শুক্রবার, আগস্ট ০৮, ২০২৫

প্রশংসা ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা

প্রশংসা কি? কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি? কোরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস সহ সকল ইসলামি ইমাম মুজতাহিদ এর মতে প্রশংসা কে, কার জন্য ও কেনো করা উচিত? প্রয়োজনীয়তা কি?

প্রশংসা (হামদ) — ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। নিচে এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেওয়া হলো কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস ও ইসলামী পণ্ডিতদের মতামতসহ।


🟩 প্রশংসা কী?

আরবি: الحمد (Al-Hamd)
বাংলা অর্থ: ভালো গুণাবলির স্বীকৃতি দিয়ে কাউকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো, প্রশংসাসূচক শব্দ বা কাজের মাধ্যমে।

📌 সংজ্ঞা:

প্রশংসা হলো এমন একটি ইতিবাচক প্রকাশ যেখানে কোনো ব্যক্তি বা সত্তার উত্তম গুণ, কার্যকলাপ বা বৈশিষ্ট্যকে স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা জানানো হয়।


🟩 প্রশংসার প্রকারভেদ (ইসলামী পরিভাষায়):

প্রশংসা মূলত ২ প্রকার:

১. আল্লাহর প্রশংসা (Hamd)

  • একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, যিনি সকল গুণে গুণান্বিত, সব কিছুর স্রষ্টা।
  • এটি ইবাদতের অংশ।
  • কুরআনের সূচনা হয় এভাবেই:

    "আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল 'আলামীন"
    অর্থ: "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সব জগতের পালনকর্তা।" (সূরা ফাতিহা ১:২)

২. মানুষের বা সৃষ্ট জীবের প্রশংসা (Madh / Thanaa)

  • কাউকে তাঁর বৈধ গুণ, কাজ বা নেক আমলের জন্য প্রশংসা করা।
  • শর্ত হলো — এটি সীমা অতিক্রম না করে, এবং আল্লাহর প্রশংসার জায়গা না নেয়।

🟩 কেনো এবং কাকে প্রশংসা করা উচিত?

▶️ আল্লাহর প্রশংসা কেনো?

  1. তিনিই সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতা।
  2. তাঁর সব গুণই পরিপূর্ণ ও উত্তম (আস্মা উল হুসনা)।
  3. প্রশংসা তাঁকেই মানায়, কারণ সব কল্যাণ ও শক্তির মূল উৎস তিনি।

📖 কুরআনে এসেছে:

"তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহর প্রশংসা করো, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।"
(সূরা আল-আন’আম ৬:১)

▶️ মানুষ বা অন্য কারো প্রশংসা কখন ও কেনো?

  1. উৎসাহ ও নেক কাজে অনুপ্রেরণা দিতে।
  2. সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক রক্ষায়।
  3. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।
  4. কারো অধিকার স্বীকৃতি দিতে।

⚠️ শর্ত:

  • প্রশংসা যেন চাটুকারিতা না হয়।
  • যেন কারো মাঝে অহংকার সৃষ্টি না করে।
  • যেন তা আল্লাহর প্রশংসার সমকক্ষ না হয়।

🟩 হাদীসে প্রশংসার নির্দেশ ও সতর্কতা

পজিটিভ উদাহরণ:

রাসূল ﷺ বলেছেন:

“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়।”
— (তিরমিযী)

⚠️ সতর্কতা:

রাসূল ﷺ বলেন:

“তোমরা অতিরিক্ত প্রশংসাকারীদের মাটি দিয়ে মুখ ভরে দাও।”
— (মুসলিম)

অর্থাৎ অতিরিক্ত, অপ্রাসঙ্গিক প্রশংসা থেকে বিরত থাকা জরুরি।


🟩 ইজমা ও কিয়াস অনুযায়ী ব্যাখ্যা:

✔️ ইজমা (ঐকমত্য):

সমস্ত ওলামা একমত —
আল্লাহর প্রশংসা ঈমানের অংশ।
মানুষের বৈধ প্রশংসা করা বৈধ ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রশংসনীয়।

✔️ কিয়াস (অনুরূপ নির্ণয়):

যেমন দানের পরে “জাযাকাল্লাহ খাইরান” বলা হয়, তেমনি— ✅ নেক আমল ও উত্তম চরিত্রের প্রশংসাও ইবাদতের মতো ফজিলতপূর্ণ।


🟩 ইমামদের ব্যাখ্যা:

◼️ ইমাম গাজ্জালী (রহ.):

তিনি বলেন:

“আল্লাহর প্রশংসা হলো বান্দার হৃদয়ের সর্বোচ্চ রূহানী পর্যায়। কারণ এতে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।”

◼️ ইমাম নববী (রহ.):

“মানুষের মাঝে সদাচরণ ও সৌজন্যবোধের জন্য সঠিক প্রশংসা অনুমোদিত। কিন্তু তাতে বাড়াবাড়ি ও মিথ্যা যেন না থাকে।”


🟩 প্রশংসার প্রয়োজনীয়তা (উল্লেখযোগ্য দিক):

দিক গুরুত্ব
🎯 আধ্যাত্মিক আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়।
🤝 সামাজিক ভ্রাতৃত্ব, কৃতজ্ঞতা ও সৌহার্দ্য বাড়ে।
💖 ব্যক্তিত্ব মানুষ উৎসাহ পায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
নিয়ন্ত্রণ চাটুকারিতা ও মিথ্যা প্রশংসা থেকে দূরে থাকতে শেখায়।

সংক্ষেপে উত্তর:

প্রশ্ন উত্তর
প্রশংসা কী? গুণের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মান প্রকাশ।
কাকে করা উচিত? মূলত আল্লাহকে, এবং সীমিতভাবে সৎ মানুষকে।
কেনো? আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বান্দার প্রতি সৌজন্য প্রকাশে।
কত প্রকার? মূলত দুই প্রকার— আল্লাহর জন্য ও মানুষের জন্য।
শর্ত মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত না হওয়া, আল্লাহর প্রশংসার জায়গায় না নেওয়া।

📘 উপসংহার:

প্রশংসা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সামাজিক আচরণ। আল্লাহর প্রশংসা সর্বোচ্চ স্তরে ও সবসময় আবশ্যক। অন্যদের প্রশংসা শিষ্টাচার, সৌজন্য ও নৈতিকতা রক্ষা করে — তবে সেটি যেন সর্বদা সীমার মধ্যে থাকে।


আল্লাহ কোরআনের কয় জায়গাতে নিজের প্রশংসার আয়াত নাজিল করেছেন? কেনো ও প্রয়োজন কী ছিল?

----------------------------------------------------------------------------

আল্লাহ ﷻ কুরআনুল কারিমে অসংখ্য আয়াতে নিজেকে প্রশংসা করেছেন। এভাবে নিজের প্রশংসা করা শুধু আল্লাহর ক্ষেত্রেই শোভনীয় ও যথাযথ, কারণ তিনিই সকল গুণ, ক্ষমতা, সৃষ্টির মালিক এবং দোষহীন। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


🟩 প্রথমে সরল উত্তর:

📌 প্রশ্ন ১: আল্লাহ কত জায়গায় কুরআনে নিজের প্রশংসা করেছেন?

🔹 "الحمد لله" (আলহামদু লিল্লাহ = সকল প্রশংসা আল্লাহর) বাক্যটি সরাসরি এসেছে প্রায় ৫টি স্থানে:

সূরা আয়াত আয়াতের অর্থ
সূরা ফাতিহা ১:২ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা।"
সূরা আন'আম ৬:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন..."
সূরা কাহফ ১৮:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন..."
সূরা সাবা ৩৪:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই..."
সূরা ফাতির ৩৫:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা..."

🔹 এছাড়াও আরও বহু আয়াতে (৪০+ জায়গায়) আল্লাহ নিজ গুণাবলি, দয়া, মহিমা, কুদরত, হিকমত, কিবরিয়া, মালিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করে পরোক্ষভাবে নিজ প্রশংসা করেছেন।


🟩 প্রশ্ন ২: কেনো আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন?

📌 কারণসমূহ:

✅ ১. আল্লাহ একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি যিনি নিজের প্রশংসা করতে পারেন।

  • মানুষের মাঝে আত্মপ্রশংসা গর্ব, অহংকার বা সীমালঙ্ঘন হতে পারে।
  • কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা কোনো বাড়াবাড়ি নয়; বরং তাঁর প্রকৃত অবস্থা ও গুণের স্বীকৃতি।

✅ ২. তাঁর বান্দাদের শেখানোর জন্য।

  • বান্দারা যেন আল্লাহর প্রশংসা করে।
  • যেমন: ফাতিহা সূরায় “আলহামদু লিল্লাহ” শেখানো হয়েছে — এটা সব নামাজে আবশ্যক।

✅ ৩. তাওহীদের মৌলিক পরিচয় ও ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য।

  • যেন মানুষ বুঝতে পারে: সব গুণ, মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য।
  • এটা শিরক বিরোধী বার্তা — অন্য কারো মহিমা ও শক্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ ভাবা চলবে না।

✅ ৪. আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিজ গুণাবলি প্রকাশ।

  • যেন মানুষ চিনে নেয়, কে তাঁদের রব, এবং কার উপর নির্ভর করা উচিত।

🟩 প্রশ্ন ৩: এই আয়াতগুলোর প্রয়োজনীয়তা কী ছিল?

📌 প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য:

বিষয় ব্যাখ্যা
🎯 আকীদা মজবুত করা বান্দাদের ঈমান ও তাওহীদ স্পষ্ট করতে
🕋 ইবাদতের পথ দেখানো কোন সত্তার জন্য কৃতজ্ঞতা, ইবাদত ও দোয়া হবে সেটা বোঝাতে
🧠 চেতনা ও জ্ঞান দান আল্লাহর গুণাবলি জানলে বান্দা চিন্তাশীল হয়, গাফলতি দূর হয়
💞 ভালোবাসা ও ভয় সৃষ্টি প্রশংসার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়ে
📿 দোয়া ও ইবাদতের ভাষা শেখানো "আলহামদু লিল্লাহ" সহ বিভিন্ন যিকির আয়াত মানুষের মুখে সহজ করে দেওয়া

🟩 বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা:

◼️ ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.):

“আল্লাহ নিজের প্রশংসা করেছেন, যেন তাঁর বান্দারাও একই ভাষায় তাঁকে ডাকতে ও বুঝতে পারে।”

◼️ ইমাম রাযী (রহ.):

“আল্লাহর আত্মপ্রশংসা এমন এক সত্য, যেটা অপরিহার্য — কারণ তিনি সব কিছুর উৎস ও শেষ গন্তব্য।”


🟩 উপসংহার:

🔹 কুরআনে ৫টি জায়গায় সরাসরি "আলহামদু লিল্লাহ" বলা হয়েছে, এবং অনেক আয়াতে আল্লাহ নিজের গুণাবলি বর্ণনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নিজ প্রশংসা করেছেন।

🔹 আল্লাহর আত্মপ্রশংসা কোনো অহংকার নয়; বরং বান্দাদের জন্য দিকনির্দেশনা, তাওহীদের শিক্ষা এবং কৃতজ্ঞতার ভাষা।

🔹 মানুষের উচিত এই প্রশংসা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি করা।


আরবীতে "প্রশংসা" এর সব আরবী বাংলা শব্দ লিখ।

________________________________________________ “প্রশংসা” সম্পর্কিত সব গুরুত্বপূর্ণ আরবি শব্দ ও তাদের বাংলা অর্থ দেওয়া হলো। এগুলো কুরআন, হাদীস ও ইসলামিক সাহিত্য অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়:


🕌 আরবিতে ‘প্রশংসা’ সম্পর্কিত শব্দসমূহ ও বাংলা অর্থ

🟩 আরবি শব্দ 📝 উচ্চারণ 🟨 বাংলা অর্থ
الحمد আল-হামদ সমস্ত প্রশংসা, সব ধরনের ভালো গুণের স্বীকৃতি
مدح মাধহ্ প্রশংসা, গুণকীর্তন
ثناء সানাআ’ প্রশংসা, সম্মানসূচক বক্তব্য
شكر শুকর কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা
تمجيد তামজীদ মহানত্বের প্রশংসা, মহিমা ঘোষণা
تكبير তাকবীর আল্লাহকে মহান বলা (“আল্লাহু আকবার”)
تسبيح তাসবীহ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা (“সুবহানাল্লাহ”)
تهليل তাহলীল একত্ববাদ ঘোষণা (“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”)
تحميد তাহমীদ আল্লাহর প্রশংসা করা (“আলহামদুলিল্লাহ”)
تعظيم তা‘জীম শ্রদ্ধা, মহিমান্বিতকরণ
تكريم তাকরীম সম্মান করা, সম্মানসূচকভাবে উল্লেখ
مدّاح মাদ্দাহ্ প্রশংসাকারী ব্যক্তি (সাধারণত কাব্যিকভাবে)
محمود মাহমুদ প্রশংসিত (আল্লাহর নামের একটি রূপও)
حميد হামিদ প্রশংসাকারী বা প্রশংসিত (আল্লাহর গুণবাচক নাম)
مجيد মাজীদ মহিমান্বিত, গৌরবান্বিত (আল্লাহর গুণবাচক নাম)

🕋 বিশেষ ইসলামিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয় এমন শব্দ:

আরবি শব্দ ব্যবহার উদাহরণ
الْحَمْدُ لِلَّهِ কুরআনের সূচনা শব্দ সূরা ফাতিহা (১:২)
سُبْحَانَ اللَّهِ তাসবীহ আল্লাহর পবিত্রতা
اللَّهُ أَكْبَرُ তাকবীর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ
جَزَاكَ اللَّهُ خَيْرًا প্রশংসা ও দোয়া “আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন”

🧠 বিশেষ টিপস:

  • الحمد = সামগ্রিকভাবে সব ভালো গুণের জন্য আল্লাহকে প্রশংসা করা।
  • مدح = নির্দিষ্ট গুণ বা কাজের প্রশংসা।
  • ثناء = আনুষ্ঠানিকভাবে বা বাহ্যিকভাবে প্রশংসা করা।
  • شكر = কাজ বা অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসা।

এই সম্পর্কিত সকল আয়াত, হাদীস

------------------------------------------------------


📖 কুরআন থেকে আয়াতসমূহ (আলহামদُ lillāh)

১. সূরা আল‑ফাতিহা (১:২)

২. অন্যান্য বর্ণনা ও প্রশংসার রূপে

৩. সূরা ইব্রাহীম (14:7)

৪. সূরা আন-নাসর (110:3)


🕋 হাদীসসমূহ (সাহিহ সূত্র)

✔️ হাদীস: ছোটো‑বড়ো কাজে আনন্দে প্রশংসা

✔️ হাদীস: প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শুরু করা উচিত ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ দিয়ে

✔️ হাদীস: খাবার বা পানীয় গ্রহণের পর প্রশংসা

✔️ হাদীস: বিক্ষিপ্ত ঘটনায় ধৈর্য ও প্রশংসা

✔️ হাদীস: আল‑হামদুলিল্লাহর ফজিলত

✔️ হাদীস: ধন্যবাদ ও ধোয়াতে ফজিলত



📝 সারাংশ ও ব্যাখ্যা


📌 উপসংহার

  • কুরআনে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে আল্লাহ তাঁর নিজের প্রশংসা করেছেন, যার কেন্দ্রবিন্দু হলো আল‑হামদুলিল্লাহ
  • হাদীসে এই শব্দের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ন কর্ম, দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা ও দুর্দশায়—সবগুলোতেই স্বীকৃত ও মানব জীবনের ভিত্তি হিসেবে উপস্থাপিত।
  • তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত—হৃদয়সংগে ও ভাষায়—আল্লাহর প্রশংসা সর্বদা বরণ করা।

____________________________________

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সকল আয়াত ও হাদীস 

-------------------------------------------------


📖 কুরআন – সরাসরি ও পরোক্ষে প্রশংসার আয়াত

১. সরাসরি “الحمد لله” দিয়ে শুরু হওয়া সূরা (৫টি):


২. পরোক্ষে প্রশংসা: আল্লাহর গুণাবলীর বর্ণনা


৩. কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্যের সাথে প্রশংসার নির্দেশ:



🕋 হাদীস – সাহিহ সূত্রে প্রশংসার গুরুত্ব

✔️ সকল परिस्थितিতে ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ বলা

✔️ ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ ও ‘তাসবীহ’ নামাজ শেষে পড়ার ফজিলত


✔️ হাঁচি দেওয়ার পর ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’ বলা


✔️ প্রশংসা ও ধন্যবাদের মাধ্যমে আখিরতে পুরস্কার



🧾 সারাংশ – আমন্ত্রণমূলক তালিকা

শ্রেণি উৎস উদাহরণ
পরোক্ষ প্রশংসা গুণাবলি‑ধর্মী আয়াত اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ…, الرَّحِيم ইত্যাদি
হাদীস ধর্ম‑দৈনন্দিন জীবনে তাসবীহ, তাহমীদ, তাকবীর ও ধন্যবাদের নির্দেশনা সুখ‑দুঃখে ‘আল‑হামদুলিল্লাহ’, নামাজ পর ৩৩‑৩৩‑৩৪ বার, হাঁচির পর, ইত্যাদি

📌 উল্লেখযোগ্য টিপস:

  • সরাসরি আয়াতগুলো হলো “আল‑হামদুলিল্লাহ” ইঙ্গিতকারী যেখানে প্রশংসা স্বতঃপ্রকাশেই উপস্থিত।
  • অন্য আয়াতগুলো আল্লাহর গুণগান, শক্তি, করুণা, মালিকানা ইত্যাদি বর্ণনা করে পরোক্ষভাবে প্রশংসাসূচক।
  • হাদীসগুলো অন্তর্ভুক্ত প্রতিদিনের বক্তব্য ও ছোট‑বড় কাজের ইতিবাচক অনুশীলনের দিকনির্দেশনা দেয়।

 আরবীতে "প্রশংসা" এর সব আরবী বাংলা শব্দ লিখ। শাব্দিক, পারিভাষিক, শারীয়াহ পরিভাষার অর্থ বল। আর এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য বলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কেনো প্রশংসার এত শব্দ ব্যবহার করেন?

--------------------------------

নিম্নে “প্রশংসা” শব্দের আরবী প্রতিশব্দসমূহ, তাদের বাংলা অর্থ, শাব্দিক ও পারিভাষিক ব্যাখ্যা, এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। এরপর ব্যাখ্যা করা হবে—আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন কেন এতগুলো প্রশংসার শব্দ ব্যবহার করেছেন।


📚 ১. আরবীতে "প্রশংসা" শব্দের বিভিন্ন প্রতিশব্দ ও বাংলা অর্থ:

আরবি শব্দ বাংলা অর্থ শব্দমূল ধরণ
حَمْد (হাম্দ) অকুণ্ঠ ও যথাযথ প্রশংসা ح م د শারঈ, পারিভাষিক
مَدْح (মাদহ) গুণ বর্ণনা করে প্রশংসা م د ح সাধারণ পারিভাষিক
ثَنَاء (সানা) পূর্ণ প্রশংসা ও গুণগান ث ن ى শাব্দিক
تَسْبِيح (তাসবীহ) পবিত্রতা ঘোষণা করে প্রশংসা س ب ح ইবাদতের পরিভাষা
تَحْمِيد (তাহমীদ) "الحمد لله" বলা ح م د ইবাদতের পরিভাষা
مَجْد (মাজদ) মহিমা ও সম্মানিত প্রশংসা م ج د উচ্চ মর্যাদার ইঙ্গিত
تَعْظِيم (তা'যীম) মহত্ব স্বীকৃতি ع ظ م সম্মানসূচক প্রশংসা

📖 ২. শব্দগুলোর অর্থ ও ব্যাখ্যা:

🔹 1. حمد (হাম্দ)

  • শাব্দিক অর্থ: গুণ ও কৃতজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রশংসা করা।
  • শারঈ ব্যবহার: শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য নির্ভেজাল, পূর্ণাঙ্গ প্রশংসা।
  • উদাহরণ: “الحمد لله رب العالمين”

🔹 2. مدح (মাদহ)

  • শাব্দিক অর্থ: কারো ভালো দিক, গুণ বা কাজের উপর ভিত্তি করে প্রশংসা করা।
  • ব্যবহার: মানুষ, জিনিস, এমনকি আল্লাহর জন্যও ব্যবহৃত হয়।
  • পার্থক্য: এটি “হাম্দ” এর তুলনায় কম গভীর এবং মাঝে মাঝে নিরেট ভাতৃত্ব বা পক্ষপাতমূলক হতে পারে।

🔹 3. ثناء (সানা)

  • অর্থ: পুনরাবৃত্ত গুণগান করা বা বাহুল্যপূর্ণ প্রশংসা।
  • ব্যবহার: উচ্চতর স্তরের প্রশংসা। হাদীসে “اللهم لك الحمد، ولك الثناء” আছে।

🔹 4. تسبيح (তাসবীহ)

  • অর্থ: আল্লাহকে সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করা (SubhanAllah)।
  • ব্যবহার: এটি নেতিবাচক রূপে প্রশংসা—অর্থাৎ আল্লাহ ত্রুটি-দোষমুক্ত।
  • পার্থক্য: এটি গুণাবলির পরিবর্তে তাঁর পবিত্রতা ও অপারগতা জাহির করে।

🔹 5. تحميد (তাহমীদ)

  • অর্থ: “الحمد لله” বলা—সরাসরি আল্লাহর প্রশংসা।
  • ব্যবহার: ইবাদতের রোকন হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

🔹 6. مجد (মাজদ)

  • অর্থ: মহিমা বা গৌরবের প্রশংসা।
  • ব্যবহার: উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, রাজকীয় ও অতুলনীয় সত্ত্বার গুণ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়।

🔹 7. تعظيم (তা'যীম)

  • অর্থ: কারো গুরুত্ব ও মর্যাদার স্বীকৃতি।
  • ব্যবহার: শ্রদ্ধার প্রশংসা—আল্লাহ, কুরআন, বা রাসূলের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।

🔍 ৩. পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য:

বিষয় حمد مدح ثناء تسبيح مجد
গভীরতা সর্বোচ্চ মাঝারি উচ্চ পবিত্রতা রাজকীয় মহিমা
উদ্দেশ্য কৃতজ্ঞতা ও গুণ গুণ গুণগান দোষমুক্ত ঘোষণা সম্মান
শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ✅ (মূলত)
ইবাদতের অংশ

🕌 ৪. আল্লাহ কেন এতগুলো প্রশংসার শব্দ ব্যবহার করেন?

✨ কারণসমূহ:

  1. আল্লাহর গুণাবলি অগণন – প্রতিটি শব্দ আল্লাহর গুণের একটি বিশেষ দিক তুলে ধরে।

    • حمد — কৃতজ্ঞতা
    • تسبيح — পবিত্রতা
    • مجد — মহিমা
    • ثناء — গুণগান
  2. বিভিন্ন প্রসঙ্গে উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগের প্রয়োজন

    • কুরআনের বিভিন্ন সূরায় প্রসঙ্গভেদে শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে।
  3. মানব মস্তিষ্কের সীমাবদ্ধতা পূরণে – মানুষ আল্লাহর প্রশংসা পুরোপুরি ধরতে পারে না; তাই নানান শব্দে আল্লাহ নিজেই প্রশংসার রূপগুলো ব্যাখ্যা করেছেন।

  4. ইবাদতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি – একই প্রশংসা বারবার নয়, বরং নানা রূপে—মনের গভীরতা ও নফসকে তৃপ্ত করে।

  5. শিক্ষাগত প্রভাব – প্রতিটি শব্দ দিয়ে মানুষকে আল্লাহর বিভিন্ন গুণ সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া হয়।


🔚 উপসংহার:

"প্রশংসা" এর আরবী প্রতিশব্দসমূহ— حمد, مدح, ثناء, تسبيح, تحميد, مجد, এবং تعظيم —সবই আল্লাহর এক একটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরতে ব্যবহৃত। যদিও এদের অর্থ প্রায় কাছাকাছি, প্রতিটির ব্যবহারে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য ও সৌন্দর্য আছে। আল্লাহর অসীম গুণাবলির পূর্ণতা ও মহত্ত্ব বোঝাতেই তিনি নিজেই বিভিন্ন শব্দের মাধ্যমে নিজেকে প্রশংসিত করেছেন।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Heartfelt Thanks for your valuable comments.

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

প্রেম আর ভালোবাসা কবিতাটির সারাংশ বা সারমর্ম চাই

কবিতাটির সারাংশ বা সারমর্ম চাই প্রেম আর ভালোবাসা ___আরিফ শামছ্ দৃষ্টির সীমানায়, হৃদয়ের মোহনায়, কে এলো? কে যায়? জান্নাতী সমীরণে, বাসনার ঢেউ ...