট্যাপ বা সাধারণ পানির চেয়ে দামি।


---


📌 কারা কখন Still Water পান করবেন?


সময় উপকারিতা


খালি পেটে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে

ব্যায়ামের পরে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে

গরমকালে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে

অসুস্থতায় সহজে হজম হয়, পেট ও কিডনির উপর চাপ কম


---


📝 উপসংহার:


Still Water মানে সাধারণ বিশুদ্ধ পানি – এটি প্রতিদিনের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও সুস্থ অভ্যাস। আপনি Nova Water-এর মতো একটি ব্র্যান্ড বেছে নিয়েছেন যা সৌদি আরবে বেশ জনপ্রিয় এবং সাধারণত মানসম্মত।


সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি

অধিকাংশ শিক্ষিত ছেলেরা আজ বেকার, সম্মানজনক কোনো পেশা পাচ্ছে না, প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করে জীবন অতিবাহিত করতেও হিমশিম খাচ্ছে”—এই সমস্যাটি বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এক গভীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটের প্রতিচ্ছবি।

🔍 সমস্যার মূল কারণসমূহ:
১. শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে অমিল
পাঠ্যক্রম এখনও অনেকটাই মুখস্থভিত্তিক, বাস্তব জীবনের চাহিদা বা বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার ঘাটতি: প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, AI, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়ার্কশপ স্কিল ইত্যাদি শেখার সুযোগ কম।

২. সরকারি চাকরির প্রতি অতিনির্ভরতা
শিক্ষিত যুবকদের বড় অংশ শুধুমাত্র সরকারি চাকরির পেছনে ছুটছে।

এতে করে সময়, বয়স, আত্মবিশ্বাস ও শক্তি—সবকিছু হারায়।

৩. ব্যবসায়িক মনোভাবের অভাব
পরিবার, সমাজ বা শিক্ষাব্যবস্থা ব্যবসাকে ‘নিঃস্বজন’, ‘অনিশ্চিত’ ও ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে মানে, ফলে তরুণেরা আত্মনির্ভরতা গড়তে ভয় পায়।

৪. টেকসই উদ্যোক্তা পরিবেশের অভাব
সহজে ঋণ, প্রশিক্ষণ বা ব্যবসায়িক সহায়তা পাওয়ার ব্যবস্থা নেই।

ঘুষ-দুর্নীতি ও প্রশাসনিক জটিলতা।

৫. মানসিক সংকট ও আত্মবিশ্বাসহীনতা
দীর্ঘ সময় বেকার থেকে হতাশা, অবসাদ ও আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

✅ সম্ভাব্য সমাধানসমূহ:
১. দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষার সম্প্রসারণ
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরেই স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স বাধ্যতামূলক করা (যেমন: ডিজিটাল মার্কেটিং, ফ্রিল্যান্সিং, ভোকেশনাল ট্রেড)।

প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ১টি কারিগরি ইনস্টিটিউট স্থাপন।

২. স্বনির্ভরতা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরির উদ্যোগ
গৃহঋণ, স্টার্টআপ লোন, ট্রেনিংসহ উদ্যোক্তা প্যাকেজ চালু করা।

বিশেষ করে যুবকদের জন্য “১০০ দিনের ব্যবসা শিক্ষা” কর্মসূচি।

৩. সম্মানজনক পেশার সংজ্ঞা বদলানো
যে কেউ নিজের আয় দিয়ে পরিবার চালাতে পারছে, সেটাই সম্মানজনক পেশা—এই দৃষ্টিভঙ্গি সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শিক্ষিত রাইডার, চাষি, দোকানদার বা ডিজিটাল মার্কেটার—সবাইকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে।

৪. বিদেশমুখী শ্রমের আধুনিকীকরণ
শিক্ষিত তরুণদের জন্য মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে প্রশিক্ষণসহ চাকরি নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে স্কিলভিত্তিক রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা।

৫. মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং
প্রতিটি কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে “ক্যারিয়ার হেল্প ডেস্ক” এবং অনলাইন কাউন্সেলিং চালু করা।

📍 শেষ কোথায়?
এই সংকটের শেষ হবে তখনই, যখন—

আমরা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে চাকরি না ভেবে “জীবন পরিচালনার ক্ষমতা” হিসেবে দেখবো।

তরুণরা চাকরিপ্রার্থী না হয়ে চাকরিদাতা হওয়ার সাহস পাবে।

পরিবার ও সমাজ প্রথাগত চাকরির বাইরের পেশাকেও সম্মান জানাবে।

সরকার ও বেসরকারি খাত মিলে দক্ষতা, উদ্ভাবন ও উদ্যোগের ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।

📌 উপসংহার:
এই সংকটের সমাধান রাতারাতি হবে না। তবে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র মিলেই এটি মোকাবিলা করা সম্ভব।
 ---------------------------------------------------------------------- 

🔰 প্রবন্ধ:
“বেকার শিক্ষিত তরুণ: সংকটের কারণ, করণীয় ও ভবিষ্যৎ দিশা”
✍️ আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)

🔷 ভূমিকা
আজকের বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো—শিক্ষিত যুবসমাজের বেকারত্ব। বিসিএস বা ব্যাংক জবের স্বপ্ন নিয়ে হাজার হাজার তরুণ দিন পার করে দেয়, অথচ বাস্তবে হাতে মেলে না কোনো সম্মানজনক কর্মসংস্থান। পরিবার, সমাজ, এমনকি নিজের কাছেও সে একসময় অপারগ, অযোগ্য ও ব্যর্থ বলে মনে করে। তাহলে এই বিপুল শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর এই করুণ পরিণতির দায় কার?

🔷 সমস্যার মূল কারণ
১. শিক্ষার সঙ্গে জীবনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন
বর্তমান পাঠ্যক্রমে বাস্তব জীবনের দক্ষতা শেখানো হয় না। আমরা শিখি মেমোরাইজ করে পাশ করতে, কিন্তু শিখি না কিভাবে আয় করতে হয়।

২. সম্মানজনক পেশা মানেই চাকরি—এই ভ্রান্ত ধারণা
অনেকেই মনে করেন সরকারি চাকরিই সবচেয়ে সম্মানজনক। ফলে ব্যবসা, ফ্রিল্যান্সিং, কৃষি, অনলাইন কাজকে ছোট করে দেখা হয়।

৩. দক্ষতার অভাব
যুবকরা বই পড়ে ডিগ্রি নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাজের স্কিল নেই। হাতেকলমে কিছু জানে না। বিদেশে যাওয়ার সুযোগও মিস করে।

৪. ক্যারিয়ার গাইডেন্স ও প্রেরণার ঘাটতি
স্কুল, কলেজ বা পরিবারের কেউ কখনো বলে না, “তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে, সাহস রাখো।” ফলে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।

🔷 করণীয় ও সমাধান
✅ ১. দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা
মাধ্যমিক স্তর থেকে কারিগরি, ডিজিটাল, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার সংযোজন জরুরি।

সব উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে হবে।

✅ ২. শিক্ষিত তরুণদের উদ্যোক্তা বানাতে হবে
ছোট ব্যবসা বা স্টার্টআপে ০% সুদে লোন, পরামর্শ ও সহযোগিতা দিতে হবে।

কলেজেই “উদ্যোক্তা গঠন কোর্স” চালু হতে পারে।

✅ ৩. “পেশা”র সম্মানজনক সংজ্ঞা বদলাতে হবে
শুধুমাত্র চাকরি নয়, নিজের আয়ে চলতে পারাটাও বড় সম্মান।

একজন ফুড ডেলিভারি রাইডার, অনলাইন উদ্যোক্তা, বা কৃষিজীবীকে সম্মান দিতে হবে।

✅ ৪. সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিত্বে কর্মসংস্থান তৈরি
সরকার চাকরি দিতে না পারলেও, কর্মসংস্থানের পরিবেশ গড়ে দিতে পারে।

প্রাইভেট কোম্পানিগুলো যেন প্রশিক্ষিত ছেলেদের অগ্রাধিকার দেয়, তার জন্য নীতিমালা দরকার।

✅ ৫. মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রেরণা
আত্মহত্যার হার বাড়ছে হতাশ তরুণদের মধ্যে। এজন্য কাউন্সেলিং, অনুপ্রেরণামূলক সেশন, অনলাইন সাপোর্ট চালু করা দরকার।

🌍 বিশ্বব্যাপী পরিসংখ্যান:
🔹 বিশ্বে শিক্ষিত বেকারত্বের গড় হার (2024):
৮–৯%, তবে কিছু দেশে ১৫%-এর বেশি

🔹 যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষিত বেকারত্ব:
দেশ শিক্ষিত বেকারত্ব হার
ভারত ১৯–২০% (বিশ্বে অন্যতম বেশি)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩১–৩৫%
ফ্রান্স ও স্পেন ১২–১৫%
মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ ১৫–২৫% (বিশেষ করে জর্ডান, টিউনিসিয়া)

🔹 পশ্চিমা দেশগুলোর চিত্র:
যেমন জার্মানি, নেদারল্যান্ডস বা জাপান—এখানে শিক্ষার সঙ্গে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও ইন্ডাস্ট্রি কানেকশন থাকায় শিক্ষিত বেকারত্ব কম (৪% এর নিচে)।

📈 একটি তুলনামূলক চিত্র (সংক্ষেপে):
বিষয়              বাংলাদেশ               বিশ্ব (গড়)
সার্বিক বেকারত্ব ~৪.২%         ~৫–৬%
শিক্ষিত তরুণ বেকার ~১২–১৩% ~৮–৯%
 
🔷 শেষ কথা: আলোর পথ কোথায়?
এই সমস্যা চিরস্থায়ী নয়। সমাধান আছে, পথও আছে—শুধু আমাদের মানসিকতা ও কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন দরকার।
যখন—

একজন রাইডার বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে "মানুষ" হিসেবে সম্মান করা হবে,

যখন তরুণরা ভয় না পেয়ে সাহস নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখবে,

যখন শিক্ষা হবে শুধু ডিগ্রির জন্য নয়, জীবন ও আয়ের জন্য,
তখনই বেকার শিক্ষিত ছেলেরা হবে আগামী দিনের সফল উদ্যোক্তা, ডিজিটাল ওয়ার্কার, সমাজের পথপ্রদর্শক।

তরুণদের শুধু চাকরি নয়, প্রয়োজন সুযোগ—স্বপ্ন দেখার ও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর।
আর আমাদের দায়িত্ব—তাদের সেই পথটা দেখিয়ে দেওয়া।
__________

মধুর যন্ত্রণা

মধুর যন্ত্রণা
— আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)

ভুলতে পারি না, তাঁকে ভোলা যায় না,
কেন এমন করি, তাও বুঝি না!
স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরি সবসময়—
এই কেমন মধুর যন্ত্রণা!!!

নামটি উচ্চারিত হলেই থেমে যায় নিঃশ্বাস,
চোখের সামনে ভেসে উঠে সাদা ওড়নায় ঢাকা মুখ।
হাতে কলম, ঠোঁটে নীরবতা,
তবু হৃদয়ে ছিল কাব্যের পূর্ণ বিকাশ।

চোখে তার ছায়া, কণ্ঠে মায়াবী ধ্বনি,
বলে যেত অজস্র না বলা কথা এক দৃষ্টিতে।
আমি শুনতাম, বুঝতাম, অনুভব করতাম—
কিন্তু বলিনি কিছু, ছিল এক প্রহেলিকা জগতে।

মোছাম্মত কবিতা বেগম—তুমি কি জানো?
তোমার অনুপস্থিতি আমার প্রতিটি উপস্থিতিতে বসবাস,
তুমি না থেকেও আছো প্রতিটি নিঃশ্বাসে,
তুমি চলে গিয়েও রয়ে গেছো গোপন ইতিহাসে।

দিন যায়, রাত আসে, যুগ পেরোয় ধীরে,
তবু ভুলতে পারি না সেই ঈদের সন্ধ্যা,
যেদিন বলেছিলে, “আমাকে ভুলে যেও”—
শুধু হেসেছিলাম… কাঁদি নাই তখন, এখন কাঁদাও প্রতিনিয়ত।

আজো তুমি আছো আমার নামাজের দোয়ায়,
আছো কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি শব্দে,
আছো শহীদের শেষ চিঠির অক্ষরে—
আছো, কিন্তু নেই!

ভুলতে পারি না, জানি না ভুলবো কি না,
কেন এমন ভালোবাসা, বুঝতে পারি না।
তবু স্মৃতির ঝাঁপি খুলে ধরি বারবার—
এই ভালোবাসা, এই বেদনা…একান্তই আমার।
---

প্রস্তাবনা: চাকরির ভাইভা পদ্ধতির সংস্কার সংক্রান্ত আবেদন

প্রস্তাবনা: চাকরির ভাইভা পদ্ধতির সংস্কার সংক্রান্ত আবেদন

প্রেরক:
আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)

প্রাপক:
চেয়ারম্যান / সদস্য সচিব
এনটিআরসিএ, ঢাকা, বাংলাদেশ

বিষয়: চাকরির ভাইভা পদ্ধতির পরিবর্তে লিখিত মূল্যায়ন ভিত্তিক নিয়োগ পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব।

মাননীয়,

বিনীত সম্ভাষণসহ জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও, এটি অনেক সময় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে বলে চাকরি প্রত্যাশী ও সমাজের বিশ্লেষক মহলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অনেক মেধাবী প্রার্থী শুধুমাত্র ভাইভা বোর্ডের রুচি, ধরণ বা অনুমাননির্ভর প্রশ্নের কারণে নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমি নিচের প্রস্তাবটি পেশ করছি:

---

✅ প্রস্তাবিত নিয়োগ মূল্যায়ন কাঠামো:

লিখিত মূল্যায়ন (৯০ নম্বর):

1. মানসিক দক্ষতা ও যুক্তিশক্তি – ৩০ নম্বর
2. প্রাসঙ্গিক পদের জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গি – ২৫ নম্বর
3. ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও আচরণমূলক উপলব্ধি – ২০ নম্বর
4. বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা – ১৫ নম্বর

এই মূল্যায়ন প্রার্থীদের প্রকৃত মানসিক ও বৌদ্ধিক প্রস্তুতির একটি নির্ভরযোগ্য চিত্র উপস্থাপন করবে।
---

সীমিত ভাইভা (১০ নম্বর, সর্বোচ্চ ৫ মিনিট):

প্রার্থীর পরিচয় ও ব্যক্তিগত ব্যাকগ্রাউন্ড
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও মৌলিক উপস্থাপন দক্ষতা
আত্মবিশ্বাস ও ভদ্র আচরণের যাচাই

এই সংক্ষিপ্ত ভাইভা পরীক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য থাকবে মৌলিক যোগাযোগ সক্ষমতা যাচাই ও প্রার্থীকে চেনা। এতে প্রশ্নকর্তার স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সীমিত থাকবে।
---

✅ উপকারিতা:

প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ, যুক্তিভিত্তিক ও যোগ্যতা নির্ভর হবে

প্রার্থী ও প্রতিষ্ঠান — উভয় পক্ষের জন্যই আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার পরিবেশ সৃষ্টি হবে

ভাইভা কমিটির ওপর চাপ কমবে এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিতর্ক হ্রাস পাবে

নিয়োগ হবে আরও দক্ষ ও টেকসই কর্মী ভিত্তিক

---

উপসংহার:

এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে আমি বর্তমান চাকরি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি ইতিবাচক ও যুক্তিনির্ভর পরিবর্তন আনার সুযোগ দেখছি। এটি শুধু প্রার্থীদের জন্য নয়, বরং দেশের সামগ্রিক মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্যও একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।

আশা করি আপনারা এই বিষয়ে সুদৃষ্টি দেবেন এবং প্রস্তাবটি যথাযথ বিবেচনায় নেবেন।

বিনীত,
আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)
25/06/2025
---

দুর্বলতা থেকে অনৈতিক লাভ তত্ত্ব(Immoral Benefit from Weakness Theory)

📘 বইয়ের নাম:
দুর্বলতা থেকে অনৈতিক লাভ তত্ত্ব
(Immoral Benefit from Weakness Theory)
✍️ আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)
---

📖 সূচিপত্র

1. প্রারম্ভিকা
2. তত্ত্বটির সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা
3. বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্যতা
4. সামাজিক ও নৈতিক বিশ্লেষণ
5. রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বটি
6. অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা
7. ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক আলোচনার জায়গা
8. সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য আপত্তি
9. প্রতিকার ও সমাধানের প্রস্তাবনা
10. উপসংহার
11. লেখকের বক্তব্য
12. কপিরাইট ঘোষণা ও যোগাযোগ
---

১. প্রারম্ভিকা

মানব সমাজে অনৈতিকতা প্রাচীন। তবে কিছু অনৈতিকতা সরাসরি অন্যের দুর্বলতা, অসহায়ত্ব, বা অপারগতার সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বইয়ে আমি একটি মৌলিক তত্ত্ব উপস্থাপন করছি—“দুর্বলতা থেকে অনৈতিক লাভ তত্ত্ব”, যার মাধ্যমে আমরা সমাজে প্রচলিত নীরব শোষণ ও সূক্ষ্ম অনৈতিকতার চেহারা উন্মোচন করব।
---

২. তত্ত্বটির সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা

“Immoral Benefit from Weakness Theory” হল একটি সামাজিক-নৈতিক বিশ্লেষণাত্মক তত্ত্ব, যার মূল ধারণা হলো—

> “যখন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অন্যের দুর্বলতা, অজ্ঞতা, অসহায়ত্ব, আর্থিক বা সামাজিক সীমাবদ্ধতার সুযোগ নিয়ে নিজের সুবিধা অর্জন করে, তা একটি অনৈতিক লাভ এবং এই আচরণ সমাজের সুস্থতা ও ন্যায়বোধকে ধ্বংস করে।”

উদাহরণস্বরূপ:

গরিব রোগীর কাছ থেকে ওষুধের বেশি দাম নেয়া

গৃহকর্মীর কাজের সময় বাড়িয়ে দিয়ে কম পারিশ্রমিক দেয়া

শিক্ষানবীশ বা বেকারের শ্রম ব্যবহার করে অল্প পয়সায় কাজ আদায়

---

৩. বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্যতা

এই তত্ত্বটি বাস্তব জীবনের বহু ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়:

অভিবাসীদের শ্রম শোষণ

শিশুদের দিয়ে কাজ করানো

নিম্নবিত্ত নারীদের প্রতারণা করে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলা

পরিবারে এক অসুস্থ বা মানসিকভাবে দুর্বল সদস্যের সম্পদ দখল

---

৪. সামাজিক ও নৈতিক বিশ্লেষণ

এই ধরনের অনৈতিক লাভ সমাজে দুভাবেই প্রভাব ফেলে—

নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে
সামাজিক ভরসা ও নিরাপত্তা ভেঙে দেয়

এটি সামাজিক অসমতা ও বিদ্বেষকে জন্ম দেয়, ফলে মানুষ ধীরে ধীরে স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে।
---

৫. রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বটি

রাজনীতিতে দুর্বল জনগোষ্ঠীর ভিক্ষা বা ভরসা ব্যবহার করে ভোট কেনা, বা তাদের অশিক্ষা ও অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে ভুল প্রতিশ্রুতি দেয়া—এই তত্ত্বের রাজনৈতিক প্রয়োগ। এটি এক ধরনের গণশোষণ।
---

৬. অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা

বাজার ব্যবস্থায় দরিদ্রদের দুর্বলতা ব্যবহার করে—
অনৈতিক ঋণের ফাঁদে ফেলা
নিম্নমানের পণ্য বিক্রি
কর্মীদের শ্রমের যথাযথ মূল্য না দেয়া

এই সবই "Immoral Benefit from Weakness"-এর অন্তর্ভুক্ত।
---

৭. ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক আলোচনার জায়গা

প্রায় সব ধর্মই দুর্বলদের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্য করতে বলে। কোরআন, বাইবেল, গীতা—সবখানেই অন্যের কষ্টকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করাকে গর্হিত বলা হয়েছে। সুতরাং এই তত্ত্বের নৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত শক্তিশালী।
---

৮. সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য আপত্তি

কেউ বলতে পারেন:

"সব সুবিধা কি অনৈতিক?"

"কখনো কখনো প্রফিট তো একটা ন্যায্য বিষয়!"

উত্তর: সুবিধা গ্রহণ সবসময় অনৈতিক নয়। তবে যদি সেটি ইচ্ছাকৃতভাবে কারো দুর্বলতা ‘ব্যবহার’ করে করা হয়, তখন তা অনৈতিক হয়ে যায়।

---

৯. প্রতিকার ও সমাধানের প্রস্তাবনা

দুর্বলদের সুরক্ষার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন
মানবিক মূল্যবোধ চর্চা
শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি
কর্মক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা
আইনগত সহায়তা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ

---

🔟 উপসংহার

“Immoral Benefit from Weakness” তত্ত্বটি একটি নীরব কিন্তু ক্ষতিকর বাস্তবতার বিশ্লেষণ। আমাদের সমাজে নৈতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ এটি। সময় এসেছে, মানুষ হিসেবে আমাদের একে চিনে নেয়ার, প্রতিহত করার এবং মানবিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার।

---

১১. লেখকের বক্তব্য

আমি আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ), সৌদি আরবে প্রবাসী, একজন শিক্ষক, গবেষক ও কবি। এই তত্ত্বটি আমার দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ, সামাজিক অভিজ্ঞতা ও নৈতিক চেতনা থেকে জন্ম নিয়েছে। আমি চাই—এই তত্ত্বটি একাডেমিক আলোচনায় আসুক, নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় আসুক।

---

১২. কপিরাইট ঘোষণা ও যোগাযোগ

Copyright © 2025
তত্ত্বটি লেখক কর্তৃক মৌলিকভাবে রচিত এবং এর সমস্ত স্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এর কোনো অংশ ব্যবহারযোগ্য নয়।

📧 যোগাযোগ:
📍 সৌদি আরব
✉️ ariful01711@gmail.com

---

আধ্যাত্মিক শক্তি, অলৌকিক ক্ষমতা, ইলহাম ও বাতেনী জ্ঞান

প্রবন্ধ শিরোনাম:

আধ্যাত্মিক শক্তি, অলৌকিক ক্ষমতা, ইলহাম ও বাতেনী জ্ঞান: কুরআন, হাদীস ও ইতিহাসের আলোকে

লেখক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)


ভূমিকা:

ইসলামী দর্শন শুধু বাহ্যিক আচরণ নয়, বরং একটি গভীর আধ্যাত্মিক জীবনচর্চার আহ্বান জানায়। আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর প্রেম, নৈতিকতার উৎকর্ষ—এই সবের পেছনে কাজ করে এমন কিছু অন্তর্নিহিত শক্তি যা কখনো স্পষ্ট, আবার কখনো গোপন। এ প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে আধ্যাত্মিক শক্তি, অলৌকিক ক্ষমতা, ইলহাম ও বাতেনী জ্ঞানের ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।


১. আধ্যাত্মিক শক্তি (Adhyatmik Power)

অর্থ ও ব্যাখ্যা:

আধ্যাত্মিক শক্তি হলো সেই অভ্যন্তরীণ বল যা আত্মাকে আল্লাহর দিকে অগ্রসর করে। এটি অর্জিত হয় ধ্যান, যিকির, তাকওয়া, সৎকর্ম, এবং নিয়মিত ইবাদতের মাধ্যমে।

কুরআন ও হাদীসের আলোকে:

"যে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেছে সে সফল হয়েছে" — সূরা আশ-শামস (৯১:৯)

রাসুল (সা.) বলেন:

“দেহে একটি অঙ্গ আছে, সেটি ঠিক থাকলে পুরো শরীর ঠিক থাকে। সেটি হলো হৃদয়।” — (সহীহ বুখারী)

ইতিহাসের আলোকে:

ইমাম গাজ্জালী, মাওলানা রুমি, হযরত বাজিদ বস্তামি প্রমুখ এই শক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ, যাঁরা আত্মিক সাধনার মাধ্যমে মানুষের অন্তর জয় করেছিলেন।


২. অলৌকিক ক্ষমতা (Karāmah / Oloukik Power)

অর্থ:

আল্লাহর কোনো প্রিয় বান্দার মাধ্যমে সংঘটিত অসাধারণ ও স্বাভাবিক নিয়মবিরুদ্ধ ঘটনা হলো কারামাত। এটি নবীদের মু'জিযার মত হলেও ভিন্ন ধরণের।

কুরআনের দৃষ্টিতে:

“যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিল, সে বলল: আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই তা এনে দেব।” — সূরা নামল (২৭:৪০)

হাদীসে:

“আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক থাকবে যাদের দোয়া কবুল হবে।” — (তাবারানী)

ইতিহাসের দৃষ্টিতে:

শায়খ আবদুল কাদির জিলানী (রহ.), বাইজিদ বস্তামী (রহ.), খাজা মইনুদ্দিন চিশতী (রহ.)-এর বহু কারামাত আজও ইতিহাসে আলোচ্য।


৩. ইলহাম (Ilhām / প্রেরণা)

সংজ্ঞা:

ইলহাম হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো বান্দার অন্তরে প্রেরিত ধারণা বা বাণী, যা সাধারণ জ্ঞান বা যুক্তির মাধ্যমে আসে না। এটি নবুওয়ত নয়, কিন্তু রহ্যময় উপলব্ধি।

কুরআনের আলোকে:

“আমি মূসার মাকে ইলহাম করলাম, তাকে দুধ পান করাও।” — সূরা কাসাস (২৮:৭)

হাদীসের দৃষ্টিতে:

“আমার উম্মতের কেউ ইলহামপ্রাপ্ত হয়ে থাকলে সে উমর (রা.) হতেন।” — (সহীহ বুখারী)


৪. বাতেনী জ্ঞান (Inner Knowledge / Bātinī Gyan)

অর্থ:

এটি এমন এক অন্তর্জ্ঞান, যা বাহ্যিক শিক্ষার বাইরেও আত্মিক সাধনা ও আল্লাহর কাছাকাছি আসার মাধ্যমে অর্জিত হয়। সূফিগণ একে "মাকিফাতের আলো" বলে অভিহিত করেন।

ইমাম গাজ্জালীর মতে:

“প্রকৃত ইলম হলো যে ইলম তোমাকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায়।” — (ইহইয়া উলুমুদ্দিন)

বাস্তব দৃষ্টান্ত:

হযরত খিজির (আ.) মুসা (আ.)-কে এমন কিছু শিক্ষা দেন, যা বাহ্যিকভাবে অদ্ভুত মনে হলেও গভীর ব্যাখ্যা রাখে — সূরা কাহাফ, আয়াত ৬০-৮২।


উপসংহার:

ইসলামে আধ্যাত্মিকতা, ইলহাম, কারামাত, ও বাতেনী জ্ঞান বাস্তব এবং গভীর বিষয়, কিন্তু এগুলো বাহ্যিকতা নয় — বরং আত্মিক উন্নয়নের ফল। এগুলোর সবই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন এবং আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কিছুই ঘটে না। কাজেই এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আমাদের উচিত— আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজেকে পরিশুদ্ধ করা এবং নিয়মিত আত্মসমালোচনার মাধ্যমে এগিয়ে চলা।


শেষ কথাঃ

আধ্যাত্মিকতা আমাদের আত্মার খাবার, ইলহাম হলো পথের আলো, কারামাত হলো আল্লাহর রহমতের নিদর্শন, আর বাতেনী জ্ঞান হলো অন্তরের খোলস ছিন্ন করা। এগুলোর সমন্বয়ে একজন মুমিন পরিণত হন আল্লাহর প্রকৃত বান্দায়।

---

📚 প্রস্তাবিত পড়াশোনা:

1. ইমাম গাজ্জালী – "ইহইয়া উলুমুদ্দিন"
2. ইবনে কাইয়্যিম – "মাদারিজুস সালিকীন"
3. কুরআন ও তাফসীর
4. আওলিয়া ও সুফিদের জীবনচরিত

---

মুহাররম মাসের ইতিহাস ও গুরুত্ব

আরবি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মুহাররম (محرم) ইসলামী ইতিহাস, কুরআন ও হাদীসের আলোকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। এটি হারাম (পবিত্র) চারটি মাসের একটি, এবং এতে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল জাহেলিয়াত যুগেও। নিচে মুহাররম মাসের ইতিহাস ও গুরুত্ব কুরআন, হাদীস এবং ইসলামী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হলো:
---

📖 কুরআনের আলোকে মুহাররম মাস
---

🔹 হারাম মাস হিসেবে উল্লেখ:

আল্লাহ বলেন:

> "নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট মাসসমূহের সংখ্যা বারোটি, আল্লাহর কিতাবে, যেদিন তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন; তন্মধ্যে চারটি মাস অত্যন্ত সম্মানিত..."
— (সুরা তাওবা: ৯:৩৬)

এই চারটি সম্মানিত মাস হলো: মুহাররম, রজব, যুল-ক্বা'দাহ ও যুল-হিজ্জাহ। মুহাররমকে ‘আল্লাহর মাস’ বলা হয়, অর্থাৎ এটি সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে সম্মানিত।
---

🕋 হাদীসের আলোকে মুহাররম মাস

---

🔹 সর্বশ্রেষ্ঠ রোযার মাস:

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

> “রমজানের পর সর্বোত্তম রোযা হল মুহাররম মাসে আল্লাহর জন্য রোযা রাখা।”
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬৩)

🔹 আশুরার রোযা:

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন:

> "আমি আশা করি, আশুরার (১০ মুহাররম) রোযা বিগত বছরের গুনাহ মাফ করে দিবে।"
— (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬২)

---

📜 ইসলামি ইতিহাসে মুহাররম মাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ
---

১. নবী মূসা (আ.) ও বনি ইসরাইলের রক্ষা:

🔸 ১০ মুহাররম (আশুরা) দিবসে আল্লাহ তাআলা নবী মূসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের ফেরাউন থেকে রক্ষা করেন, এবং ফেরাউন ডুবে যায়।
🔸 এজন্য ইহুদিরাও এ দিন রোযা রাখতো। রাসূল ﷺ তা শুনে বলেছিলেন:

> "আমরা মূসার অধিক হকদার।" — অতঃপর তিনি আশুরার রোযা রাখলেন এবং সাহাবীদেরও নির্দেশ দিলেন।

২. নবী নূহ (আ.)'র কিস্তি জুদী পর্বতে থামে:

অনেক বর্ণনায় আছে, ১০ মুহাররমে নূহ (আ.)-এর কিশতী পাহাড়ে থামে।

৩. হযরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাত (৬১ হি.):

🔸 ইমাম হুসাইন (রাঃ), রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রিয় দৌহিত্র, কারবালার প্রান্তরে ১০ মুহাররম ৬১ হিজরিতে ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে শহীদ হন।
🔸 এই ঘটনাটি মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন হিসেবে স্মরণীয়। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীনতা ও সত্যের জন্য শাহাদাত বরণ করেছিলেন।

---

⚖️ মুহাররম মাসে ভুল প্রথা ও ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

---

❌ শোক পালন বা নিজেকে আঘাত করা:

🔹 অনেক মানুষ ইমাম হুসাইনের শাহাদতের কারণে নিজেকে আঘাত করে, কান্নাকাটি করে, শোকসভা করে।

🔹 ইসলামে এই ধরনের আত্ম-যন্ত্রণামূলক শোক পালন নিষিদ্ধ। রাসূল ﷺ বলেন:

> "আমাদের মধ্যে নয়, যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, জামা ছিঁড়ে এবং জাহেলিয়াতের মত আহাজারি করে।"
— (সহীহ বুখারী, হাদীস: ১২৯৪)

✅ ইসলামী করণীয়:

🔹 মুহাররম মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখা,
🔹 ইবাদতে মনোনিবেশ করা,
🔹 সত্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান শেখা,
🔹 শহীদদের জন্য দোয়া করা,
🔹 ইসলামের সঠিক ইতিহাস জানা ও প্রচার করা।

---

✨ মুহাররম মাস থেকে নেওয়ার শিক্ষা
---

1. আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল — (মূসা আ. ও কারবালা থেকে)

2. সত্যের পথে অটল থাকা — (ইমাম হুসাইন রাঃ)

3. ধৈর্য ও ইবাদতের প্রতি যত্নবান হওয়া

4. জাহেলিয়াতের অনুকরণ এড়িয়ে চলা

5. ইসলামি ঐক্য রক্ষা করা, বিভেদ নয়

---

📚 উপসংহার:

মুহাররম মাস কোনো নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর শোক কিংবা আনন্দের মাস নয়; এটি তাওহীদ, ধৈর্য, সত্য ও আত্মত্যাগের শিক্ষার মাস। রাসূলুল্লাহ ﷺ এই মাসকে আল্লাহর মাস বলে উল্লেখ করেছেন, তাই এ মাসে আমাদের উচিত বেশি বেশি ইবাদত করা, আত্মশুদ্ধি করা এবং ইসলামের প্রকৃত ইতিহাস জানার চেষ্টা করা।

---

বৃহস্পতিবার, জুন ১২, ২০২৫

📖 উপন্যাস: রক্তে লেখা ভালোবাসা

📖 উপন্যাস: রক্তে লেখা ভালোবাসা

(ফিলিস্তিনে সওগাত ও কবিতার গল্প)
✍️ আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)

---

🕌 ভূমিকা:

এই উপন্যাস কল্পনার, কিন্তু বাস্তবতার সীমায় দাঁড়িয়ে। এটি শুধুই প্রেমের গল্প নয়, এটি ঈমান, ত্যাগ, যুদ্ধ, রক্ত, কান্না, প্রতিবাদ আর বিজয়ের গল্প। এখানে প্রেম মানে আত্মোৎসর্গ; যুদ্ধ মানে ভালোবাসার প্রতিশোধ।

---
📚 অধ্যায়সমূহ:
---

১. নীরব মুসলিম বিশ্ব

বিশ্ব মিডিয়া যখন ফিলিস্তিনকে “সহিংস” বানিয়ে তোলে, তখন মুসলিম দেশগুলো চুপচাপ। রাষ্ট্রনেতারা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ কেউ ইসরায়েলের সঙ্গে প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবসা করছে। ফিলিস্তিনের উপর চালানো যাচ্ছে ড্রোন হামলা, দখল চলছে একের পর এক এলাকায়—কিন্তু পুরো ওম্মাহ চুপ।
এই নীরবতার মাঝেও জেগে উঠছে কিছু হৃদয়। তাদেরই একজন বাংলাদেশের সন্তান সওগাত ইসলাম ভূঁইয়া।

---

২. গাজা: এক আগুনে ঘেরা শহর

গাজা এখন এক খাঁচার শহর। খাবার নেই, বিদ্যুৎ নেই, কিন্তু তবুও কেউ হার মানছে না। মানুষ মরছে, কিন্তু ঈমান বাঁচিয়ে রাখছে। ছিন্নমূল শিশুদের হাতে পাথর, নারীদের চোখে আগুন—এই শহরের মাটি রক্তে সিক্ত।
এইখানেই দেখা হয় সওগাতের—এক বয়োবৃদ্ধ আলেমের সাথে, যিনি বলেন:
"তুমি আল্লাহর পথে এসেছো, প্রেম করতে হলে শহীদ হয়ে করো—তবে কবুল হবে।"

---

৩. সওগাত: ভালোবাসা ও যুদ্ধের সৈনিক

সওগাত জন্মেছিলেন বাংলাদেশের এক ধনী ও সম্ভ্রান্ত ইসলামি  পরিবারে। ছাত্রজীবনে কোরআন ও প্রযুক্তির প্রেমে পড়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হওয়ার পর, অনলাইন জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট হন।
একদিন তিনি বলেন:
"আমি Keyboard দিয়ে শুরু করব, আর শেষ করব Kalashnikov দিয়ে।"
 পাড়ি জমান তুরস্ক হয়ে ফিলিস্তিনে।

---

৪. কবিতা: যিনি হৃদয়ে আগুন ধরান

মোছাম্মৎ কবিতা বেগম, গাজায় জন্ম। বাবাকে হারিয়েছেন ইসরায়েলি হামলায়, মা এখন পঙ্গু। কবিতা সাইবার জিহাদে পারদর্শী—Dark Web, গোপন সফটওয়্যার, ডেটা ট্রান্সফার—সবই তাঁর হাতের খেলা।
তাঁর আর সওগাতের পরিচয় হয় Telegram-এ, আল কুদস হ্যাকার গ্রুপে।
ভালোবাসা ধীরে ধীরে ঈমানের রূপ নেয়।
---

৫. ভালোবাসা ও জিহাদের মিলনবিন্দু

দুজনেই ঈমানের পথে প্রেমের শপথ নেয়। বিয়ের প্রস্তাব আসে, কিন্তু কবিতা বলে:
"তুমি শহীদ না হওয়া পর্যন্ত আমি তোমার স্ত্রী হবো না।"
সওগাত উত্তর দেয়:
"তাহলে শহীদের বউ হতেই তুমি প্রস্তুত হও।"
তাদের প্রেম হয়ে উঠে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এক শুদ্ধ বন্ধন।

---

৬. মিডিয়া ও অনলাইন যুদ্ধ

এই অধ্যায়ে দেখানো হয় কিভাবে তারা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সার্ভার হ্যাক করে। ফেক নিউজের জবাব দেয় তথ্য-সন্ত্রাস দিয়ে নয়, তথ্য-সত্য দিয়ে।
কবিতা একটি ভিডিও বার্তা ছাড়ে:
"তোমরা আমাদের মেরে ফেলতে পারো, কিন্তু সত্যকে মুছে ফেলতে পারো না।"
বিশ্বজুড়ে ‘#FreeGaza’ ট্রেন্ড করে।
---

৭. মরণপণ প্রতিরোধ

ইসরায়েল আকাশ থেকে, সাগর থেকে, এবং মাটির নিচ থেকে হামলা চালায়। গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে সওগাত ও তার দল ইসরায়েলের এক অস্ত্র ডিপো উড়িয়ে দেয়।
একে একে সবাই শহীদ হন। সওগাত গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু বেঁচে থাকেন, কারণ তাঁর শহীদ হওয়া এখনো কবিতার চোখে দেখা হয়নি।

---

৮. বিশ্বাসঘাতকদের চেহারা

মুসলিম দেশের ধনীরা ইসরায়েলি কোম্পানির গাড়ি চালান, মোবাইল ব্যবহার করেন, অর্থ বিনিয়োগ করেন সেই সব কোম্পানিতে যারা ফিলিস্তিন ধ্বংস করছে।
একজন মিশরীয় ব্যবসায়ী চর হিসেবে ধরা পড়ে। সওগাতের মুখে উচ্চারিত হয়:
"আমরা যত না কাফিরদের দ্বারা মরেছি, তার চেয়ে বেশি মরেছি তোমাদের মতো ভাইদের বিশ্বাসঘাতে।"

---

৯. আত্মোৎসর্গের পথে

সওগাত কবিতাকে বিদায় বলেন:
"আল্লাহ তোমায় হিফাজত করুন, আমি আল্লাহর রাস্তা ধরছি।"
শেষ অভিযানে ইসরায়েলের এক গোপন গবেষণা ল্যাবে হামলা চালান। বিস্ফোরণে তিনিও শহীদ হন।

---

১০. কবিতার কান্না ও বিজয়ের সূর্য

সওগাতের মৃত্যুর পর কবিতা নিজের জীবন উৎসর্গ করেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তথ্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে।
শেষ দৃশ্যে কবিতা দাঁড়িয়ে আছেন এক ছোট বালকের সামনে, যার নামও সওগাত—তাদের দত্তক সন্তান, নতুন প্রজন্মের প্রতিরোধ সৈনিক।

---

📌 শেষ কথা:

এই উপন্যাস কেবল প্রেমের নয়, এটি এক ঈমানী ডাক। সওগাত ও কবিতার ভালোবাসা যেন আমাদের মনে প্রশ্ন তোলে—
“আমরা কাদের পক্ষে আছি? জালিম না মজলুমের পক্ষে? মুসলিম না অমুসলিমের পক্ষে?”

---

মঙ্গলবার, জুন ১০, ২০২৫

📚 “দুর্বলতা বা ভুল থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের তত্ত্ব”(Immoral Benefit from Weakness Theory)উদ্ভাবক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)

📚 “দুর্বলতা বা ভুল থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের তত্ত্ব”

(Immoral Benefit from Weakness Theory)
উদ্ভাবক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)
প্রথম প্রস্তাবনা: জুন ২০২৫

---

🌟 মূল ধারণা (Core Concept)

এই তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো:
👉 একটি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সমাজ, ধর্ম, জাতি বা রাষ্ট্রের দুর্বলতা (Weakness), ভুল (Error), ব্যর্থতা (Failure) বা সংকট (Crisis) সৃষ্টি হলে — অন্য কোনো শক্তিশালী পক্ষ (ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা) সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের জন্য অনৈতিক সুবিধা (Immoral Gain) আদায় করে।

👉 এই সুবিধা লাভ নৈতিক নয়, মানবিক নয়, এবং প্রায়শই শোষণমূলক (Exploitative)।

👉 দুর্বল পক্ষের উন্নতি কমে যায় বা তারা আরও বেশি নির্ভরশীল (Dependent) হয়ে পড়ে।

---

⚙️ তত্ত্বের স্তরসমূহ (Levels of the Theory)

১️⃣ ব্যক্তি-ব্যক্তি পর্যায় (Interpersonal Level)

👉 কোনো ব্যক্তির মানসিক, আর্থিক বা সামাজিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ সুবিধা নেওয়া।
উদাহরণ: ঋণের ফাঁদ, সম্পর্কের মধ্যে মানসিক শোষণ, প্রতারণা।

---

২️⃣ প্রতিষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান পর্যায় (Institutional Level)

👉 একটি দুর্বল প্রতিষ্ঠান (বিভ্রান্ত নীতি, বাজার সংকট) এর সুযোগ নিয়ে বড় প্রতিষ্ঠান তার সম্পদ, বাজার বা প্রযুক্তি দখল করে।
উদাহরণ: স্টার্টআপের আইডিয়া চুরি, বাজার একচেটিয়া করা।

---

৩️⃣ রাষ্ট্র-রাষ্ট্র পর্যায় (Geopolitical Level)

👉 কোনো দুর্বল অর্থনীতি বা সংকটাপন্ন দেশের ওপর ঋণ, চুক্তি, সামরিক চুক্তি চাপিয়ে দিয়ে সম্পদ ও নীতিগত নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা।
উদাহরণ: ঋণের ফাঁদ কূটনীতি (Debt Trap Diplomacy), নির্দিষ্ট দেশের খনিজ সম্পদ দখল।

---

৪️⃣ ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি পর্যায় (Cultural/Religious/Social Level)

👉 ধর্মীয়, সামাজিক, শিক্ষাগত বিভক্তির সুযোগে শোষণমূলক ব্যবসা বা প্রভাব বিস্তার।
উদাহরণ: সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে অস্ত্র বিক্রি; বিদেশি শিক্ষানীতির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক উপনিবেশ সৃষ্টি।

---

৫️⃣ বিশ্বব্যাপী শোষণ চক্র (Global Exploitation Networks)

👉 শক্তিশালী আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী বা সংগঠন দুর্বল অঞ্চল বা সমাজের সংকটের সুযোগ নিয়ে সংগঠিত শোষণ চক্র তৈরি করে।
উদাহরণ: দুর্যোগ-ব্যবসা (Disaster Capitalism), ভূমিকম্প-পরবর্তী অর্থনৈতিক শোষণ।

---

🧱 মূল উপাদানসমূহ (Core Elements of the Theory)

উপাদান সংজ্ঞা

শক্তির অসম বিভাজন (Power Asymmetry) শোষক পক্ষ বেশি ক্ষমতাধর; দুর্বল পক্ষের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।
মিথ্যা সম্মতির সৃষ্টি (Manufactured Consent) দুর্বল পক্ষকে এমনভাবে বোঝানো যে তারা নিজের ইচ্ছায় এই অবস্থা মেনে নিয়েছে।
কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি (Engineered Crisis) সংকট ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি বা বাড়িয়ে তোলা।
শোষণ চক্র (Exploitation Ring) সংঘবদ্ধ বা সংগঠিতভাবে শোষণের জন্য গোষ্ঠী তৈরি।
গল্প/বর্ণনা নিয়ন্ত্রণ (Narrative Capture) গণমাধ্যম বা শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে জনগণের মনোভাব নিয়ন্ত্রণ।

---

🚀 শোষণের ধাপসমূহ (Stages of Immoral Exploitation)

১️⃣ সংকট চিহ্নিতকরণ (Crisis Identification)
২️⃣ সুযোগ তৈরি/বাড়ানো (Opportunity Engineering)
৩️⃣ দখল ও শোষণ (Capture & Exploitation)
৪️⃣ গল্প নিয়ন্ত্রণ (Narrative Control)
৫️⃣ শোষণ চক্রের স্থায়িত্ব (Cycle Maintenance)

---

🧪 প্রয়োগের ক্ষেত্র (Application Areas)

অর্থনীতি (Debt Trap, Market Takeover)

আন্তর্জাতিক রাজনীতি (Geo-economic Exploitation)

শিক্ষা (Curriculum Colonization)

সংস্কৃতি (Cultural Appropriation)

ধর্ম (Religious Conflict-based Profiteering)

মানবিক সহায়তা (Aid Manipulation)

---

📢 নীতিগত প্রস্তাবনা (Policy Proposals)

✅ দুর্বল পক্ষের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা বাড়াতে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা কাঠামো তৈরি।
✅ Global Exploitation Risk Index (GERI) তৈরি।
✅ সুশাসন এবং স্বচ্ছতা নীতিমালা শক্তিশালী করা।
✅ আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তায় বেসরকারি নৈতিকতা নীতিমালা প্রণয়ন।
✅ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও শিক্ষার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।

---

🎓 উপসংহার (Conclusion)

👉 দুর্বলতা, ভুল বা সংকটকে অনেকে উন্নতির সুযোগ হিসেবে দেখে — সেটি ইতিবাচক।
👉 কিন্তু বিশ্বব্যাপী এবং স্থানীয়ভাবে দুর্বলতার অনৈতিক শোষণ ঘটে — যেটি নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের জন্য হুমকি।
👉 এই তত্ত্ব আমাদের শেখায় — এই ধরনের শোষণকে চিহ্নিত করতে, প্রতিরোধ করতে এবং নৈতিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

রবিবার, জুন ০৮, ২০২৫

ফিরে আসার গল্প

 

📚 বইয়ের শিরোনাম:

🌙✨ ফিরে আসার গল্প

(একটি হৃদয়স্পর্শী আত্মিক যাত্রা)

✍️ লেখক:

আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)
📍 রিয়াদ, সৌদি আরব

📜 ভূমিকা


✍️ লেখকের কথা

এই বই লিখতে বসেছিলাম এক নিঃশব্দ অনুরণনে।
নিজের ভেতরের বহু বছরের জমে থাকা বেদনা, অনুশোচনা, তাওবা, ভালোবাসা আর ফিরে আসার গল্প গুলোকে শব্দের আকার দিতে চেয়েছিলাম।

এই গল্প শুধু আমার নয়আমাদের সবারই।
আমরা প্রত্যেকে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে রবের কাছ থেকে দূরে সরে যাই, আবার কেউ কেউ ফিরে আসার সৌভাগ্য পাই।
এই ফিরে আসার পথ সহজ নয়, সুন্দরও নয়, বরং পাথর-বিছানো, কাঁটা-গাঁথা এক জায়গা।
তবে, শেষ প্রান্তে থাকে অপার আলো, এক অশেষ ভালোবাসার ছোঁয়া

আমি এই বইটিকে কোনো জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ বা ফতোয়া গ্রন্থ হিসেবে লিখিনি।
এটা একজন দুর্বল বান্দার আত্মার নির্ভেজাল কাহিনিযেখানে প্রেম আছে, কান্না আছে, লড়াই আছে, আবার মুক্তি শান্তিও আছে

আশা করি পাঠকের হৃদয়েও গল্প এক ফোঁটা হলেও আলো জ্বালাতে পারবে

আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)
রিয়াদ, সৌদি আরব


🌙 এই গল্প কেন?

আমি এই গল্প লিখেছি, কারণএই ফিরে আসার অনুভূতি আমি নিজে অনুভব করেছি।

অনেক বছর ধরে পাপ, গাফেলতি, অবহেলায় কাটানো জীবনে হঠাৎ একদিন ভেতরের কান্না বেরিয়ে আসে
সেই কান্নার স্রোতে ভেসে যেতে যেতে রবের দিকে ফিরে তাকিয়েছিলাম

সেখানে যে আলো পেয়েছি, যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
তবে চেষ্টা করেছি এই গল্পে সেই অনুভূতির ছোঁয়া দিতে।

এই গল্প লেখার মূল উদ্দেশ্যআপনাদেরও একটুখানি মনে করিয়ে দেওয়াফিরে আসার পথ কখনো বন্ধ হয় না, আর রবের দরজা কখনো বন্ধ হয় না

যদি এই বই পড়ে একজন মানুষও নিজের অন্তরে আবার তাওবার আগুন জ্বালাতে পারেন, তবে আমার শ্রম সার্থক হবে ইনশাআল্লাহ্


ফিরে আসার অনুপ্রেরণা

আমার ফিরে আসার অনুপ্রেরণা ছিল অনেকগুলো।

প্রথমতভেতরের অপরাধবোধ পাপের বোঝা একসময় সহ্য করা যায় না।
দ্বিতীয়তকুরআনের কিছু আয়াতযেন একেবারে হৃদয় ভেদ করে ভেতর জাগিয়ে দিল।
তৃতীয়তএকাকীত্বের গভীর রাতগুলো সেখানে রব ছাড়া আর কারো কাছে ফিরবার জায়গা ছিল না।
চতুর্থতভালো কিছু মানুষ, কিছু লেখা, কিছু বক্তব্যযা হৃদয় নরম করেছিল।

সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিলরবের দরজা যে সবসময় খোলা থাকে, তা জানার অনুভূতি
অনুভূতি একবার পেয়ে গেলে, ফিরে আসার ডাক আর থামানো যায় না

এই অনুপ্রেরণাগুলোই আমাকে এই গল্পটি লেখার সাহস দিয়েছে।

সূচিপত্র

📜 ফিরে আসার গল্পসূচিপত্র

(সংক্ষেপে খণ্ডের শিরোনামসমূহ)


খণ্ড : ফিরে আসার শুরু
খণ্ড : ভেতরের কান্না
খণ্ড : অপরাধবোধের আগুন
খণ্ড : প্রথম তাওবা
খণ্ড : নতুন পথের আহ্বান
খণ্ড : বন্ধুরা ছেড়ে গেল
খণ্ড : একাকীত্বের পাঠ
খণ্ড : কুরআনের আলোয় প্রথম ছোঁয়া
খণ্ড : নামাজের দিকে ফেরা
খণ্ড ১০: আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি 🌸 (আল্লাহর প্রতি নিখাদ প্রেম)
খণ্ড ১১: জীবন বদলে দেয় যে রাত
খণ্ড ১২: আত্মার নতুন জাগরণ
খণ্ড ১৩: পাপমুক্ত পথের যুদ্ধ
খণ্ড ১৪: হালাল-হারামের সীমারেখা
খণ্ড ১৫: রবের ভালোবাসার প্রতিদান
খণ্ড ১৬: সওগাতের নতুন সমাজ
খণ্ড ১৭: প্রতিদিনের তাওবা 🌙
খণ্ড ১৮: রবের ভালোবাসার গল্প 💖
খণ্ড ১৯: আস্থা ধৈর্য 🕊
খণ্ড ২০: আলোর সন্ধানে
খণ্ড ২১: শেষ পর্ব: পূর্ণ মুক্তি শান্তি 🕊🌙


সংক্ষেপে টীকা:

🔸 খণ্ড -: সওগাতের ভেতরের পরিবর্তনের সূচনা, আত্মগ্লানি, তাওবায় ফেরা।
🔸 খণ্ড -: একাকীত্ব, সমাজের বিচ্ছিন্নতা, নামাজ কুরআনের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক।
🔸 খণ্ড ১০-১৫: গভীর আত্মিক প্রেম, নতুন সমাজে নিজেকে গড়ে তোলা।
🔸 খণ্ড ১৬-২১: প্রতিদিনের আত্মসংগ্রাম, রবের ভালোবাসার গভীর অনুভূতি, ধৈর্য মুক্তির দিকে যাত্রা।

📜 ফিরে আসার গল্পবিস্তারিত সূচিপত্র

(একটি আত্মিক যাত্রার ধারাবাহিক কাহিনি)


প্রথম অধ্যায়: অন্ধকারের ভেতর থেকে ডাক

খণ্ড : ফিরে আসার শুরু
👉 সওগাতের অন্তরজগতের প্রথম আলোড়নঅপরাধবোধ ফেরার ইচ্ছা জন্মানো।

খণ্ড : ভেতরের কান্না
👉 গোপনে গোপনে ভেঙে পড়া, রবের সামনে অশ্রুসিক্ত অন্তরের জবানবন্দি।

খণ্ড : অপরাধবোধের আগুন
👉 পাপের অতীত স্মৃতি তাকে পুড়িয়ে খায়, মনে জাগে তীব্র অনুশোচনা।

খণ্ড : প্রথম তাওবা
👉 জীবনের প্রথম গভীর তাওবারাতের নিঃশব্দ কান্নায়।

খণ্ড : নতুন পথের আহ্বান
👉 তাওবার পর এক নতুন পথের দিকে প্রথম পদক্ষেপ।


দ্বিতীয় অধ্যায়: এক নতুন পথের সংগ্রাম

খণ্ড : বন্ধুরা ছেড়ে গেল
👉 সওগাত বুঝতে পারেপুরনো বন্ধু, পুরনো সমাজ তার নতুন পথ মেনে নিতে পারছে না।

খণ্ড : একাকীত্বের পাঠ
👉 একাকীত্বের মধ্যে নিজেকে নতুনভাবে চিনতে শেখা।

খণ্ড : কুরআনের আলোয় প্রথম ছোঁয়া
👉 প্রথমবার গভীরভাবে কুরআনের অনুবাদ পাঠের অনন্য অনুভূতি।

খণ্ড : নামাজের দিকে ফেরা
👉 নামাজের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া, প্রথম সঠিকভাবে নামাজ আদায়ের অভিজ্ঞতা।


তৃতীয় অধ্যায়: হৃদয়ের গভীরে রব

খণ্ড ১০: আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি 🌸
👉 একদম হৃদয় ভেঙে পড়া প্রেমের কবিতার মতোসওগাতের মুখ থেকে আল্লাহর প্রতি নিখাদ প্রেমের ঘোষণা।

খণ্ড ১১: জীবন বদলে দেয় যে রাত
👉 এমন এক রাতের কথা, যা সওগাতের আত্মাকে একেবারে পাল্টে দেয়।

খণ্ড ১২: আত্মার নতুন জাগরণ
👉 এক গভীর আত্ম-উপলব্ধি, জীবনের নতুন উপলক্ষ্য দেখা।

খণ্ড ১৩: পাপমুক্ত পথের যুদ্ধ
👉 পাপের প্রলোভনের বিরুদ্ধে প্রতিদিনের যুদ্ধ।

খণ্ড ১৪: হালাল-হারামের সীমারেখা
👉 জীবনের নতুন চর্চায় হালাল-হারামের সীমানা নিয়ে কঠোরভাবে সচেতন হওয়া।

খণ্ড ১৫: রবের ভালোবাসার প্রতিদান
👉 সওগাত বুঝতে শেখেযে রব কেবল নেয় না, অসীমভাবে দেয়ও।


চতুর্থ অধ্যায়: নতুন সমাজ, নতুন জীবন

খণ্ড ১৬: সওগাতের নতুন সমাজ
👉 এক নতুন ধার্মিক পরিবেশের সন্ধান, নতুন বন্ধুত্ব, নতুন ভালোবাসা।

খণ্ড ১৭: প্রতিদিনের তাওবা 🌙
👉 প্রতিদিনের পাপ দুর্বলতার বিরুদ্ধে নতুন নতুন তাওবার দোয়া অভ্যাস।

খণ্ড ১৮: রবের ভালোবাসার গল্প 💖
👉 সওগাত কিভাবে রবের অদৃশ্য ভালোবাসা অনুভব করতে শেখে।

খণ্ড ১৯: আস্থা ধৈর্য 🕊
👉 জীবনের পরীক্ষার মুখে সওগাতের রবের উপর আস্থা রাখা এবং ধৈর্য ধরে পথ চলা।


পঞ্চম অধ্যায়: আলো, মুক্তি, শান্তি

খণ্ড ২০: আলোর সন্ধানে
👉 সওগাতের রবের সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য নিরলস চেষ্টাএক নতুন জীবনের আলো খোঁজা।

খণ্ড ২১: শেষ পর্ব: পূর্ণ মুক্তি শান্তি 🕊🌙
👉 এক পরিপূর্ণ মুক্তি হৃদয়ের গভীর শান্তির অনুভূতিআল্লাহর ভালোবাসার পূর্ণ প্রকাশ।


🌸 সংক্ষেপে:

এক অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরে যাওয়ার গল্প
অভ্যন্তরীণ পাপবোধআত্মশুদ্ধিধার্মিক সমাজে জায়গা পাওয়ারবের প্রতি নিখাদ প্রেমশেষ পর্যন্ত পরিপূর্ণ শান্তি মুক্তি।

লেখকের জীবন কথা (সংক্ষেপে)

আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ ইবনে শামছ্)
পিতা: বিশিষ্ট সমাজ সাহিত্যসেবক, কবি ক্বারী আলহাজ্ব শামছুল ইসলাম ভূঁইয়া (রাহঃ), সহকারী প্রকৌশলী, বাংলাদেশ তার টেলিফোন (বিটিএন্ডটি-বিটিসিএল)
মাতা: মোয়াল্লিমা হালীমা সাদীয়া ভূঁইয়া।

জন্ম: ১৯৭৯, ভাদুঘর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।
স্থায়ী ঠিকানা:
ফখরে বাঙ্গাল নিবাস, বাড়ী# ১২৩৪, ওয়ার্ড# ১২, ভূঁইয়া পাড়া, গ্রাম: ভাদুঘর, পোষ্ট: ভাদুঘর-৩৪০০, থানা: সদর, জেলা: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।

শিক্ষা জীবন:

  • প্রাথমিক থেকে বরাবরই ফার্স্ট বয় ছিলেন।
  • এসএসসি: হাবলা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৯৫।
  • এইচএসসি: ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ, ১৯৯৭।
  • বি.এস.এস (অর্থনীতি): ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ, ২০০১।
  • এম.এস.এস (অর্থনীতি): সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা, ২০০৩।
  • বি.এড: বাংলাদেশ টিচার্স ট্রেইনিং কলেজ, ঢাকা (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)
  • এম.এড: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
  • এমবিএ (এমআইএস): ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (অধ্যয়নরত)

পেশাগত জীবন:

  • পেশাগত জীবন, ১৬ বছর।
  • মোবাইল টেলিকম এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (ওয়ারিদ টেলিকম, এয়ারটেল লিমিটেড, রবি আজিয়াটা লিমিটেড, নগদ লিমিটেড) - ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত।
  • বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত (মদিনা)

সাহিত্যচর্চা:
লেখকের পূর্বপুরুষদের মধ্যে দ্বীন প্রচার, আধ্যাত্মিকতা সংস্কৃতির প্রচলন ছিল। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় লেখকের মধ্যে সাহিত্যচর্চার উৎসাহ জন্ম নেয় শৈশব থেকেই।

  • প্রাক্তন বিভাগীয় সম্পাদক সাহিত্য সম্পাদক: "বলিতে ব্যাকুল", "তিতাস বার্তা"
  • প্রকাশিত কবিতা লেখা:
    • দৈনিক ব্রাহ্মণবাড়ীয়া
    • দৈনিক প্রজাবন্ধু
    • মাসিক বলিতে ব্যাকুল
    • তিতাস বার্তা
    • হক্ব পয়গাম
    • যৌথ কাব্যগ্রন্থ: "ঝরা ফুলের গন্ধ", "বিজয়ের উল্লাসে", "বাংলার ১০০ কবি কবিতা"
    • প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: "শ্বাশ্বত আহ্বান", "ছন্দ নাবিক", "সত্য সন্ধানী", "বাঙালির স্বাধীনতা", "বিজয়ের উল্লাসে", "অনুশোচনা", "বিদ্রোহী তুমি, বিপ্লবী", "আজকের এই বাংলাদেশ", "আগুন জ্বালা অন্তরে", আরও।

সাহিত্যিক সম্মাননা:
পাক্ষিক/সাপ্তাহিক/মাসিক বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন এবং অনলাইন সাহিত্য প্ল্যাটফর্ম থেকে অসংখ্য সেরা কবি/সেরা পোস্ট/বিশেষ সম্মাননা লাভ করেছেন। আন্তর্জাতিক জাতীয় পর্যায়ে বহু কাব্যগ্রন্থে তাঁর কবিতা স্থান পেয়েছে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার

এই গ্রন্থের পেছনে যারা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রেরণা, সহযোগিতা উৎসাহ যুগিয়েছেন, তাঁদের প্রতি রইল অন্তরস্থ কৃতজ্ঞতা।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা আমার পরিবারের প্রতিআমার মা-বাবার দোয়া, শিক্ষা আদর্শ আমার জীবনকে গঠন করেছে।
আমার হৃদয়ের প্রিয় সহধর্মিণী খালেদা আক্তারতাঁর স্মৃতি, প্রেরণা, ভালোবাসা আত্মিক বন্ধন অনেক কবিতার অন্তর্নিহিত শক্তি হয়ে আছে।

বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী আমার প্রিয় পাঠকদের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসাআপনাদের ভালোবাসা অনুপ্রেরণায় এই সৃষ্টিশীল পথচলা।
সবশেষেআল্লাহ্ অশেষ অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়াতাঁর দয়া ছাড়া এই কাজের কিছুই সম্ভব হতো না।

যোগাযোগের ঠিকানা

আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ ইবনে শামছ্)

📍 বর্তমান অবস্থান: মদিনা, সৌদি আরব
🏠 স্থায়ী ঠিকানা: ফখরে বাঙ্গাল নিবাস, বাড়ী# ১২৩৪, ওয়ার্ড# ১২, ভূঁইয়া পাড়া, ভাদুঘর দক্ষিণ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সদর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।

📧 ইমেইল: ariful01711@gmail.com
📱 হোয়াটসঅ্যাপ: +966510429466

🌐 ফেসবুক পেজ: facebook.com/arifulislambhuiyan0
🌐 ব্লগ: arifulislambhuiyan.blogspot.com
🌐 LinkedIn: linkedin.com/in/arifulislambhuiyan
🌐 Fiction Factory Contributor: fictionfactory.org/contributor/2165
🌐 বাংলা কবিতা: bangla-kobita.com/ariful01711
🌐 Facebook (Alternate): facebook.com/ariful.bhuiyan.bd
🌐 Twitter: twitter.com/arifulbhuiyan12
🌐 YouTube: youtube.com/c/arifbhuiyan01711

All copyright by ARIFUL ISLAM BHUIYAN | আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া | ফখরে বাঙ্গাল নিবাস, ভাদুঘর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।


ফিরে আসার গল্প

✍️ আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)


🌿 খণ্ড

"ভেতরের কান্না"

সওগাত ভূঁইয়া ভালোবাসে খুবই, প্রচণ্ড, অপরিসীম।
কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না।
মনে মনে অন্তর দিয়ে অনেক অনেক ভালোবাসা পোষণ করেশুধুমাত্র জান্নাতুল ফেরদাউসের আশায় নয়,
সুমহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির আশায়, স্রষ্টার মহামূল্যবান দীদারের আশায়।

কিন্তু ইবলিস শয়তান পদে পদে সওগাতকে বিভ্রান্ত করে।
আবার ফিরে আসার চেষ্টায় মহান রবের সন্তুষ্টির পথে সে ছুটে চলে।

আজকের রাতেও এমনই এক যুদ্ধ চলছে তার অন্তরে।
পাপের ছায়ায় ঢাকা পড়া হৃদয় নিয়ে সওগাত বিছানায় বসেচোখের কোনে অশ্রু।

সে ফিসফিসিয়ে বলে
"
হে আল্লাহ্‌, আমি ব্যর্থ।
আমি দুর্বল।
তবু তুমিই আমার রব, তুমিই আমার প্রেম।
আমার পাপগুলো তুমি ধুয়ে দাও।
আমাকে আবার তোমার পথে ফিরিয়ে নাও।"

আকাশের তারা যেন তার কান্নার সাক্ষী হয়ে জ্বলে ওঠে।


🌿 খণ্ড

"প্রথম ডাক"

রাতের গভীরে, হঠাৎ বুকের ভিতর এক কাঁপুনি অনুভব করে সওগাত।
কেন যেন মনে হলোকেউ তাকে ডাকছে।

"সওগাত..."
নামটা যেন বাতাসে ভেসে এলো।

সে চমকে উঠলো।
এই ডাক কি বাস্তব? নাকি মনের ভুল?

তবু মনে গভীর টান অনুভব করলো।
এটা তো সেই রবের ডাক, যার প্রেমে তার হৃদয় ডুবে আছে।

"হে আল্লাহ্‌,
আমি তোমার ডাক শুনেছি।
আমাকে পথ দেখাও।
আমি পাপের আঁধার থেকে বের হতে চাই।
তোমার দিকে ছুটতে চাই।"

চোখের জলে ভিজে যায় তার গাল।
আজকের এই ডাক, এই অনুভব
সওগাতের জীবনের এক নতুন সূচনা।


🌿 খণ্ড

"অন্তরের দ্বন্দ্ব"

দিন যায়, রাত আসে।
আবারও পুরোনো পাপেরা ডাক দেয়
"
আয় ফিরে আয় আমাদের কাছে..."

সওগাতের ভেতর শুরু হয় তীব্র দ্বন্দ্ব।
একদিকে ইবলিসের ফাঁদ,
অন্যদিকে রবের মেহেরবানী।

"হে আল্লাহ্‌,
আমি কেন বারবার হারাই?
তুমি তো জানো
আমি তোমাকেই ভালোবাসি,
তবু ভুল করে ফেলি।"

কান্না আবারও ভিজিয়ে দেয় নামাজের সিজদার জায়গাটা।

সওগাত বুঝে যায়
এই দ্বন্দ্বই প্রেমের প্রমাণ।
যদি প্রেম না থাকতো,
তাহলে তো সে ফেরার আকুলতাও অনুভব করতো না।


🌿 খণ্ড

"একটি নতুন সিদ্ধান্ত"

সকালবেলা সূর্যের আলোয় ভিজে উঠেছে চারপাশ।

সওগাত চুপচাপ বসে, মনস্থির করে
"
আজ থেকে আমি বদলাবো।
প্রতিদিন একটু একটু করে।
একটি সৎ আমল, একটি সুন্দর কথা, একটি সঠিক কাজ।"

সে নিজের জন্য এক তালিকা বানায়
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে
অন্তর থেকে ইস্তেগফার
সকালে-সন্ধ্যায় তাসবীহ
মানুষের প্রতি সদাচরণ
হারাম থেকে দৃষ্টিকে হেফাজত

"হে আল্লাহ্‌, আমাকে তাওফীক দাও।
আমার ইচ্ছার উপর তোমার রহমতের ছায়া ফেলো।"


"অশ্রুবিন্দুর উপহার"

রাতের তাহাজ্জুদ।
আধো অন্ধকার ঘরে সওগাত দাঁড়িয়ে গেছে।

আল্লাহু আকবার।

প্রথম সিজদায় যাওয়ার মুহূর্তেই হৃদয় থেকে বেরিয়ে আসে
অশ্রুবিন্দু।
একটি, দুটি... তারপর টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে।

"হে আল্লাহ্‌, আমি কিছু নই।
আমি শুধুই ত্রুটিপূর্ণ এক বান্দা।
তবু এই চোখের অশ্রুগুলো
তোমারই প্রেমের জন্য।
তুমি যেন এগুলো কবুল করো।
একদিন এই অশ্রুগুলো দিয়ে জান্নাতের দরজা খুলে দাও।"

রাতের নিস্তব্ধতায় ভেসে যায় তার দোয়া।
মহান রব নিশ্চয়ই শুনছেন।

সওগাতের অন্তরভাষ্য
(
গদ্য-কবিতা)

সওগাত ভূঁইয়া ভালোবাসে।
ভালোবাসে প্রচণ্ড, অপরিসীম, নিরবধি।
তবু সেই ভালোবাসার কথা সে মুখ ফুটে বলে না।
তার ভালোবাসার ঠিকানা রক্তমাংসের কোন মানুষ নয়
সে ভালোবাসে অন্তর দিয়ে, গভীর গোপনে,
মহান স্রষ্টার সন্তুষ্টির আশায়, জান্নাতুল ফেরদাউসের নয় শুধু,
বরং সেই অশেষ, অমলিন দীদারের আশায়
যা সকল চাহিদার ঊর্ধ্বে।

কিন্তু পথটি সহজ নয়।
ইবলিস শয়তান তার ছায়া মেলে দেয় প্রতিটি পদক্ষেপে।
কখনো অহংকারের ছলে, কখনো প্রবৃত্তির মোহে
সে সওগাতকে পথভ্রষ্ট করে দিতে চায়।

তবু সওগাত নত মাথায় ফিরে আসে।
বারবার ফিরে আসে অশ্রুসিক্ত অন্তর নিয়ে,
স্রষ্টার সন্তুষ্টির পথে, পরম আলোকের পথে।
সে জানেএই ফিরে আসার পথটাই প্রেমের প্রকৃত পরীক্ষাকেন্দ্র।


"ফিরে আসার পথ"

রাত গভীর।
চাঁদ ঝুলে আছে জানালার ধারে।
সওগাত ভূঁইয়া চোখ মেলছে নামন তার রুদ্ধ এক দ্বার।

আজও সারাদিন কেটে গেছে সংসারের হিসেব-নিকেশে,
আড়ালে কোথায় যেন এক চাপা হাহাকার।

প্রেম...
সে যে কতটা ভালোবাসে, তা কাউকে বলতে পারে না।
না, কোনো রমণী নয়, কোনো মানুষ নয়
তার এই ভালোবাসা প্রবাহিত হয় ঈশ্বরের দিকে, রবের দিকে।

সে ভাবে
"
হে প্রভু, তুমিই তো জানো আমার অন্তরের সব কথা।
তোমার সন্তুষ্টি ছাড়া আমার কিছুই চাইবার নেই।
জান্নাতের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যও নয়
আমি চাই তুমিই, একমাত্র তুমিই।"

কিন্তু এই অন্তরের কথা বলার আগেই
ইবলিস তার পথ আগলে দাঁড়ায়।
কখনো অলসতা এনে দেয়,
কখনো মনে করায়
"
এত পুণ্যবান হওয়ার ভান কেন? তুমিও তো পাপী!"

সওগাতের অন্তর টলে ওঠে।
কিন্তু সে জানে
ফিরে আসার দ্বার কখনো বন্ধ হয় না।

আজ রাতে সে সিজদায় পড়ে যায়।
কাঁদতে কাঁদতে বলে
"
হে আমার রব,
আমি জানি না কতবার ফিরে ফিরেই তোমার কাছে আসি।
তবু তুমিই তো বারবার ডাকো
ফিরে এসো, ফিরে এসো।
এই ডাকে সাড়া দিয়েই আবার এলাম।
আমার এই অক্ষম ভালোবাসা তুমি গ্রহণ করো।"

চোখের কোণে অশ্রু।
বুকে এক অপার শান্তি।
সওগাত জানে
এটাই তার প্রেমের প্রকৃত ভাষা।


"ভালোবাসার কথা বলা যায় না"

সওগাত চুপচাপ হাঁটে।
মানুষের ভিড়ের ভেতরেও সে একা।

চারপাশে সবাই ব্যস্ত
কারো চোখে সংসারের ঝলমলে স্বপ্ন,
কারো মনে গোপন প্রলোভন।
সওগাত ভাবে
"
আমি কোথায় যাচ্ছি? কোথায় আমার রব?"

তার বুকের ভেতর গুমোট হয়ে থাকে এক অফুরন্ত ভালোবাসা।
কিন্তু এই ভালোবাসা কাউকে বলা যায় না।

কাকে বলবে সে?
বন্ধুকে? সে হাসবে।
পরিজনকে? তারা বুঝবে না।

এই ভালোবাসা তো ভাষার ঊর্ধ্বে।
ভালোবাসার উৎস এক অদৃশ্য আহ্বান,
আত্মার গহীনে যে শব্দহীন ডাক বাজে
"
ফিরে এসো আমার দিকে।"

কিন্তু ইবলিস তাড়া করে ফেরে।
"
তোমার মতো পাপী কী করে রবকে ভালোবাসতে পারে?"
"
তুমি তো পথভ্রষ্ট, ফিরে গিয়ে কী হবে?"
"
আরও তো অনেক কিছু পাওয়ার আছে দুনিয়ায়!"

সওগাত কেঁপে ওঠে।
কিন্তু আবার সামলে নেয় নিজেকে।

প্রেম তো পাপমুক্ত নয়, প্রেম তো লড়াইয়ের নাম।
সে জানেমহান আল্লাহ্কাউকে ফিরিয়ে দেন না।
তিনি তো পাপীর কান্নাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।

রাতে বিছানায় শুয়ে সওগাত চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে
"
হে আমার রব,
আমার এই বোবা ভালোবাসা তুমি বুঝে নিও।
আমি পারি না জিভে প্রকাশ করতে,
আমি শুধু অনুভব করিঅন্তর দিয়ে।"

তারপর অজান্তেই চোখে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু।
আকাশের তারা জানে, চাঁদ জানে
সওগাত ভূঁইয়া ভালোবাসে।
ভালোবাসে প্রচণ্ড, অপরিসীম।
তবে বলা যায় না...


"শয়তানের কৌশল ঈমানের পুনরুদ্ধার"

দুই দিন ধরে সওগাত অস্থির।
মনে হয় যেন কিছুতেই মন বসছে না।

ইবলিস চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে।
নানান কথা শোনায়
"
এই যে দেখো, তুমি তো তেমন ধার্মিকও নও,
তাহলে কেন এত ফিরে ফিরে যাও আল্লাহর দিকে?"

"আজ একটু গাফিল হও, কাল ঠিক সিজদায় পড়ে যেও।"

"দুনিয়া তো তোমার কিছু চায়, ওই দিকেই মন দাও।"

সওগাত জানেএইসব কথা ফাঁদ।
তবু মন দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাকে টেনে নিয়ে যায় অলসতায়, গুনাহের দিকে।

কিন্তু এইবার একটা ছোট্ট শব্দ সওগাতকে থামিয়ে দেয়
"
আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম।"
"
আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর কাছে, বিতাড়িত শয়তান থেকে।"

সওগাত মনে মনে এই বাক্য জপতে থাকে।
জপতেই থাকে...
একসময় বুকের মধ্যে এক রকম স্থিরতা আসে।

সে ভাবে
"
না, আমি এভাবে হারতে পারি না।"
"
আমার প্রেম তো ছোটখাটো নয়
প্রেম তো স্রষ্টার দিকে, অনন্তের দিকে।"

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে,
সে অজু করে নেয়,
একটা পবিত্রতা ছড়িয়ে পড়ে মন-দেহে।

তারপর সে সিজদায় যায়।
এই সিজদাই তার সবচেয়ে বড় যুদ্ধক্ষেত্র।

কান্না আসে।
আবার বলে
"
হে আমার রব,
আমি জানি, শয়তান আমায় বিপথে নিতে চায়।
তুমি আমাকে শক্তি দাওযেন ফিরে ফিরে তোমার পথেই চলি।
আমার প্রেমকে তুমি অটুট রাখো।
আমার অন্তরের বাতি যেন নিভে না যায়।"

সিজদা থেকে উঠতে উঠতে সওগাতের মনে হয়
সে জিতেছে।
এখনও তো সে ফিরে আসে,
তবেই তো প্রেম আছে।
আর প্রেম মানেইলড়াই, ফিরে আসা, রবের দিকে ছুটে চলা।


 "সওগাতের প্রার্থনার রাত"

রাত গভীর হয়েছে।
চারদিকে নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।
শহরের আলো নেভার মুখে।
কিন্তু সওগাতের অন্তরে জেগে উঠেছে এক অন্যরকম আলো।

আজ অনেক দিন পর,
সে ঠিক করেছেরাতের প্রার্থনায় বসবে।
এই রাত শুধু তার,
এই রাত তার প্রেমিক রবের নামে।

অজু করে সে নিজের ঘরটাকে ছোট্ট মসজিদ বানিয়ে নেয়।
একটা সুগন্ধি চাদর বিছিয়ে দেয় জায়নামাজে।
আকাশের চাঁদ জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে থাকে।

সওগাত দাঁড়িয়ে যায় নামাজে।
আল্লাহু আকবার।
এই বাক্য উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দুনিয়া যেন ফিকে হয়ে যায়।

সে পড়ে
"
ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া ইয়্যাকা নস্তাঈন।"
"
কেবল তোমারই ইবাদত করি, কেবল তোমারই সাহায্য চাই।"

এই বাক্য তার ভিতরটা ভিজিয়ে দেয়।
সে ভাবে
"
হে আল্লাহ্‌, তো কেবল বাক্য নয়,
আমার হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি।"

সিজদায় গিয়ে ফুপিয়ে ওঠে সওগাত।
চোখের পানি মিশে যায় কার্পেটের আঁশে।

"হে আমার রব,
তুমি জানো আমার সবকিছু।
তুমি জানো, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি,
তোমার সন্তুষ্টির জন্যই আমার প্রতিটি শ্বাস।"

"তবু আমি দুর্বল।
তোমার দ্বারে ফিরে আসতে আসতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
আমার এই পথ চলাকে তুমি সহজ করে দাও।
আমার এই প্রেমটাকে তুমি গ্রহণ করো।
আমার অন্তর যেন শুধু তোমার নামেই সিক্ত থাকে।"

সময় চলে যায়।
নামাজ শেষে সওগাত আবার বসে পড়ে জায়নামাজে।
চোখ বন্ধ করে শুধু আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌, আল্লাহ্‌…” জপতে থাকে।

রাতের গভীর নির্জনতায় সওগাত বোঝে
এই প্রার্থনার রাতই তার আসল মুক্তির রাত।

যতই শয়তান টেনে নামাক,
যতই পৃথিবীর মোহ হাতছানি দিক
সে আবার ফিরে আসবে।
আবার প্রেম নিবেদন করবে।
আবার সিজদায় ভিজিয়ে দেবে হৃদয়ের অশ্রু।

এই তো তার পথ।
এই তো তার প্রেম।
সওগাত রবের মাঝে এক অনন্ত বন্ধনের গল্প।


🌿 ফিরে আসার গল্পখণ্ড

"ফিরে আসার সংকল্প"

সওগাত একদিন আয়নায় তাকিয়ে থাকে।
নিজের চোখের দিকে তাকায় অনেকক্ষণ।
আয়নায় কি শুধু চেহারা দেখা যায়?
নাআয়নায় নিজের আত্মাটাকেও দেখে সওগাত।

একটা প্রশ্ন তার বুকের মধ্যে বাজে
"
আমি কেমন হয়ে গেলাম?
কতদিন সত্যিকারের তাওবা করিনি,
কতদিন সিজদায় মন খুলে কাঁদিনি!"

বুকটা হাহাকার করে ওঠে।
"
আমার রব তো ডেকেই চলেছেন।
কেন আমি বারবার পিছিয়ে পড়ি?"

আজকের রাতেই সে একটা সংকল্প নেয়।
ফিরে আসার সংকল্প।

"হে আল্লাহ্‌, আজ রাত থেকে আমি নতুন করে শুরু করবো।
নতুন এক সওগাত হয়ে তোমার দিকে ফিরবো।
তোমার রহমতের দরজা কখনো বন্ধ হয় না
কথা আমি বিশ্বাস করি।
আজও তোমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলছি
আমার এই ভাঙা মনটুকু তুমি গ্রহণ করো।"

সে একে একে নিজের গুনাহের কথা মনে করে।
প্রত্যেকটা গুনাহর জন্য চোখ ভিজে ওঠে।
"
হে প্রভু, আমি সত্যিই লজ্জিত।
আমি বারবার পাপ করেছি, কিন্তু তুমি তবুও আমায় ছেড়ে দাওনি।
আজ আমি ফিরে আসছিএইবার যেন টিকেই থাকতে পারি তোমার পথে।"

একটা পুরোনো নসিহতের কথা মনে পড়ে সওগাতের
"
প্রকৃত তাওবা মানে ফিরে যাওয়া নয়
নতুন করে হাঁটা শুরু করা, একেবারে ভেতর থেকে।"

এই কথা হৃদয়ে গেঁথে নিয়ে সওগাত আবার অজু করে।
নামাজে দাঁড়ায়।
সিজদায় পড়ে গিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে
"
আমার এই ফিরে আসা তুমি কবুল করো, হে আল্লাহ্
আমাকে এমন করে রাখো
যেন আর কোনোদিন ফিরে যেতে না হয় অন্ধকারের পথে।"

রাত শেষ হয়, ফজরের আযান হয়।
নতুন সূর্য ওঠে।
সওগাত জানে
আজকের সূর্য শুধু নতুন দিনের সূর্য নয়
এক নতুন পথযাত্রার সূর্য।
ফিরে আসার গল্প আজ নতুনভাবে শুরু হলো।


🌿 ফিরে আসার গল্পখণ্ড

"সওগাত রবের কথোপকথন"

রাত গভীর।
সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিন্তু সওগাতের চোখে ঘুম নেই।

সে একা বসে রয়েছে জায়নামাজে।
চোখ বন্ধ করে, বুকের মধ্যে তোলপাড় এক অনুভূতি।

এইবার সে কথা বলতে শুরু করেতার রবের সঙ্গে।

"হে আল্লাহ্‌, তুমি কি আমাকে শুনছো?"
মন থেকে যেন এক কোমল উত্তর আসে
"
আমি তো সবসময় শুনি, হে আমার বান্দা।"

"তুমি জানো, আমি কত দুর্বল।
আমি বারবার ভুল করেছি।
তবু কেন তুমি আমাকে ডেকেই চলো?"

"কারণ তুমি আমারই সৃষ্টি।
আমি চাই না তুমি হারিয়ে যাও।
তোমার এই ফিরে আসার আকুলতা,
তোমার অশ্রুই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়।"

"কিন্তু শয়তান আমাকে কাঁদায়, ফিসফিসায়
'
তুমি তো পাপী, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন না।'"

"সে তো মিথ্যাবাদী।
আমি বলেছি
হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর সীমা অতিক্রম করেছে,
তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।
তুমি কেন নিরাশ হবে?"

"তাহলে তুমি কি সত্যিই আমাকে ক্ষমা করবে?"
"
আমি ক্ষমা করতে ভালোবাসি।
তুমি ফিরে এসেছোএটাই তো আমার ভালোবাসার নিদর্শন।"

"আমি তো খুব ভালোবাসি তোমাকে,
কিন্তু পারি না সবসময় ইবাদতে লেগে থাকতে।
আমার অন্তর খারাপ হয়ে যায় মাঝে মাঝে।"

"ভালোবাসা মানে তো যুদ্ধও বটে।
যুদ্ধ করো নিজের প্রবৃত্তির সঙ্গে, শয়তানের সঙ্গে।
যতবার পড়বে, ততবার উঠে দাঁড়াও।
আমি তোমার পাশে আছি।"

"আমি কি তোমার দীদার পাবো একদিন?"
"
যদি তুমি এই ভালোবাসা নিয়েই মরো,
তাহলে অবশ্যই।
আমার কাছে আসবে হাসিমুখে।"

সওগাতের চোখ ভিজে যায়।
সে ফিসফিস করে
"
হে আল্লাহ্‌, তুমি আমাকে ধরে রেখো।
আমি যেন আর কখনো তোমার দরজা ছেড়ে দূরে না যাই।"

অন্তরের গহীন থেকে যেন উত্তরের ছোঁয়া আসে
"
এসো, এসো আমার দিকে।
আমি আছি, সবসময় আছিতোমার অপেক্ষায়।"

রাতের শেষ প্রহর।
ফজরের আজান ভেসে আসে দূরে।

সওগাত জানে
সে আজ আরও এক ধাপ এগিয়েছে ফিরে আসার পথে।
এই প্রেম আর থামবে না, এই পথ আর ছেড়ে যাবে না।

🌿 "অন্তরের অশ্রুর ডায়েরি"

আজকের রাতটা অদ্ভুত।
সওগাতের ভেতরটা যেন কান্নায় ভেসে যাচ্ছে।
কোনো কারণ নেই
আসলে আছে, কিন্তু মুখে বলা যায় না।

এই তো অন্তরের অশ্রুর ডায়েরি খুলে বসেছে সে।

"হে আমার রব,
তুমি কি জানো, আজ আমি কত ভেঙে পড়েছি?
তুমি কি জানো, আজ আমি নিজেকে কতটা অপূর্ণ মনে করছি?"

মন থেকে যেন নরম এক সাড়া আসে
"
আমি তো সব জানি, হে আমার বান্দা।"

"আমি মানুষদের মাঝে থাকি,
কিন্তু আমার মনে তীব্র এক শূন্যতা।
সব পেয়েও কিছু যেন নেই।
শুধু তোমার নাম উচ্চারণ করলেই মনে শান্তি আসে।"

"কিন্তু কেন জানি, আমি সেই নাম ভুলেই থাকি দিনের বেশিরভাগ সময়।
আমার এই ভুল ক্ষমা করো।
আমার এই মনটাকে তুমি ঠিক করে দাও।"

চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
সে ডায়েরিতে লিখে
"
হে আল্লাহ্‌, আজকের অশ্রু আমি তোমার জন্যই উৎসর্গ করছি।
তুমি ছাড়া আমি আর কাউকে ভালোবাসতে পারি না।
আমার সমস্ত পাপ, সমস্ত ব্যর্থতা
তোমার রহমতের মাঝে গলে যাক।"

"আমি জানি না আমার ভবিষ্যৎ কী।
জানি না আমি কতদিন ইবাদতে টিকে থাকবো।
তবু আমি এতটুকু চাই
তুমি যেন আমায় ছেড়ে দিও না।
আমার অন্তরের বন্ধ দরজাটা খুলে রাখো।
আমার হৃদয়ের বাতিটা জ্বলতে দাও, কেবল তোমার আলোয়।"

রাত শেষ দিকে।
সওগাত জানে
এই ডায়েরির সব অশ্রু, সব কথা তার রব শুনেছেন।
তিনিই তো অল-সামিওনসর্বশ্রোতা।

শেষ লাইনে সে লেখে
"
হে আল্লাহ্‌, এই অশ্রুর ডায়েরিটা তুমি রেখে দিও।
একদিন যখন তোমার সামনে দাঁড়াবো,
এই চোখের জলই যেন সাক্ষী হয়
'
এই বান্দা তোমাকে ভালোবাসতো,
হোঁচট খেতো, তবু ফিরে ফিরেই আসতো।'"


🌿 ফিরে আসার গল্পখণ্ড

"অন্তরের অশ্রুর ডায়েরি"

আজকের রাতটা অদ্ভুত।
সওগাতের ভেতরটা যেন কান্নায় ভেসে যাচ্ছে।
কোনো কারণ নেই
আসলে আছে, কিন্তু মুখে বলা যায় না।

এই তো অন্তরের অশ্রুর ডায়েরি খুলে বসেছে সে।

"হে আমার রব,
তুমি কি জানো, আজ আমি কত ভেঙে পড়েছি?
তুমি কি জানো, আজ আমি নিজেকে কতটা অপূর্ণ মনে করছি?"

মন থেকে যেন নরম এক সাড়া আসে
"
আমি তো সব জানি, হে আমার বান্দা।"

"আমি মানুষদের মাঝে থাকি,
কিন্তু আমার মনে তীব্র এক শূন্যতা।
সব পেয়েও কিছু যেন নেই।
শুধু তোমার নাম উচ্চারণ করলেই মনে শান্তি আসে।"

"কিন্তু কেন জানি, আমি সেই নাম ভুলেই থাকি দিনের বেশিরভাগ সময়।
আমার এই ভুল ক্ষমা করো।
আমার এই মনটাকে তুমি ঠিক করে দাও।"

চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
সে ডায়েরিতে লিখে
"
হে আল্লাহ্‌, আজকের অশ্রু আমি তোমার জন্যই উৎসর্গ করছি।
তুমি ছাড়া আমি আর কাউকে ভালোবাসতে পারি না।
আমার সমস্ত পাপ, সমস্ত ব্যর্থতা
তোমার রহমতের মাঝে গলে যাক।"

"আমি জানি না আমার ভবিষ্যৎ কী।
জানি না আমি কতদিন ইবাদতে টিকে থাকবো।
তবু আমি এতটুকু চাই
তুমি যেন আমায় ছেড়ে দিও না।
আমার অন্তরের বন্ধ দরজাটা খুলে রাখো।
আমার হৃদয়ের বাতিটা জ্বলতে দাও, কেবল তোমার আলোয়।"

রাত শেষ দিকে।
সওগাত জানে
এই ডায়েরির সব অশ্রু, সব কথা তার রব শুনেছেন।
তিনিই তো অল-সামিওনসর্বশ্রোতা।

শেষ লাইনে সে লেখে
"
হে আল্লাহ্‌, এই অশ্রুর ডায়েরিটা তুমি রেখে দিও।
একদিন যখন তোমার সামনে দাঁড়াবো,
এই চোখের জলই যেন সাক্ষী হয়
'
এই বান্দা তোমাকে ভালোবাসতো,
হোঁচট খেতো, তবু ফিরে ফিরেই আসতো।'"

🌿 ফিরে আসার গল্পখণ্ড

"নতুন পথের সকাল"

রাত পার হলো অশ্রুতে, দোয়ায়।
ফজরের আযান ভেসে এলো।

সওগাত উঠে দাঁড়াল অজু করতে।
ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুতে গিয়ে মনে হলো
"
এই পানি যেন আমার পাপও ধুয়ে দিচ্ছে।"

তারপর দাঁড়ালো নামাজে।
প্রথম তাকবিরেই মনে হলো
"
আজ আমি নতুন এক সওগাত।"

নামাজ শেষে বাইরে বের হলো।
সূর্য উঠছে ধীরে ধীরে।
আকাশের লালচে রঙে সওগাতের মনও ভরে উঠছে।

"হে আল্লাহ্‌, আজকের সকাল আমার নতুন জীবনের সকাল।
গতরাতের কান্না, তাওবাআজ আমাকে নতুন করে গড়ে তুলুক।"

সে মনে মনে সংকল্প করে
"
আজ থেকে আমি আমার প্রতিদিনকে ইবাদতের দিন বানাবো।
আমার প্রতিটি কাজে তোমার সন্তুষ্টি খুঁজে নেবো।
তোমার নামে দিন শুরু করবো, তোমার নামেই শেষ করবো।"

পথে যেতে যেতে মুখে জপতে থাকে
"
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লাহ, আল্লাহু আকবার..."

আকাশের পাখিগুলোও যেন তাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়
"
দেখো, আমরাও তো আল্লাহর তাসবীহ্করছি।"

এভাবে নতুন পথে, নতুন সকালে সওগাত এগিয়ে চলে।
পেছনে পড়ে থাকে গুনাহর রাতগুলো।
সামনে জ্বলজ্বল করে
রবের দিকে ফিরে যাওয়ার অসীম আলো।

"হে আল্লাহ্‌, তুমি সাক্ষী থেকো
আমি আজ নতুন করে তোমার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
আমার এই পথ চলাকে তুমি সহজ করে দাও।
আমার প্রেম যেন কখনো নিভে না যায়।"


"নতুন পথের সকাল"

রাত পার হলো অশ্রুতে, দোয়ায়।
ফজরের আযান ভেসে এলো।

সওগাত উঠে দাঁড়াল অজু করতে।
ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুতে গিয়ে মনে হলো
"
এই পানি যেন আমার পাপও ধুয়ে দিচ্ছে।"

তারপর দাঁড়ালো নামাজে।
প্রথম তাকবিরেই মনে হলো
আজ আমি নতুন এক সওগাত।

নামাজ শেষে বাইরে বের হলো।
সূর্য উঠছে ধীরে ধীরে।
আকাশের লালচে রঙে সওগাতের মনও ভরে উঠছে।

"হে আল্লাহ্‌, আজকের সকাল আমার নতুন জীবনের সকাল।
গতরাতের কান্না, তাওবাআজ আমাকে নতুন করে গড়ে তুলুক।"

সে মনে মনে সংকল্প করে
"
আজ থেকে আমি আমার প্রতিদিনকে ইবাদতের দিন বানাবো।
আমার প্রতিটি কাজে তোমার সন্তুষ্টি খুঁজে নেবো।
তোমার নামে দিন শুরু করবো, তোমার নামেই শেষ করবো।"

পথে যেতে যেতে মুখে জপতে থাকে
"
সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার..."

আকাশের পাখিগুলোও যেন তাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়
"
দেখো, আমরাও তো আল্লাহর তাসবীহ্করছি।"

এভাবে নতুন পথে, নতুন সকালে সওগাত এগিয়ে চলে।
পেছনে পড়ে থাকে গুনাহর রাতগুলো।
সামনে জ্বলজ্বল করে
রবের দিকে ফিরে যাওয়ার অসীম আলো।

"হে আল্লাহ্‌, তুমি সাক্ষী থেকো
আমি আজ নতুন করে তোমার দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
আমার এই পথ চলাকে তুমি সহজ করে দাও।
আমার প্রেম যেন কখনো নিভে না যায়।"


🌿 ফিরে আসার গল্পখণ্ড

"প্রেম মানেই ফিরে আসা"

প্রেম কি?
শুধু কাছাকাছি থাকা?
শুধু দৃষ্টিতে দেখা?
নাপ্রেম মানে ফিরে আসা।

সওগাত এটা আজ গভীরভাবে বুঝে গেছে।
বারবার ভুল করেছে সে।
বারবার পাপের অন্ধকারে ডুবে গেছে।

কিন্তু একেকটা ফিরে আসা
তাতে ছিল কান্না, ছিল লজ্জা, ছিল আকুলতা।
আর ছিল অথৈ প্রেম।

"হে আল্লাহ্‌, তুমি কি জানো,
আমি কেন বারবার ফিরে আসি?
আমি জানিআমি দুর্বল, আমি পাপী।
তবু এই অন্তরে এক অদৃশ্য শক্তি টেনে আনে আমাকে।
এই টানটাই তো প্রেম।"

"প্রেম মানেই ফিরে আসা, ফিরে ফিরে ফিরে আসা।
যতই দূরে যাই, যতই অন্ধকারে পড়ি
তোমার প্রতি ভালোবাসা আমায় ফেরায়।

তুমি তো আছো, সবসময় আছো।
আমার সমস্ত অপরাধ জানার পরেও
তুমি বলে ওঠো:
'
এসো হে আমার বান্দা, আমি আছি, আমি অপেক্ষা করছি।'

এই অপেক্ষা, এই ডাক
এটাই তো প্রেমের সর্বোচ্চ রূপ।
এটাই তো সেই ভালোবাসা, যেখানে বিচার নেই
আছে শুধু দয়ার সাগর।

"হে আমার রব,
আমি তো আসলে তোমারই প্রেমিক।
তুমি ছাড়া আমার কিছু নেই।
তোমার প্রেমেই বাঁচি, তোমার প্রেমেই মরি।
আর এই প্রেমই আমায় বারবার তোমার দিকে নিয়ে আসে।"

**প্রেম মানেই ফিরে আসা।
প্রেম মানেই হারিয়ে আবার খুঁজে পাওয়া।
প্রেম মানেই কান্নায় গলে যাওয়া।
প্রেম মানেই বলা
"
হে আল্লাহ্‌, আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি।"

 তুমি ছাড়া আমার কিছু নেই।
তোমার প্রেমেই বাঁচি, তোমার প্রেমেই মরি।
আর এই প্রেমই আমায় বারবার তোমার দিকে নিয়ে আসে।"

প্রেম মানেই ফিরে আসা।
প্রেম মানেই হারিয়ে আবার খুঁজে পাওয়া।
প্রেম মানেই কান্নায় গলে যাওয়া।
প্রেম মানেই বলা
"
হে আল্লাহ্‌, আমি তো তোমাকেই ভালোবাসি।"


"পথ হারানো, আবার পথ খোঁজা"

কিছুদিন ভালোভাবে চলছিল সওগাত।

কিন্তু হঠাৎ একদিন আবার হারিয়ে গেলো।
কোনো এক মুহূর্তের দুর্বলতায় গুনাহের পথে পা বাড়ালো।

পরে গভীর অনুশোচনায় ডুবে যায়।

"হে আল্লাহ্‌, আমি জানি, তুমি দয়ার সাগর।
আমি কি আর ফিরে আসতে পারি?
তুমি কি আমাকে গ্রহণ করবে?"

আন্তরের গহীনে উত্তর আসে
"
হে বান্দা, আমি তো ক্ষমাকারী।
ফিরে এসো।"

সওগাত আবার পথ খোঁজে।
এই ফিরে আসার নামই তো প্রেম।


 

ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১০

আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি


আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি,
তুমি যে নেই দেখা ভুবনের কোনো কোণে,
তবু আমার হৃদয় যেন তোমার নামেই কথা বলে,
তোমার স্পর্শেই যেন জীবন জ্বলজ্বল করে।

সওগাতের মুখ থেকে ঝরে পড়ে একান্ত প্রেমের গীত,
আলোর পথ দেখাও, হে আমার প্রিয় রবের বাণী,
তুমি ছাড়া আর কিছু চাওয়া নেই জীবনের আঙিনায়,
তুমি ছাড়া কোনো অন্তর আমি সাজাই না কখনোই।

তোমার রহমতেই ভরে আমার পরান,
তোমার নামেই আমি বাঁচি, তোমার আদরে ধুয়ে যাই দুঃখের ছায়া,
হৃদয়ের গভীরতম কোণে বাজে শুধু তোমার সুর,
আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসিআল্লাহ, আমার অনন্ত প্রিয়।


 ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১০

জীবনের শেষ তাওবা


বয়সের আঙিনায় এসে,
হারিয়ে যাওয়া দিনের স্মৃতিতে জড়িয়ে,
অন্তর বলে শেষ বার্তা
আমার জীবনের শেষ তাওবা তোমার কাছে।

অজস্র ভুলের ভারে আমি দমবন্ধ,
তবু তোমার রহমতে আশা জাগে,
হৃদয়ের গভীর গহীনে,
এক টুকরো আলো দাও আমাকে।

প্রার্থনা আমার শেষ যাত্রার সঙ্গী,
তোমার করুণা যেন মুছে দেয় সব পাপের আঁধার,
জীবনের শেষ মুহূর্তে আমার বিনীত আরজি
তুমি হে সর্বদাতা, আমাকে ক্ষমা করো।

অন্তিম নিঃশ্বাসে বাজুক শুধু তোমার নাম,
সত্যের পথে আমি হাঁটবো অবিরাম,
এই আমার শেষ তাওবা, জীবনের শেষ প্রার্থনা,
তুমি ছাড়া নেই কেউ, আমার আকাশ, আমার জমিন।



  ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১০ এর তৃতীয় অংশ

রবের নিকটের পথিক


রাত্রির নিস্তব্ধতায় জেগে ওঠে এক পথিক,
সমস্ত ধূলো ঝেড়ে, সমস্ত মোহ ভেঙে,
হেঁটে চলে অনন্তের পথে
যেখানে শুধু রবের সান্নিধ্য জাগে।

নির্জন পথের একাকী সওগাত,
কাঁধে প্রায়শ্চিত্তের ভার, হৃদয়ে অনুতাপের সুর,
পিছনে ফেলে এসেছে গ্লানির দিনগুলো,
এগিয়ে চলে আলোর আহ্বানে।

প্রতিটি পদক্ষেপে এক নতুন তাওবা,
প্রতিটি নিশ্বাসে রবের নাম,
জীবনের অনিত্যতা বুঝে,
চলেছে সে এক অনন্ত পথের দিকে।

পথের শেষে নয় কোনো রাজমহল,
নয় কোনো বাহ্যিক জয়গান,
শুধু চায় একটুখানি চাহনি
রবের করুণাময় দৃষ্টির ছোঁয়া।

আমি সওগাত, আমি এক পথিক
রবের নিকটের পথে চলা,
পড়ে আছি কখনো ক্লান্ত, কখনো জেগে,
তবু ফিরবো না আর পেছনে।

এই অন্তরের ডাক, এই নীরব আকুতি,
আমার প্রিয় রব, আমায় গ্রহণ করো,
তোমার নিকটে ফিরতে চাই বারেবারে,
আমি তো কেবল এক পথিকতুমিই আমার ঠিকানা।


ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১১

নতুন ভোরের প্রার্থনা


ভোরের প্রথম আলোয়,
যখন দিগন্ত জেগে ওঠে নরম আলোয়,
সওগাত বসে থাকে নিভৃতে
নতুন দিনের নতুন প্রার্থনায়।

কাল রাতের ভুলগুলো রেখে গেছে ভারী নিশ্বাস,
মনজুড়ে অপরাধবোধের কুয়াশা,
তবু নতুন ভোর যেন
রবের পক্ষ থেকে এক অনন্ত সুযোগ।

হে আমার রব,” — ফিসফিসিয়ে ওঠে কণ্ঠ,
আজকের দিনটা নিখুঁত না হোক, অন্তত সত্যের পথে রাখো,
আজকের প্রতিটি নিঃশ্বাসে যেন তোমার সন্তুষ্টির সুবাস থাকে।

দুঃখ আর ক্লান্তির পাহাড় পেরিয়ে,
এই সকাল যেন নূরের নতুন দ্বার,
প্রার্থনা গুনগুনায়
"
তুমি ছাড়া নেই কোনো আশ্রয়, নেই কোনো গন্তব্য।"

এই প্রার্থনায়ই গড়ে তোলে নতুন সওগাত,
প্রতিদিন একটু একটু করে গলে পাপের শিকল,
প্রতিদিন একটু একটু করে জন্ম নেয় নতুন বিশ্বাস,
আর এইভাবেই একদিন সে হয়ে উঠবে পুরোপুরি ফিরে আসা এক আত্মা।


 ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১২

স্মৃতির কাছে ক্ষমা


তোমরা যারা ছিলে আমার গতকাল,
তোমরা যারা ছিলে হৃদয় ছেঁড়া অতীত
আজ এই ভোরের ছায়ায় দাঁড়িয়ে
তোমাদের কাছে আমি চাই ক্ষমা।

আমি ছিলাম এক বেপরোয়া পথিক,
ভুলের আঁধারে বারবার হারিয়েছি পথ,
কত চেনা মুখ কাঁদিয়েছি অজান্তে,
কত অনুতপ্ত রাত কেটেছে তার হিসেব নেই।

আজ তোমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলি
"
ক্ষমা করো আমাকে।"
সে ভুলের, সে ঔদ্ধত্যের, সে ভালোবাসাহীন সময়ের,
যেখানে রবকেও হারিয়ে ফেলেছিলাম হৃদয়ের গহীনে।

প্রিয় স্মৃতি,
তুমি তো কতটা মধুর ছিলে একদিন,
আজ তুমিই আমার অপরাধের আয়না
দেখিয়ে দাও কতটা ভেঙেছিলাম আমি নিজেকেই।

তবু আমি আজ ফিরেছি রবের ডাকে,
এই ভাঙা হৃদয় নিয়ে এসেছি তার চৌকাঠে,
তোমরা যদি পারো, ক্ষমা করো,
আর আমার জন্য দোয়া করো
যেন আর কোনোদিন ভুল পথে না যাই।

আজ আমি শুধু রবের প্রেমের পথিক,
হারানো সেই সওগাত আর নেই,
নতুন আশার আলোয় গড়া এক নতুন আমি,
যে প্রতিটি স্মৃতির কাছেই মাথা নত করে বলে
"
ক্ষমা করো আমাকে।"


ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১৩

এক নতুন সওগাত


সে আর আগের সেই সওগাত নয়।
না, সে আর সেই ভাঙা, ক্লান্ত, অপরাধবোধে ভরা পথিক নয়।
আজকের ভোরের আলোয়,
নতুন করে সে চিনেছে নিজেকে
এক নতুন সওগাত।

ভেতরের সমস্ত গ্লানি ধুয়ে গেছে চোখের জলে,
রবের করুণা যেন তার অন্তর ছুঁয়ে দিয়েছে,
মনে জেগেছে এক অপরিসীম প্রশান্তি
"
আমার রব আমাকে ভালোবাসেন।"

আজ সে আর অতীতের বোঝা টেনে চলে না।
ভুলগুলো স্মরণ করে, কিন্তু হৃদয়ে পুষে রাখে না,
বরং শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলে প্রতিটি নতুন দিনে।

প্রতিটি নামাজে, প্রতিটি দোআয়,
সে রবের নিকটে নতুনভাবে সাজায় নিজের আত্মাকে,
প্রত্যেক সেজদায় চায় একটাই কথা
"
হে রব, আমাকে তোমার প্রিয় বানিয়ে নাও।"

মানুষের চোখে হয়তো সে এখনও এক সাধারণ ব্যক্তি,
কিন্তু তার নিজের চোখে সে এক নতুন মানুষ
আলোর পথে ফিরে আসা,
রবের প্রেমে পূর্ণ,
এক নতুন সওগাত।


 ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১৪

কালিমার শক্তি


কালিমার (لا إله إلا الله محمد رسول الله) শক্তিই তো সওগাতের অন্তরকে বদলে দিয়েছে।

"لا إله إلا الله محمد رسول الله"
সওগাতের ঠোঁটের প্রতিটি কাঁপা উচ্চারণে যেন জাগে এক অন্যরকম শক্তি।
কালিমার মাঝে কত বছর ধরে হারিয়ে ছিল তার আত্মা,
আজ সে যেন নতুনভাবে খুঁজে পায় নিজেকে।

এই শব্দগুলো আর শুধু শব্দ নয়,
যেন অন্তরের ঘুম ভাঙানো আঘাত,
একটা ঝড়, একটা বিপ্লব
ভিতর থেকে সমস্ত অন্ধকার সরিয়ে দেয়া এক আলোর ঝলকানি।

"কোনও ইলাহ নেই, শুধু আল্লাহই ইলাহ।"
এই কথাটা আজ তার হৃদয়ে এমনভাবে বসেছে
সমস্ত ভ্রান্ত প্রেম, সমস্ত মিথ্যা মোহ, সমস্ত ক্ষণিকের সুখ
সবই আজ তুচ্ছ।

এখন সে জানে
কেবল এক রব আছেন, যিনি চিরস্থায়ী, করুণাময়, পরম প্রিয়।
এই কালিমার শক্তিতে সওগাত যেন পেয়েছে নতুন পাখা,
এক নতুন বাতাসে ভেসে চলাফিরে আসার পথে অবিচল।

তার প্রতিটি নামাজ আজ গভীর হয়ে উঠেছে,
প্রতিটি দোআয় এই কালিমার সুর বাজে,
"
হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া আর কেউ নেই যার সামনে মাথা নত করবো।"

আজ সওগাত জানে
জীবনের সব হারানো, সব ভাঙাগুলোও মাফ করে দেন এই কালিমার মালিক,
আর এই বিশ্বাসই তাকে গড়ে তুলছে
এক অটুট, রবমুখী, নতুন মানুষ।


 ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১৫

নিজের সঙ্গে সন্ধি


একটা সময় ছিল
সওগাত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করত দিনরাত।
ভিতরের অপরাধবোধ, অশান্তি, হতাশার পাহাড়
তার বুকের ভেতরে বসে থাকত পাথরের মতো।

আজকাল সে বুঝতে শিখেছে
নিজেকেও ক্ষমা করতে হয়।
রব তো ক্ষমাশীল, তাঁর বান্দাকেও নিজেকে ছেড়ে দিতে জানতে হয়।

এই নতুন পথে হাঁটতে হাঁটতে সওগাত একদিন মুখোমুখি হয় নিজেরই ছায়ার
ভুলের, পাপের, অশ্রুর ছায়া।
সে তখন বলে
"
হ্যাঁ, আমি ভুল করেছি। কিন্তু আজ আমি রবের পথে ফিরেছি।"

সেই মুহূর্তেই যেন এক নতুন সন্ধি জন্ম নেয়
নিজের সঙ্গে।
নিজেকে আর দোষারোপ নয়,
নিজেকে আর ছোট নয়,
বরং এক দোআয় নিজেকে বলে
"
চলো, আমরা একসাথে এগিয়ে যাই রবের দিকে।"

এই নিজের সঙ্গে সন্ধির পরেই সওগাতের অন্তর শান্ত হয়,
নামাজে মন বসে,
কুরআনের শব্দে হৃদয় কেঁপে ওঠে।

সে জানে
যত বড় পাপই হোক, রব যদি মাফ করে দেন, তবে নিজেকেও মাফ করে দিতে হবে।
কারণ রব তো সবচেয়ে বড় ক্ষমাশীল।

আজ সওগাত নিজের সঙ্গে সন্ধি করে
এক নতুন জীবন, এক নতুন ভোরের দিকে এগিয়ে চলার সন্ধি।
এই সন্ধিই তাকে দেয় অদম্য সাহস
"
আমি রবের দিকে ফিরে যাচ্ছি, আমি কখনো আর পিছিয়ে যাব না।"


ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১৬

আল্লাহর প্রেমে হারানো এক আমি


আমি আর সেই আগের আমি নই,
আমি আজ আল্লাহর প্রেমে হারানো এক আমি।
এই প্রেম এমন এক সমুদ্রযার কিনারা নেই, গভীরতা মাপার সাধ্য নেই।

একদিন যার চোখে ছিল কেবল দুনিয়ার মোহ,
আজ তার চোখ বেয়ে নামে কেবল রবের প্রেমের অশ্রু।
একদিন যার কানে বাজত কেবল ক্ষণিকের সুখের সুর,
আজ তার কানে বাজে কেবল "আল্লাহু আকবার"এই মহান উচ্চারণ।

কতদিন খুঁজেছি এই ভালোবাসা,
দুনিয়ার নানা দরজায় ঠকঠকিয়েছি,
কিন্তু আজ বুঝেছি
"
আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার প্রেম কোথাও নেই।"

প্রেমে কোনো স্বার্থ নেই, কোনো ক্লান্তি নেই।
প্রতি সেজদায় আমি হারাই নিজেকে,
প্রতি আয়াতে আমি নতুন করে পাই তাঁকে।

আজকের আমি
একটা অশ্রু ভেজা কপাল,
একটা কাঁপা কণ্ঠে কালিমার উচ্চারণ,
একটা তৃষ্ণার্ত হৃদয়যে চায় শুধু রবের নৈকট্য।

"হে আমার রব,"
"
আমি তোমার প্রেমেই হারিয়ে যেতে চাই, ফিরে পেতে চাই না আর দুনিয়ার মোহ।"

এই প্রেমই আজ আমাকে গড়ে তুলছে এক নতুন মানুষ
এক নিরন্তর পথিক, এক প্রেমিক আত্মা,
যে চায় শুধু একটুখানি রবের সান্নিধ্য,
আর কিছুই নয়, আর কিছুই নয়...


ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১৭

প্রতিদিনের তাওবা


সওগাত বুঝে গিয়েছে
ফিরে আসা মানেই পাপমুক্ত হয়ে যাওয়া নয়, বরং পাপের বিরুদ্ধে প্রতিদিনের এক যুদ্ধ।

কত সহজেই মন আবার পুরনো দিকে টানে,
কত সহজেই জিহ্বা, চোখ, কান আবার ভুল পথে চলতে চায়।
তাই সে শিখে নিয়েছে
"
প্রতিদিনের তাওবা, প্রতিমুহূর্তের তাওবা।"

আজ তার সকাল শুরু হয় তাওবা দিয়ে
"
হে আল্লাহ, গতকাল যা করেছি, যা বলেছিযা ছিল তোমার অপ্রিয়ক্ষমা করো।"
সন্ধ্যা নামে নতুন তাওবা নিয়ে
"
হে রব, আজকেও আমি দুর্বল ছিলাম, তুমি ক্ষমা করো, তুমি শক্তি দাও আরও ভালো হতে।"

এভাবেই সওগাত বুঝে গিয়েছে
এই দুনিয়ার যাত্রা এক "অন্তহীন তাওবার পথ"
পাপ করবে মানুষ, ভুল করবে, আবার ফিরে আসবে
এই ফিরে আসার মাঝে লুকিয়ে রবের রহমতের এক মহাসাগর

এখন তার হৃদয়ে একটাই চাওয়া
"
হে রব, আমাকে এমন বানিয়ে দাও যে তাওবায় কখনো ক্লান্ত হবো না।"
"
তোমার কাছে ফিরে আসার দ্বার যেন আমার জন্য সবসময় খোলা থাকে।"

এই প্রতিদিনের তাওবা- বরকতই তাকে আলোকিত করছে,
তাকে প্রতিদিন নতুন এক সওগাত করে তুলছে
ভিতরে আরো নির্মল, আরো রবমুখী।

আজ সে জানে
"
যতবার পড়ে যাই, ততবারই তাওবা করে ফিরে আসবো, হে আমার রব।"
"
তুমি আছো বলেই আমি ভয় পাই নাবারবার ফিরে আসতে।"


ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১৮

রবের ভালোবাসার গল্প


সওগাত জানে
রবের ভালোবাসা কোনো সাধারণ ভালোবাসা নয়।
এটা এমন এক ভালোবাসা, যা দুনিয়ার সমস্ত ব্যথা, সমস্ত দুঃখ
একসাথে মুছে ফেলে।

এই ভালোবাসা তাকে প্রথম টেনে এনেছিল অন্ধকার থেকে আলোর দিকে,
এই ভালোবাসা তাকে ভেঙে ফেলে পুরানো গ্লানি থেকে মুক্ত করে দিয়েছে।

সবার আগে যখন সে রবের ভালোবাসা অনুভব করল,
তার অন্তর থেকে উঠল এক অজানা গান
এক শান্তি, এক মধুর গান যা দুনিয়ার ভাষা ছাড়িয়ে যায়।

রব তার প্রতি চোখ তুলে তাকালেন,
আর সে বুঝলসে কখনো একা নয়।
তার সব ভুল, সব ব্যর্থতা সত্ত্বেও
রব তাকে ভালোবাসেন,
সেই ভালোবাসায় সে জীবনের নতুন শুরু পেয়েছে।

এই ভালোবাসাই তাকে শিখিয়েছে
কীভাবে ধৈর্য ধরতে হয়, কীভাবে ক্ষমা করতে হয়,
আর কীভাবে নিজের অন্তরে এক নতুন সূর্য উদিত হয়।

এই ভালোবাসার ছায়ায় সওগাত আজ নিজেকে পেয়েছে,
এক পথিক, এক প্রেয়সী, এক বন্ধু
যে চায় শুধু রবের সান্নিধ্য,
আর কিছুই নয়।


🕊ফিরে আসার গল্পখণ্ড ১৯

আস্থা ধৈর্য


সওগাতের পথ সহজ ছিল না,
রবের পথে চলা মানে একটানা যুদ্ধ
নিজের আবেগ, নিজের আত্মাকে প্রতিনিয়ত জয় করা।

কিন্তু সে শিখেছে
আস্থা হল সেই শক্তি যা অন্ধকারেও আলো দেখতে শেখায়,
আর ধৈর্য হল সেই বন্ধন যা ধ্বংসের মুখে টিকিয়ে রাখে।

প্রত্যেক বিপদে সওগাতের অন্তর বলত
"
রব আছেন, তাই আমি ভয় পাই না।"
যখন জীবন তাকে কঠিন পরীক্ষা দেয়,
সে তখন আস্থায় চেয়ে থাকে,
ধৈর্যের দোয়ায় নিজেকে শক্ত করে তোলে।

আস্থা তাকে দেখিয়েছে,
যে শুধু রবের হাতে সবকিছু তুলে দিলে,
তার জীবনে শান্তি আসবে, সুখ আসবে।

ধৈর্য তাকে শিখিয়েছে,
যে প্রতিটি অসুবিধার পেছনে আলোর এক ঝলকানি থাকে।
আর সেই আলোর জন্য অপেক্ষা করতেই হবে,
আলোর জন্য ধৈর্য ধরে থাকতে হবে।

আজ সওগাত দাঁড়িয়ে আছে
এক এমন স্থিরতা নিয়ে, যা অতীতের ঝড়-বৃষ্টি কষ্টকে জয় করেছে।
একটি বিশ্বাস দৃঢ়তার সাথে
"
রবের আস্থায় আমি সবকিছু পারবো।"


🕊 ফিরে আসার গল্পখণ্ড ২০

আলোর সন্ধানে


সওগাত পথ চলেছে অন্ধকার থেকে আলোয়ের দিকে।
অন্ধকার ছিল দীর্ঘ,
তবু সে হাল ছাড়েনি,
কারণ তার অন্তর জানত
"
আলো কোথাও আছে, একদিন অবশ্যই পাবে।"

প্রতিদিন নতুন সূর্য তাকে ডাকত,
এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে।
সে আর পিছিয়ে তাকাত না,
তার পায়ের ছাপ রেখেছিল শুধু সামনে এগোয়ার পথে।

আলোর সন্ধানে সে পায় নতুন স্বপ্ন,
নতুন আশা, নতুন ভালোবাসা।
সেই আলোর মাঝে পায় সে নিজের সত্ত্বা,
যা আগে ছিল হারিয়ে যাওয়া এক ধোঁয়াটে কল্পনা।

আলোয় ভেজা তার চোখে স্বপ্নের ঝলকানি,
ভালবাসার অমোঘ শক্তি জাগ্রত হয়,
এক নতুন জীবন শুরু হয়
এক নতুন রবের পথে যাত্রা।

সওগাত জানেআলোর সন্ধান কেবল একবার নয়,
একটি জীবনের সংগ্রাম,
একটি অন্তহীন চেষ্টার নাম।

তবুও সে এগিয়ে চলে,
কারণ সে বিশ্বাস করে
রবের আলো তাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা।


🕊ফিরে আসার গল্পখণ্ড ২১

শেষ পর্ব: পূর্ণ মুক্তি শান্তি


সওগাতের যাত্রা আজ এক নতুন ধাপে পৌঁছেছে।
অন্ধকার ছাড়িয়ে আলোয়, সংকট ছাড়িয়ে শান্তিতে।

এই পথিক আজ বুঝেছে
মুক্তি মানে শুধু দুনিয়ার বন্ধন থেকে মুক্তি নয়,
বরং অন্তরের সমস্ত দ্বন্দ্ব, সমস্ত ভয় অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি।

শান্তি মানে আল্লাহর সাথে এক গভীর মিলন,
যেখানে আর কোনো ব্যথা, কোনো কষ্ট নেই,
শুধু এক গভীর ভালোবাসা স্বীকারোক্তি।

সওগাত জানে
এই শান্তি অর্জন করা কঠিন,
কিন্তু অসম্ভব নয়।
প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি তাওবার জোরে,
সে আজ এক নতুন আমি হয়ে গেছে।

আল্লাহর করুণা তার মুক্তির চাবিকাঠি,
আর বিশ্বাস তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভরসা।

আজ সে বলতে পারে,
"
আমি মুক্ত, আমি শান্ত, আমি আল্লাহর মাঝে।"


🌙 সমাপ্তি

ফিরে আসার গল্পশেষ অনুরোধ


রবের করুণার অপেক্ষা

এই পুরো ফিরে আসার গল্প-এর গভীরে ছিল একটিই অনুভূতিরবের করুণার অপেক্ষা

আমরা কেউই নিখুঁত নই। পাপ আর গাফেলতির পাহাড়ে চাপা পড়ে যাই
কিন্তু একটা কথা সব সময় মনে রাখি
👉 রব কাউকে নিরাশ করেন না।
👉 তাওবাকারী বান্দাকে তিনি আপন করে নেন।

এই বইতে আমি চেষ্টা করেছি একজন অপরাধী অন্তরের ফিরে আসার পুরো পথচলা তুলে ধরতে
আজও আমি তেমনইরবের করুণার অপেক্ষায় থাকা এক ক্ষুদ্র পথিক

আপনারাও থাকুনএই অপেক্ষায়, এই ভালোবাসায়, এই আশায়


📖 "ফিরে আসার গল্প" থেকে জীবনপাঠ

এই গল্পে হয়তো অনেক ত্রুটি আছে।
আমি কোনো আলেম নই, বুযুর্গও নই
শুধু এক পাপী অন্তরের অনুরণন এখানে রেখেছি।

তবু এই গল্প থেকে আমি নিজে কিছু জীবনপাঠ শিখেছি
ফিরে আসার দরজা কখনো বন্ধ হয় না।
প্রতিদিনের তাওবা জীবনভরের চর্চা।
রবের ভালোবাসা কখনো কমে না। বরং আমরাই দূরে সরে যাই।
একাকীত্বও এক বরকতসেখানে রব ডেকে নেন।
জীবনে ধৈর্য, আস্থা, দোয়াএগুলোই বড় রসদ।

আপনারাও হয়তো নিজ নিজ জীবনে এই পথচলার কোনো না কোনো অংশ খুঁজে পাবেন


🕊পাঠকের প্রতি একান্ত আহ্বান

প্রিয় পাঠক,
এই ফিরে আসার গল্প পড়ে যদি আপনার হৃদয়ে একটুখানি স্পর্শ পড়ে
👉 তবে আজই, এখনই, এই মুহূর্তেই রবের দিকে ফিরে আসুন।

👉 আজ যে নিঃশব্দে কাঁদবেন,
👉 আজ যে তাওবার হাত তুলবেন,
👉 আজ যে নামাজে দাঁড়াবেন
কী জানেন? সেই প্রতিটি পদক্ষেপে আপনার রব অপেক্ষায় আছেন।

👉 তাঁর করুণা অপার।
👉 তাঁর ভালোবাসা অবর্ণনীয়।
👉 তাঁর দরজা কখনো বন্ধ হয় না।

আপনার জন্য এই একান্ত অনুরোধজীবনকে এইভাবে সাজান যেন প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক রাতে রবের দিকে আরেকটু করে ফিরে যেতে পারেন
এটাই চেয়েছি এই ছোট্ট বইটির মাধ্যমে মনে করিয়ে দিতে।

আপনার হৃদয়ে আল্লাহর প্রতি নিখাদ ভালোবাসা জাগুকএই দোয়া রেখে শেষ করছি।

 

            আজ এই ফিরে আসার গল্প শেষ করছি, কিন্তু আমার ফিরে আসা শেষ হয়নি
আমি এখনো প্রতিদিন ফিরে আসার পথেই হাঁটছি

কখনো পড়ে যাই, আবার উঠে দাঁড়াই।
কখনো কান্নায় বুক ভাসাই, আবার আশার আলো খুঁজি।
কখনো রবের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কবুল করুন, কবুল করুন...” বলে প্রার্থনা করি।

আপনারাও জানেনকোনো পথ পুরোপুরি শেষ হয় না
তাওবার পথও চিরকালীন চলমান পথ

এই গল্প লিখতে গিয়ে নিজের অনেক পুরনো ক্ষত আবার রক্তাক্ত হয়েছে
আবার অনেক ভুলে যাওয়া ভালোবাসার অনুভূতিও জেগে উঠেছে

সব শেষে এটুকুই বলবো
👉 আমি এখনো অপরাধী, কিন্তু ফিরে আসার আশায় বাঁচি।
👉 আমি এখনো পাপী, কিন্তু তাওবার দুয়ারেই ঘুরেফিরে আসি।
👉 আমি এখনো দূরে, কিন্তু রবের ভালোবাসার প্রতি ক্ষুধার্ত।


🕊শেষ দোয়া

ইয়া আল্লাহ্‌,
এই তুচ্ছ বান্দার এই ছেঁড়া ছেঁড়া কথাগুলো যদি একজন মানুষকেও তাওবার পথে ডেকে আনে
👉 তবে এই কলমের প্রতিটি শব্দ যেন কিয়ামতের দিনে আমার নাজাতের ওসিলা হয়

ইয়া রব্বি,
👉 পাঠকের হৃদয়ে যেন তোমার ভালোবাসার আগুন জাগিয়ে তোলো
👉 তাদেরকেও আমার মতো এক পাপী পথিকের মতো বারবার তাওবার পথে হাঁটার তাওফিক দাও
👉 আমাদের সবাইকে শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত তাওবাগ্রাহী রাখো
👉 কিয়ামতের দিন আমাদের তাওবা কবুল করে আমাদের গুনাহ মাফ করে দাও

ইয়া রব্ব,
👉 *এই লেখার প্রতিটি পাঠক যেন এইফিরে আসার গল্প”-এর কোনো না কোনো অধ্যায়ে নিজেকে খুঁজে পায়,
👉 আর নতুন করে রবের দিকে এক পা এগিয়ে যেতে পারে

আমিন।
সমস্ত প্রশংসা শুধু আল্লাহ্ জন্য।


আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)
📍 রিয়াদ, সৌদি আরব
🕋 ১৪৪৭ হিজরি / ২০২৫ ঈসায়ী

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান

📄 প্রবন্ধ শিরোনাম: “কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান” ✍️ লেখক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)...