নারী জাতির মর্যাদা ও সম্মানের পথে ইসলামের নির্দেশনা
✍️ আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)
সহযোগিতায়: চ্যাটজিপিটি এআই ২০২৫
---
ভূমিকা:
"লজ্জা" (আরবি: الحياء — আল-হায়া) ইসলামি পরিভাষায় এমন একটি গুণ, যা মানুষকে অনৈতিকতা ও গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং চরিত্রবান করে তোলে। ইসলাম নারী ও পুরুষ উভয়কে লজ্জাশীল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, তবে নারীর ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত, কারণ নারী পরিবার ও সমাজের কেন্দ্রবিন্দু।
---
🔸 লজ্জা: ঈমানের অঙ্গ
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
> "লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।"
— সহিহ বুখারী, হাদীস ৯
এই হাদীস স্পষ্ট করে যে, একজন মুসলমান নারী বা পুরুষ, যিনি সত্যিকারের ঈমানদার, তিনি লজ্জাশীল হবেন। আর লজ্জা নারী চরিত্রের সবচেয়ে মূল্যবান অলংকার।
---
🔸 নারীর মর্যাদা কিভাবে রক্ষা পায়:
ইসলাম নারীর জন্য সম্মানজনক ও নিরাপদ একটি পথ নির্ধারণ করেছে। এই পথের মূল দিকনির্দেশনা নিম্নরূপ:
১. পর্দা ও শালীনতা:
> “হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের একটি অংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে, ফলে তারা উত্ত্যক্ত হবে না।"
— (সূরা আহযাব: ৫৯)
🔹 নারী যেন তার দেহ, সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য গোপন রাখে, যাতে সমাজে ফিতনা না ছড়ায় এবং সম্মানহানি না ঘটে।
২. ঘরে অবস্থান করার নির্দেশনা:
> “তোমরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করো এবং পূর্বযুগের নারীদের মতো নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ করে বেড়িও না।”
— (সূরা আহযাব: ৩৩)
🔹 ইসলাম নারীকে গৃহকেন্দ্রিক মর্যাদার আসনে বসিয়েছে, যেন সে পরিবার গঠন, সন্তান প্রতিপালন ও নৈতিক পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
---
🔸 নারী স্বাধীনতা বনাম লজ্জা ও ইজ্জত:
আধুনিক যুগে "নারী স্বাধীনতা" ও "যৌন স্বাধীনতা" নামক ধোঁকায় পড়ে বহু নারী নিজেকে উপভোগ্য পণ্যে পরিণত করছে। বিজ্ঞাপন, সিনেমা, মিডিয়া ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যেন তার মূল পরিচয় কেবল "দেহ"।
➡️ অথচ ইসলামী দৃষ্টিতে নারী একটি স্বাধীন সত্ত্বা, কিন্তু তার স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ আল্লাহর বিধানের ভেতরে।
---
🔸 ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর আদর্শ রূপ:
ইসলামের ইতিহাসে বহু মহীয়সী নারীর উদাহরণ পাওয়া যায় যাঁরা লজ্জা, পর্দা ও পবিত্রতা বজায় রেখে আখিরাত ও দুনিয়ার সফলতা অর্জন করেছেন।
১. হযরত মারইয়াম (আ):
তিনি ছিলেন চূড়ান্ত পর্যায়ের লজ্জাশীলা, নিজেকে সর্বদা গোপন রাখতেন, একাকী আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন।
২. হযরত খাদিজা (রা):
তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন বটে, কিন্তু লজ্জা ও সতীত্বে ছিলেন অনন্য। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করে রাসূল ﷺ-কে সহায়তা করেছিলেন।
৩. হযরত ফাতিমা (রা):
তিনি ছিলেন ইসলামী নারীত্বের পূর্ণ প্রতীক — পর্দাশীলা, লজ্জাশীলা, স্বামীভক্ত, ধার্মিক ও সাদাসিধে জীবনযাপনকারী।
---
🔸 ফিকহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে:
▪️ ইজমা (সর্বসম্মত মত):
সাহাবাগণ, তাবেঈন ও পরবর্তী উম্মতের সর্বসম্মত মত হলো, নারী যদি তার লজ্জা ও সতীত্ব রক্ষা করে, তবে সে জান্নাতের অধিকারী।
▪️ ইমামদের মত:
ইমাম আবু হানিফা (রহ.): নারীর মূল দায়িত্ব হলো গৃহস্থালী ও সন্তান প্রতিপালন। কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বৈধ তবে কঠোর শর্তসাপেক্ষে।
ইমাম শাফেয়ী (রহ.): পর্দা ও ইজ্জত রক্ষাই নারীর আসল সৌন্দর্য।
ইমাম মালিক (রহ.): নারীর এমন কোন কাজ বৈধ নয় যা তাকে পুরুষের দৃষ্টির সামনে নিয়ে আসে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.): নারীর কণ্ঠস্বরও পর্দার অন্তর্ভুক্ত যদি তাতে আকর্ষণ থাকে।
---
🔸 পশ্চিমা চিন্তার বিপরীতে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি:
পশ্চিমা ভাবনা ইসলামী ভাবনা
নারীর স্বাধীনতা মানে দেহব্যবসার বৈধতা নারীর স্বাধীনতা মানে পর্দার ভেতরে নিরাপদ মর্যাদা
যৌন সম্পর্ক ব্যক্তিগত ব্যাপার বিবাহ ছাড়া যৌন সম্পর্ক হারাম
ক্যারিয়ারই মূল জীবন পারিবারিক শান্তিই আসল সাফল্য
---
🔸 সমাধান ও কল্যাণের পথ:
✅ পবিত্রতা ও পর্দা বজায় রাখা
✅ কাজের প্রয়োজনে শালীনতা রক্ষা ও মাহরাম পুরুষের সহচরিতা
✅ পারিবারিক পরিবেশে ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা
✅ নারীদের আত্মমর্যাদা ও দীনী জ্ঞান বৃদ্ধি
✅ ফেতনা থেকে দূরে থেকে নিজের ইজ্জতের রক্ষাকবচ হিসেবে লজ্জা ধারণ
---
উপসংহার:
নারী জাতির কল্যাণ সেই পথেই, যেখানে লজ্জা, সতীত্ব, পবিত্রতা ও পরিবারের বন্ধন অক্ষুণ্ণ থাকে। নারী যেন নিজের মর্যাদা নিজেই রক্ষা করে — ইসলাম তাকে সেই শিক্ষাই দিয়েছে।
> ❝ নারীকে হীরা বলা হয়েছে — কারণ হীরা সর্বত্র ছড়ানো যায় না, তাকে রক্ষা করতে হয়। ❞
❝ নারীকে মায়ের আসনে বসানো হয়েছে — কারণ সে জাতিকে গড়ার মূল কারিগর। ❞
---
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Heartfelt Thanks for your valuable comments.