সোমবার, জুলাই ১৪, ২০২৫

সম্মানের চোখে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেখা উচিত

📚 সম্মানের চোখে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেখা উচিত

ভাদুঘর মাহবুবুল হুদা পৌর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় আমাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি স্কুলের ফলাফল নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনামূলক প্রতিবেদন ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে ব্যর্থতার দায় চাপানো হয়েছে বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের উপর।

আমরা সেই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত নই।

আমরা বিনয়ের সাথে বলবো—
  শিক্ষকগণের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বলতে চাই, প্রত্যেক শিক্ষক প্রতি বিষয়ের জন্য ক্লাসে সময় পান ৪০ -৫০ মিনিট মিনিট। তার মাঝে হাজিরা, বাড়ির কাজ নেওয়া, নতুন কিছু পড়ানো, আবার আগামীকালের বাড়ির কাজ দেওয়া এগুলো করে শিক্ষকগণ মন প্রাণ উজাড় করে ছাত্র ছাত্রীদের শিখাতে পর্যাপ্ত সময় পাননা।

এখন যারা দোষারোপ করছেন, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে,  তারা কি তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করেছেন? যারা আজকে স্কুলের জন্য বদনাম কামাই করেছেন, আর যারা উঁচু গলায় শিক্ষকগণকে অপমানিত করছেন, তারা কি কোন দিন ভাই, বন্ধু, বাবা, চাচা,মামা মানে অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে খোঁজ খবর নিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অবস্থা? রাতে- বিরাতে, দিন-দুপুরে,সন্ধ্যা-রাতে কে, কোথায়, কি করেছে? ফল কি গাছে ধরে? চাইলাম আর পারলাম! নিজেদের ভূমিকা ও কর্ম কান্ডের কারনে লজ্জিত হওয়া উচিত। দ্রুত শ্রদ্ধেয় শিক্ষক গণের কাছে দুঃখিত হবেন, ক্ষমা চাইবেন ও সালাম জানাবেন এটাই ভদ্র ও উন্নত সমাজের প্রত্যাশা। আর যারা তাদের সন্তানদের গ্রামের বাইরের স্কুলে পড়াচ্ছেন, চমৎকার রেজাল্ট পাচ্ছেন, খবর নিয়ে দেখেন স্কুলের কী ভূমিকা!!! যে ছাত্র, তার'তো পড়তে হবে, তার'তো জানার আগ্রহ, পরীক্ষায় ভালো ফলের লক্ষ্যে পরিশ্রমী হতে হবে। পড়াশোনা করার মতো পর্যাপ্ত সময়, আর্থিক সামর্থ্য ও স্বচ্ছলতা আছে কীনা সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।

পুনশ্চঃ আজ যারা শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে কড়া ভাষায় কথা বলছেন, তারা কি কখনো একবারও ভেবে দেখেছেন, একজন শিক্ষক একটি বিষয়ের জন্য একটি ক্লাসে ৪০–৫০ মিনিট সময় পান। এর মধ্যে হাজিরা নেওয়া, গতকালের বাড়ির কাজ যাচাই, নতুন বিষয় শেখানো, এবং পরবর্তী দিনের হোমওয়ার্ক দেওয়া—সব মিলিয়ে শিক্ষক তার সীমিত সময় ও সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন। মাঝে মাঝে আবার পরীক্ষা নেওয়া, পরীক্ষার খাতা দেখা, মানোন্নয়নের রিপোর্ট তৈরি করা, প্রকাশ করার কর্মযজ্ঞ একমাত্র শিক্ষক ছাড়া অন্য কেউ হেড টু হেড বুঝার সাধ্য নাই। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো—শুধু শিক্ষক দায়ী?

🔍 অভিভাবকের ভূমিকা কোথায়?

আমরা যারা অভিভাবক বা সমাজ সচেতন ব্যক্তি দাবি করি, তারা কি কখনো জিজ্ঞেস করেছি—

সন্তান কোথায় যাচ্ছে সন্ধ্যায়?

রাতের খাবারের পর সে পড়ছে, না ফোনে ভিডিও দেখছে?

কতটুকু পড়ছে, কিভাবে পড়ছে?

পরীক্ষার আগের রাতে বই নিয়ে বসেছে তো?

একজন শিক্ষক তো কেবল ক্লাসে শেখাতে পারেন, কিন্তু শেখাটা আয়ত্ত করতে হয় ছাত্রকে নিজে থেকেই। আর তার পরিবেশটা তৈরি করতে হয় পরিবার এবং সমাজকে। শুধু দোষারোপ করে, সামাজিক মাধ্যমে "ভূতের মতো ভয় দেখিয়ে" সমাধান আসবে না।

🎯 ফলাফল কীভাবে আসে?

আমরা গর্ব করি বাইরের স্কুলে পড়া সন্তানদের ভালো ফল দেখে। কিন্তু কখনো খোঁজ নিই, তারা কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে? সেখানে কতজন শিক্ষক আছে? তাদের গাইডলাইন কী? ছাত্র নিজে কতটা সিরিয়াস?

আমাদের বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যদি ২–৩টি বিষয় একসাথে পড়াতে বাধ্য হন, সেটা শিক্ষকের ব্যর্থতা নয় — পাঠদান কাঠামোর অপ্রতুলতা ও অভাবী অবস্থা। এসব সমস্যা সমাধানে দরকার সম্মিলিত পরিকল্পনা, সম্মান, এবং সহযোগিতা।

✅ সম্মান দিয়েই পরিবর্তন সম্ভব

সমস্যা নিশ্চয়ই আছে। ফলাফল হয়তো প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে। কিন্তু এর সমাধান করতে হবে সম্মান রেখে, হাতে হাত মিলিয়ে।

একজন অভিভাবক হিসেবে

একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে

একজন সাবেক ছাত্র বা ছাত্রী হিসেবে

আমাদের স্কুল আমাদের গর্ব। শিক্ষকরা আমাদের আলোকবর্তিকা। কিছু অপ্রাপ্তি থাকতেই পারে, কিন্তু তার প্রতিকার অসম্মানের মাধ্যমে নয় — বরং সম্মান, পরামর্শ ও সহায়তার মাধ্যমে।

শেষে একটাই কথা—

> “গালি নয়, গলায় বলুন—আমরা একসাথে গড়ব আমাদের বিদ্যালয়ের গৌরব।”

আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সম্মানসূচক অবস্থান অত্যন্ত গঠনমূলক ও প্রজ্ঞাপূর্ণ হউক। শিক্ষকগণের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে এবং সমস্যার গভীরে গিয়ে আত্মসমালোচনা করা, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

শিক্ষকগণের হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্রিম ও প্রতিদানহীন অতুলনীয় যত্নের, রক্ত পানি করা, বারবার ঘর্মাক্ত লোনা ঘামের ভেজা শার্টগুলো আবার অসহ্য গরমে শুকানো, অবিরাম পরিশ্রমের হাজার হাজার ফসলগুলো ফিবছর সোনালী দিগন্তে পথ ধরে, জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে প্রতিযোগি ও বিজয়ী হচ্ছে একমাত্র তাঁদেরই মহামূল্যবান দোয়া ও আন্তরিক ভালোবাসার বদৌলতে ❤️❤️❤️।
জাজাকাল্লাহ বিল খাইরান।
সবারই জানা উচিত, তাঁদের সীমাহীন সীমাবদ্ধতার মাঝে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের কিভাবে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন। কখনো নিজেকে, পরিবার, পরিজন,আত্মীয় স্বজন, সবাইকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, রুটিনমাফিক ক্লাস,প্রশ্নপত্র তৈরি, পরীক্ষা, হল মেইনটেইন, রাত-বিরাতে, সকাল-সন্ধ্যায়, সময়ে- অসময়ে পরীক্ষার খাতা দেখা, জমা দেয়া, ফলাফল প্রকাশ -এই মহাযজ্ঞের আড়ালের প্রতিটি চিত্র দেখা। এগুলো অবগত হওয়া বর্তমান, আগত-অনাগত ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দের জন্য অপরিহার্য্য।  

পরিশেষে, 
"সফলতা নই, বিফলতা নই, মানুষ হওয়াটাই আসল কথা"।
-ফুটবলের রাজা পেলে

✍️
আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)
সাবেক ছাত্র-এস,এস,সি ব্যাচ-১৯৯৫
ভাদুঘর মাহবুবুল হুদা পৌর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়
---

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Heartfelt Thanks for your valuable comments.

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

শরীয়ত + মারেফাত = পূর্ণতা

শরীয়ত ও মারেফত একে অপরের পরিপূরক। শরীয়ত ছাড়া মারেপত ভন্ডামী কেউ কেউ বলে। আর মারেফাত ছাড়া শরীয়তের অবস্থা কিরুপ? সবাই দুটি নিয়ে চর্চা করতে পার...