আল্লাহর আত্মপ্রশংসা: কুরআন ও তাওহীদের দৃষ্টিকোণ থেকে
🕌 আল্লাহর আত্মপ্রশংসা: কুরআন ও তাওহীদের দৃষ্টিকোণ থেকে
✍️ লেখক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)
📍 রিয়াদ, সৌদি আরব
📅 আগস্ট ২০২৫
🔰 ভূমিকা
"আলহামদু লিল্লাহ" — এ শব্দবন্ধটি মুসলমানের জীবনের প্রতিটি স্তরে বারবার উচ্চারিত হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনের অনেক জায়গায় নিজেই নিজেকে প্রশংসা করেছেন। সাধারণভাবে আত্মপ্রশংসা যদি নেতিবাচক হয়, তবে কেন আল্লাহ নিজেই এমন করেছেন? এটি কি তাওহীদের পরিপন্থী? নাকি তা একটি পরিপূর্ণ স্রষ্টার প্রাপ্য? এই প্রশ্নগুলো আমাদেরকে কুরআনের আয়াতগুলো গভীরভাবে অনুধাবন করতে সাহায্য করে।
📖 প্রথম অধ্যায়: আত্মপ্রশংসার সংজ্ঞা ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
✅ আত্মপ্রশংসা কী?
আত্মপ্রশংসা মানে নিজের গুণাবলি, কৃতিত্ব, ক্ষমতা ইত্যাদি নিজ মুখে বা লেখায় উল্লেখ করা। মানুষ যখন এটি করে, তখন অহংকার বা বাড়াবাড়ির ঝুঁকি থাকে। কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।
✅ ইসলামী দৃষ্টিকোণ:
আল্লাহই একমাত্র সত্তা, যিনি নিজেকে প্রশংসা করতে পারেন — কারণ:
- তিনি পরিপূর্ণ (الكامل),
- তিনি চিরসত্য (الحق),
- তিনি দোষমুক্ত (المنزّه).
📖 দ্বিতীয় অধ্যায়: কুরআনে আল্লাহর আত্মপ্রশংসার আয়াতসমূহ
🕋 ১. সূরা ফাতিহা (১:২):
"আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন"
অর্থ: "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি জগতসমূহের পালনকর্তা।"
🕋 ২. সূরা আন’আম (৬:১):
“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন...”
🕋 ৩. সূরা কাহফ (১৮:১):
“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন...”
🕋 ৪. সূরা সাবা (৩৪:১):
“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যাঁর মালিকানা রয়েছে আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে।”
🕋 ৫. সূরা ফাতির (৩৫:১):
“সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা...”
👉 পাশাপাশি আরও ৪০+ আয়াতে আল্লাহ নিজ গুণাবলি বর্ণনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে আত্মপ্রশংসা করেছেন, যেমন:
- “আল্লাহু আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির” — তিনি সর্বশক্তিমান।
- “আল্লাহু রউফুর রাহিম” — তিনি করুণাময় ও দয়ালু।
- “আল্লাহ খাইরুর রাযিকীন” — তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।
📖 তৃতীয় অধ্যায়: কেন আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন?
🟢 ১. কারণ তিনিই একমাত্র প্রকৃত প্রশংসার যোগ্য।
- মানুষ বা অন্য সৃষ্টি যতই উত্তম হোক না কেন, তার গুণ সীমিত ও অস্থায়ী।
- আল্লাহর গুণ পরিপূর্ণ, চিরন্তন ও নির্ভুল।
🟢 ২. বান্দাদের শেখানোর জন্য।
- "আলহামদু লিল্লাহ" বলা যেন কেবল মুখস্থ বাক্য না হয়, বরং হৃদয়ের গভীরতা থেকে শ্রদ্ধা আসে।
🟢 ৩. তাওহীদের ভিত্তি নির্মাণের জন্য।
- সব গুণ ও শক্তির উৎস যে আল্লাহ, তা বুঝিয়ে শিরক থেকে মুক্তির দিকনির্দেশনা।
🟢 ৪. ইবাদতের ভাষা নির্ধারণের জন্য।
- কুরআনের মাধ্যমেই মানুষ শিখে কিভাবে আল্লাহর প্রশংসা করতে হয়।
📖 চতুর্থ অধ্যায়: ইজমা, কিয়াস ও ইমামদের দৃষ্টিভঙ্গি
⚖️ ইজমা (ঐক্যমত):
সমস্ত সালাফ ও খলাফ ওলামাগণ একমত যে:
"আল্লাহর আত্মপ্রশংসা ঈমান ও তাওহীদের অন্যতম স্তম্ভ।"
⚖️ কিয়াস (অনুরূপ বিশ্লেষণ):
যেমন রিজিকের জন্য আমরা শুকরিয়া আদায় করি,
তেমনি সৃষ্টি, দয়া, হিদায়াতের জন্য আল্লাহর আত্মপ্রশংসা ও গ্রহণযোগ্য।
👤 ইমাম গাজ্জালী (রহ.):
“আল্লাহর আত্মপ্রশংসা হলো বান্দার জন্য প্রশংসার ভাষা তৈরি করা, যেন সে সঠিকভাবে ইবাদত করতে পারে।”
👤 ইমাম ইবনে তায়মিয়্যা (রহ.):
“আল্লাহ নিজের প্রশংসা করেছেন, কারণ বান্দারাও যেন তা বুঝে, শিখে এবং অন্তরে গ্রহণ করে।”
📖 পঞ্চম অধ্যায়: প্রশংসার প্রভাব ও প্রয়োজনীয়তা
প্রয়োজন | ব্যাখ্যা |
---|---|
🎯 আকীদা মজবুত | আল্লাহর গুণ ও কাজ জানলে বিশ্বাস দৃঢ় হয় |
🧠 চিন্তার পরিপক্বতা | মানুষ ভাবতে শেখে: আমি কার দাস? কার উপর নির্ভর করবো? |
🤲 ইবাদতে একাগ্রতা | আত্মপ্রশংসার আয়াত অন্তরকে প্রস্তুত করে বন্দেগির জন্য |
💓 আল্লাহর ভালোবাসা ও ভয় | গুণ জানলে শ্রদ্ধা ও ভয় তৈরি হয় |
📘 উপসংহার
আল্লাহর আত্মপ্রশংসা কুরআনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এটি কেবল তথ্য নয়, বরং ঈমান, তাওহীদ, চিন্তা, দোয়া ও ইবাদতের ভিত্তি। যিনি এই আয়াতগুলো অন্তরে গ্রহণ করেন, তার হৃদয় হয় আল্লাহমুখী, অহংকারমুক্ত এবং পূর্ণভাবে আল্লাহর প্রশংসায় নিয়োজিত।
আল্লাহ বলেন:
"তোমার পালনকর্তার নাম উচ্চারণ কর এবং তাঁর উদ্দেশ্যে আত্মনিয়োগ করো।" (সূরা মুজাম্মিল ৭৩:৮)
📌 পরিশিষ্ট (Appendix):
✅ কুরআনে প্রশংসাসূচক শব্দগুলোর তালিকা:
- الحمد (সকল প্রশংসা)
- سبحان (পবিত্রতা)
- تبارك (বরকতময়তা)
- عظيم (মহানতা)
- رحيم (দয়ালু)
- عليم (জ্ঞানী)
- قدير (সর্বশক্তিমান)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Heartfelt Thanks for your valuable comments.