প্রশংসা কি? কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? কোরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস সহ সকল ইসলামি ইমাম মুজতাহিদ এর মতে প্রশংসা কে, কার জন্য ও কেনো করা উচিত? প্রয়োজনীয়তা কি?
প্রশংসা (হামদ) — ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। নিচে এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেওয়া হলো কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস ও ইসলামী পণ্ডিতদের মতামতসহ।
🟩 প্রশংসা কী?
আরবি: الحمد (Al-Hamd)
বাংলা অর্থ: ভালো গুণাবলির স্বীকৃতি দিয়ে কাউকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো, প্রশংসাসূচক শব্দ বা কাজের মাধ্যমে।
📌 সংজ্ঞা:
প্রশংসা হলো এমন একটি ইতিবাচক প্রকাশ যেখানে কোনো ব্যক্তি বা সত্তার উত্তম গুণ, কার্যকলাপ বা বৈশিষ্ট্যকে স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা জানানো হয়।
🟩 প্রশংসার প্রকারভেদ (ইসলামী পরিভাষায়):
প্রশংসা মূলত ২ প্রকার:
১. আল্লাহর প্রশংসা (Hamd)
- একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, যিনি সকল গুণে গুণান্বিত, সব কিছুর স্রষ্টা।
- এটি ইবাদতের অংশ।
- কুরআনের সূচনা হয় এভাবেই:
"আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল 'আলামীন"
অর্থ: "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সব জগতের পালনকর্তা।" (সূরা ফাতিহা ১:২)
২. মানুষের বা সৃষ্ট জীবের প্রশংসা (Madh / Thanaa)
- কাউকে তাঁর বৈধ গুণ, কাজ বা নেক আমলের জন্য প্রশংসা করা।
- শর্ত হলো — এটি সীমা অতিক্রম না করে, এবং আল্লাহর প্রশংসার জায়গা না নেয়।
🟩 কেনো এবং কাকে প্রশংসা করা উচিত?
▶️ আল্লাহর প্রশংসা কেনো?
- তিনিই সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতা।
- তাঁর সব গুণই পরিপূর্ণ ও উত্তম (আস্মা উল হুসনা)।
- প্রশংসা তাঁকেই মানায়, কারণ সব কল্যাণ ও শক্তির মূল উৎস তিনি।
📖 কুরআনে এসেছে:
"তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহর প্রশংসা করো, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।"
(সূরা আল-আন’আম ৬:১)
▶️ মানুষ বা অন্য কারো প্রশংসা কখন ও কেনো?
- উৎসাহ ও নেক কাজে অনুপ্রেরণা দিতে।
- সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক রক্ষায়।
- কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।
- কারো অধিকার স্বীকৃতি দিতে।
⚠️ শর্ত:
- প্রশংসা যেন চাটুকারিতা না হয়।
- যেন কারো মাঝে অহংকার সৃষ্টি না করে।
- যেন তা আল্লাহর প্রশংসার সমকক্ষ না হয়।
🟩 হাদীসে প্রশংসার নির্দেশ ও সতর্কতা
✅ পজিটিভ উদাহরণ:
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়।”
— (তিরমিযী)
⚠️ সতর্কতা:
রাসূল ﷺ বলেন:
“তোমরা অতিরিক্ত প্রশংসাকারীদের মাটি দিয়ে মুখ ভরে দাও।”
— (মুসলিম)
অর্থাৎ অতিরিক্ত, অপ্রাসঙ্গিক প্রশংসা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
🟩 ইজমা ও কিয়াস অনুযায়ী ব্যাখ্যা:
✔️ ইজমা (ঐকমত্য):
সমস্ত ওলামা একমত —
✅ আল্লাহর প্রশংসা ঈমানের অংশ।
✅ মানুষের বৈধ প্রশংসা করা বৈধ ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রশংসনীয়।
✔️ কিয়াস (অনুরূপ নির্ণয়):
যেমন দানের পরে “জাযাকাল্লাহ খাইরান” বলা হয়, তেমনি— ✅ নেক আমল ও উত্তম চরিত্রের প্রশংসাও ইবাদতের মতো ফজিলতপূর্ণ।
🟩 ইমামদের ব্যাখ্যা:
◼️ ইমাম গাজ্জালী (রহ.):
তিনি বলেন:
“আল্লাহর প্রশংসা হলো বান্দার হৃদয়ের সর্বোচ্চ রূহানী পর্যায়। কারণ এতে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।”
◼️ ইমাম নববী (রহ.):
“মানুষের মাঝে সদাচরণ ও সৌজন্যবোধের জন্য সঠিক প্রশংসা অনুমোদিত। কিন্তু তাতে বাড়াবাড়ি ও মিথ্যা যেন না থাকে।”
🟩 প্রশংসার প্রয়োজনীয়তা (উল্লেখযোগ্য দিক):
দিক | গুরুত্ব |
---|---|
🎯 আধ্যাত্মিক | আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়। |
🤝 সামাজিক | ভ্রাতৃত্ব, কৃতজ্ঞতা ও সৌহার্দ্য বাড়ে। |
💖 ব্যক্তিত্ব | মানুষ উৎসাহ পায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে। |
❌ নিয়ন্ত্রণ | চাটুকারিতা ও মিথ্যা প্রশংসা থেকে দূরে থাকতে শেখায়। |
✅ সংক্ষেপে উত্তর:
প্রশ্ন | উত্তর |
---|---|
প্রশংসা কী? | গুণের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মান প্রকাশ। |
কাকে করা উচিত? | মূলত আল্লাহকে, এবং সীমিতভাবে সৎ মানুষকে। |
কেনো? | আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বান্দার প্রতি সৌজন্য প্রকাশে। |
কত প্রকার? | মূলত দুই প্রকার— আল্লাহর জন্য ও মানুষের জন্য। |
শর্ত | মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত না হওয়া, আল্লাহর প্রশংসার জায়গায় না নেওয়া। |
📘 উপসংহার:
প্রশংসা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সামাজিক আচরণ। আল্লাহর প্রশংসা সর্বোচ্চ স্তরে ও সবসময় আবশ্যক। অন্যদের প্রশংসা শিষ্টাচার, সৌজন্য ও নৈতিকতা রক্ষা করে — তবে সেটি যেন সর্বদা সীমার মধ্যে থাকে।
আল্লাহ কোরআনের কয় জায়গাতে নিজের প্রশংসার আয়াত নাজিল করেছেন? কেনো ও প্রয়োজন কী ছিল?
----------------------------------------------------------------------------
আল্লাহ ﷻ কুরআনুল কারিমে অসংখ্য আয়াতে নিজেকে প্রশংসা করেছেন। এভাবে নিজের প্রশংসা করা শুধু আল্লাহর ক্ষেত্রেই শোভনীয় ও যথাযথ, কারণ তিনিই সকল গুণ, ক্ষমতা, সৃষ্টির মালিক এবং দোষহীন। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
🟩 প্রথমে সরল উত্তর:
📌 প্রশ্ন ১: আল্লাহ কত জায়গায় কুরআনে নিজের প্রশংসা করেছেন?
🔹 "الحمد لله" (আলহামদু লিল্লাহ = সকল প্রশংসা আল্লাহর) বাক্যটি সরাসরি এসেছে প্রায় ৫টি স্থানে:
সূরা | আয়াত | আয়াতের অর্থ |
---|---|---|
সূরা ফাতিহা | ১:২ | "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা।" |
সূরা আন'আম | ৬:১ | "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন..." |
সূরা কাহফ | ১৮:১ | "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন..." |
সূরা সাবা | ৩৪:১ | "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই..." |
সূরা ফাতির | ৩৫:১ | "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা..." |
🔹 এছাড়াও আরও বহু আয়াতে (৪০+ জায়গায়) আল্লাহ নিজ গুণাবলি, দয়া, মহিমা, কুদরত, হিকমত, কিবরিয়া, মালিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করে পরোক্ষভাবে নিজ প্রশংসা করেছেন।
🟩 প্রশ্ন ২: কেনো আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন?
📌 কারণসমূহ:
✅ ১. আল্লাহ একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি যিনি নিজের প্রশংসা করতে পারেন।
- মানুষের মাঝে আত্মপ্রশংসা গর্ব, অহংকার বা সীমালঙ্ঘন হতে পারে।
- কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা কোনো বাড়াবাড়ি নয়; বরং তাঁর প্রকৃত অবস্থা ও গুণের স্বীকৃতি।
✅ ২. তাঁর বান্দাদের শেখানোর জন্য।
- বান্দারা যেন আল্লাহর প্রশংসা করে।
- যেমন: ফাতিহা সূরায় “আলহামদু লিল্লাহ” শেখানো হয়েছে — এটা সব নামাজে আবশ্যক।
✅ ৩. তাওহীদের মৌলিক পরিচয় ও ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য।
- যেন মানুষ বুঝতে পারে: সব গুণ, মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য।
- এটা শিরক বিরোধী বার্তা — অন্য কারো মহিমা ও শক্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ ভাবা চলবে না।
✅ ৪. আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিজ গুণাবলি প্রকাশ।
- যেন মানুষ চিনে নেয়, কে তাঁদের রব, এবং কার উপর নির্ভর করা উচিত।
🟩 প্রশ্ন ৩: এই আয়াতগুলোর প্রয়োজনীয়তা কী ছিল?
📌 প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য:
বিষয় | ব্যাখ্যা |
---|---|
🎯 আকীদা মজবুত করা | বান্দাদের ঈমান ও তাওহীদ স্পষ্ট করতে |
🕋 ইবাদতের পথ দেখানো | কোন সত্তার জন্য কৃতজ্ঞতা, ইবাদত ও দোয়া হবে সেটা বোঝাতে |
🧠 চেতনা ও জ্ঞান দান | আল্লাহর গুণাবলি জানলে বান্দা চিন্তাশীল হয়, গাফলতি দূর হয় |
💞 ভালোবাসা ও ভয় সৃষ্টি | প্রশংসার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়ে |
📿 দোয়া ও ইবাদতের ভাষা শেখানো | "আলহামদু লিল্লাহ" সহ বিভিন্ন যিকির আয়াত মানুষের মুখে সহজ করে দেওয়া |
🟩 বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা:
◼️ ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.):
“আল্লাহ নিজের প্রশংসা করেছেন, যেন তাঁর বান্দারাও একই ভাষায় তাঁকে ডাকতে ও বুঝতে পারে।”
◼️ ইমাম রাযী (রহ.):
“আল্লাহর আত্মপ্রশংসা এমন এক সত্য, যেটা অপরিহার্য — কারণ তিনি সব কিছুর উৎস ও শেষ গন্তব্য।”
🟩 উপসংহার:
🔹 কুরআনে ৫টি জায়গায় সরাসরি "আলহামদু লিল্লাহ" বলা হয়েছে, এবং অনেক আয়াতে আল্লাহ নিজের গুণাবলি বর্ণনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নিজ প্রশংসা করেছেন।
🔹 আল্লাহর আত্মপ্রশংসা কোনো অহংকার নয়; বরং বান্দাদের জন্য দিকনির্দেশনা, তাওহীদের শিক্ষা এবং কৃতজ্ঞতার ভাষা।
🔹 মানুষের উচিত এই প্রশংসা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি করা।
আরবীতে "প্রশংসা" এর সব আরবী বাংলা শব্দ লিখ।
________________________________________________ “প্রশংসা” সম্পর্কিত সব গুরুত্বপূর্ণ আরবি শব্দ ও তাদের বাংলা অর্থ দেওয়া হলো। এগুলো কুরআন, হাদীস ও ইসলামিক সাহিত্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়:
🕌 আরবিতে ‘প্রশংসা’ সম্পর্কিত শব্দসমূহ ও বাংলা অর্থ
🟩 আরবি শব্দ | 📝 উচ্চারণ | 🟨 বাংলা অর্থ |
---|---|---|
الحمد | আল-হামদ | সমস্ত প্রশংসা, সব ধরনের ভালো গুণের স্বীকৃতি |
مدح | মাধহ্ | প্রশংসা, গুণকীর্তন |
ثناء | সানাআ’ | প্রশংসা, সম্মানসূচক বক্তব্য |
شكر | শুকর | কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা |
تمجيد | তামজীদ | মহানত্বের প্রশংসা, মহিমা ঘোষণা |
تكبير | তাকবীর | আল্লাহকে মহান বলা (“আল্লাহু আকবার”) |
تسبيح | তাসবীহ | আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা (“সুবহানাল্লাহ”) |
تهليل | তাহলীল | একত্ববাদ ঘোষণা (“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”) |
تحميد | তাহমীদ | আল্লাহর প্রশংসা করা (“আলহামদুলিল্লাহ”) |
تعظيم | তা‘জীম | শ্রদ্ধা, মহিমান্বিতকরণ |
تكريم | তাকরীম | সম্মান করা, সম্মানসূচকভাবে উল্লেখ |
مدّاح | মাদ্দাহ্ | প্রশংসাকারী ব্যক্তি (সাধারণত কাব্যিকভাবে) |
محمود | মাহমুদ | প্রশংসিত (আল্লাহর নামের একটি রূপও) |
حميد | হামিদ | প্রশংসাকারী বা প্রশংসিত (আল্লাহর গুণবাচক নাম) |
مجيد | মাজীদ | মহিমান্বিত, গৌরবান্বিত (আল্লাহর গুণবাচক নাম) |
🕋 বিশেষ ইসলামিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয় এমন শব্দ:
আরবি শব্দ | ব্যবহার | উদাহরণ |
---|---|---|
الْحَمْدُ لِلَّهِ | কুরআনের সূচনা শব্দ | সূরা ফাতিহা (১:২) |
سُبْحَانَ اللَّهِ | তাসবীহ | আল্লাহর পবিত্রতা |
اللَّهُ أَكْبَرُ | তাকবীর | আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ |
جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا | প্রশংসা ও দোয়া | “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন” |
🧠 বিশেষ টিপস:
- الحمد = সামগ্রিকভাবে সব ভালো গুণের জন্য আল্লাহকে প্রশংসা করা।
- مدح = নির্দিষ্ট গুণ বা কাজের প্রশংসা।
- ثناء = আনুষ্ঠানিকভাবে বা বাহ্যিকভাবে প্রশংসা করা।
- شكر = কাজ বা অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা।
এই সম্পর্কিত সকল আয়াত, হাদীস
------------------------------------------------------
📖 কুরআন থেকে আয়াতসমূহ (আলহামদُ lillāh)
১. সূরা আল‑ফাতিহা (১:২)
২. অন্যান্য বর্ণনা ও প্রশংসার রূপে
৩. সূরা ইব্রাহীম (14:7)
৪. সূরা আন-নাসর (110:3)
🕋 হাদীসসমূহ (সাহিহ সূত্র)
✔️ হাদীস: ছোটো‑বড়ো কাজে আনন্দে প্রশংসা
✔️ হাদীস: প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করা উচিত ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ দিয়ে
✔️ হাদীস: খাবার বা পানীয় গ্রহণের পর প্রশংসা
✔️ হাদীস: বিক্ষিপ্ত ঘটনায় ধৈর্য ও প্রশংসা
✔️ হাদীস: আল‑হামদুলিল্লাহর ফজিলত
✔️ হাদীস: ধন্যবাদ ও ধোয়াতে ফজিলত
📝 সারাংশ ও ব্যাখ্যা
📌 উপসংহার
- কুরআনে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে আল্লাহ তাঁর নিজের প্রশংসা করেছেন, যার কেন্দ্রবিন্দু হলো আল‑হামদুলিল্লাহ।
- হাদীসে এই শব্দের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ন কর্ম, দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা ও দুর্দশায়—সবগুলোতেই স্বীকৃত ও মানব জীবনের ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপিত।
- তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত—হৃদয়সংগে ও ভাষায়—আল্লাহর প্রশংসা সর্বদা বরণ করা।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল আয়াত ও হাদীস
-------------------------------------------------
📖 কুরআন – সরাসরি ও পরোক্ষে প্রশংসার আয়াত
১. সরাসরি “الحمد لله” দিয়ে শুরু হওয়া সূরা (৫টি):
২. পরোক্ষে প্রশংসা: আল্লাহর গুণাবলীর বর্ণনা
৩. কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্যের সাথে প্রশংসার নির্দেশ:
🕋 হাদীস – সাহিহ সূত্রে প্রশংসার গুরুত্ব
✔️ সকল परिस्थितিতে ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ বলা
✔️ ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ ও ‘তাসবীহ’ নামাজ শেষে পড়ার ফজিলত
✔️ হাঁচি দেওয়ার পর ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ বলা
✔️ প্রশংসা ও ধন্যবাদের মাধ্যমে আখিরতে পুরস্কার
🧾 সারাংশ – আমন্ত্রণমূলক তালিকা
শ্রেণি | উৎস | উদাহরণ |
---|---|---|
পরোক্ষ প্রশংসা | গুণাবলি‑ধর্মী আয়াত | اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ…, الرَّحِيم ইত্যাদি |
হাদীস | ধর্ম‑দৈনন্দিন জীবনে তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীর ও ধন্যবাদের নির্দেশনা | সুখ‑দুঃখে ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’, নামাজ পর ৩৩‑৩৩‑৩৪ বার, হাঁচির পর, ইত্যাদি |
📌 উল্লেখযোগ্য টিপস:
- সরাসরি আয়াতগুলো হলো “আল‑হামদুলিল্লাহ” ইঙ্গিতকারী যেখানে প্রশংসা স্বতঃপ্রকাশেই উপস্থিত।
- অন্য আয়াতগুলো আল্লাহর গুণগান, শক্তি, করুণা, মালিকানা ইত্যাদি বর্ণনা করে পরোক্ষভাবে প্রশংসাসূচক।
- হাদীসগুলো অন্তর্ভুক্ত প্রতিদিনের বক্তব্য ও ছোট‑বড় কাজের ইতিবাচক অনুশীলনের দিকনির্দেশনা দেয়।
আরবীতে "প্রশংসা" এর সব আরবী বাংলা শব্দ লিখ। শাব্দিক, পারিভাষিক, শারীয়াহ পরিভাষার অর্থ বল। আর এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য বলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কেনো প্রশংসার এত শব্দ ব্যবহার করেন?
--------------------------------
নিম্নে “প্রশংসা” শব্দের আরবী প্রতিশব্দসমূহ, তাদের বাংলা অর্থ, শাব্দিক ও পারিভাষিক ব্যাখ্যা, এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। এরপর ব্যাখ্যা করা হবে—আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন কেন এতগুলো প্রশংসার শব্দ ব্যবহার করেছেন।
📚 ১. আরবীতে "প্রশংসা" শব্দের বিভিন্ন প্রতিশব্দ ও বাংলা অর্থ:
আরবি শব্দ | বাংলা অর্থ | শব্দমূল | ধরণ |
---|---|---|---|
حَمْد (হাম্দ) | অকুণ্ঠ ও যথাযথ প্রশংসা | ح م د | শারঈ, পারিভাষিক |
مَدْح (মাদহ) | গুণ বর্ণনা করে প্রশংসা | م د ح | সাধারণ পারিভাষিক |
ثَنَاء (সানা) | পূর্ণ প্রশংসা ও গুণগান | ث ن ى | শাব্দিক |
تَسْبِيح (তাসবীহ) | পবিত্রতা ঘোষণা করে প্রশংসা | س ب ح | ইবাদতের পরিভাষা |
تَحْمِيد (তাহমীদ) | "الحمد لله" বলা | ح م د | ইবাদতের পরিভাষা |
مَجْد (মাজদ) | মহিমা ও সম্মানিত প্রশংসা | م ج د | উচ্চ মর্যাদার ইঙ্গিত |
تَعْظِيم (তা'যীম) | মহত্ব স্বীকৃতি | ع ظ م | সম্মানসূচক প্রশংসা |
📖 ২. শব্দগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা:
🔹 1. حمد (হাম্দ)
- শাব্দিক অর্থ: গুণ ও কৃতজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রশংসা করা।
- শারঈ ব্যবহার: শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য নির্ভেজাল, পূর্ণাঙ্গ প্রশংসা।
- উদাহরণ: “الحمد لله رب العالمين”
🔹 2. مدح (মাদহ)
- শাব্দিক অর্থ: কারো ভালো দিক, গুণ বা কাজের উপর ভিত্তি করে প্রশংসা করা।
- ব্যবহার: মানুষ, জিনিস, এমনকি আল্লাহর জন্যও ব্যবহৃত হয়।
- পার্থক্য: এটি “হাম্দ” এর তুলনায় কম গভীর এবং মাঝে মাঝে নিরেট ভাতৃত্ব বা পক্ষপাতমূলক হতে পারে।
🔹 3. ثناء (সানা)
- অর্থ: পুনরাবৃত্ত গুণগান করা বা বাহুল্যপূর্ণ প্রশংসা।
- ব্যবহার: উচ্চতর স্তরের প্রশংসা। হাদীসে “اللهم لك الحمد، ولك الثناء” আছে।
🔹 4. تسبيح (তাসবীহ)
- অর্থ: আল্লাহকে সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করা (SubhanAllah)।
- ব্যবহার: এটি নেতিবাচক রূপে প্রশংসা—অর্থাৎ আল্লাহ ত্রুটি-দোষমুক্ত।
- পার্থক্য: এটি গুণাবলির পরিবর্তে তাঁর পবিত্রতা ও অপারগতা জাহির করে।
🔹 5. تحميد (তাহমীদ)
- অর্থ: “الحمد لله” বলা—সরাসরি আল্লাহর প্রশংসা।
- ব্যবহার: ইবাদতের রোকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
🔹 6. مجد (মাজদ)
- অর্থ: মহিমা বা গৌরবের প্রশংসা।
- ব্যবহার: উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, রাজকীয় ও অতুলনীয় সত্ত্বার গুণ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়।
🔹 7. تعظيم (তা'যীম)
- অর্থ: কারো গুরুত্ব ও মর্যাদার স্বীকৃতি।
- ব্যবহার: শ্রদ্ধার প্রশংসা—আল্লাহ, কুরআন, বা রাসূলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।
🔍 ৩. পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য:
বিষয় | حمد | مدح | ثناء | تسبيح | مجد |
---|---|---|---|---|---|
গভীরতা | সর্বোচ্চ | মাঝারি | উচ্চ | পবিত্রতা | রাজকীয় মহিমা |
উদ্দেশ্য | কৃতজ্ঞতা ও গুণ | গুণ | গুণগান | দোষমুক্ত ঘোষণা | সম্মান |
শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য | ✅ (মূলত) | ❌ | ✅ | ✅ | ✅ |
ইবাদতের অংশ | ✅ | ❌ | ✅ | ✅ | ✅ |
🕌 ৪. আল্লাহ কেন এতগুলো প্রশংসার শব্দ ব্যবহার করেন?
✨ কারণসমূহ:
-
আল্লাহর গুণাবলি অগণন – প্রতিটি শব্দ আল্লাহর গুণের একটি বিশেষ দিক তুলে ধরে।
حمد
— কৃতজ্ঞতাتسبيح
— পবিত্রতাمجد
— মহিমাثناء
— গুণগান
-
বিভিন্ন প্রসঙ্গে উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগের প্রয়োজন
- কুরআনের বিভিন্ন সূরায় প্রসঙ্গভেদে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।
-
মানব মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতা পূরণে – মানুষ আল্লাহর প্রশংসা পুরোপুরি ধরতে পারে না; তাই নানান শব্দে আল্লাহ নিজেই প্রশংসার রূপগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।
-
ইবাদতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি – একই প্রশংসা বারবার নয়, বরং নানা রূপে—মনের গভীরতা ও নফসকে তৃপ্ত করে।
-
শিক্ষাগত প্রভাব – প্রতিটি শব্দ দিয়ে মানুষকে আল্লাহর বিভিন্ন গুণ সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া হয়।
🔚 উপসংহার:
"প্রশংসা" এর আরবী প্রতিশব্দসমূহ— حمد, مدح, ثناء, تسبيح, تحميد, مجد, এবং تعظيم —সবই আল্লাহর এক একটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরতে ব্যবহৃত। যদিও এদের অর্থ প্রায় কাছাকাছি, প্রতিটির ব্যবহারে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য ও সৌন্দর্য আছে। আল্লাহর অসীম গুণাবলির পূর্ণতা ও মহত্ত্ব বোঝাতেই তিনি নিজেই বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে নিজেকে প্রশংসিত করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Heartfelt Thanks for your valuable comments.