বুধবার, আগস্ট ০৬, ২০২৫

সকল প্রশংসার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা'আলা

প্রশংসা (হামদ) — ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। নিচে এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ দেওয়া হলো কুরআন, হাদীস, ইজমা, কিয়াস ও ইসলামী পণ্ডিতদের মতামতসহ।


🟩 প্রশংসা কী?

আরবি: الحمد (Al-Hamd)
বাংলা অর্থ: ভালো গুণাবলির স্বীকৃতি দিয়ে কাউকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো, প্রশংসাসূচক শব্দ বা কাজের মাধ্যমে।

📌 সংজ্ঞা:

প্রশংসা হলো এমন একটি ইতিবাচক প্রকাশ যেখানে কোনো ব্যক্তি বা সত্তার উত্তম গুণ, কার্যকলাপ বা বৈশিষ্ট্যকে স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা জানানো হয়।


🟩 প্রশংসার প্রকারভেদ (ইসলামী পরিভাষায়):

প্রশংসা মূলত ২ প্রকার:

১. আল্লাহর প্রশংসা (Hamd)

  • একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত, যিনি সকল গুণে গুণান্বিত, সব কিছুর স্রষ্টা।
  • এটি ইবাদতের অংশ।
  • কুরআনের সূচনা হয় এভাবেই:

    "আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল 'আলামীন"
    অর্থ: "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সব জগতের পালনকর্তা।" (সূরা ফাতিহা ১:২)

২. মানুষের বা সৃষ্ট জীবের প্রশংসা (Madh / Thanaa)

  • কাউকে তাঁর বৈধ গুণ, কাজ বা নেক আমলের জন্য প্রশংসা করা।
  • শর্ত হলো — এটি সীমা অতিক্রম না করে, এবং আল্লাহর প্রশংসার জায়গা না নেয়।

🟩 কেনো এবং কাকে প্রশংসা করা উচিত?

▶️ আল্লাহর প্রশংসা কেনো?

  1. তিনিই সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতা।
  2. তাঁর সব গুণই পরিপূর্ণ ও উত্তম (আস্মা উল হুসনা)।
  3. প্রশংসা তাঁকেই মানায়, কারণ সব কল্যাণ ও শক্তির মূল উৎস তিনি।

📖 কুরআনে এসেছে:

"তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহর প্রশংসা করো, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।"
(সূরা আল-আন’আম ৬:১)

▶️ মানুষ বা অন্য কারো প্রশংসা কখন ও কেনো?

  1. উৎসাহ ও নেক কাজে অনুপ্রেরণা দিতে।
  2. সামাজিক সৌহার্দ্য ও সম্পর্ক রক্ষায়।
  3. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে।
  4. কারো অধিকার স্বীকৃতি দিতে।

⚠️ শর্ত:

  • প্রশংসা যেন চাটুকারিতা না হয়।
  • যেন কারো মাঝে অহংকার সৃষ্টি না করে।
  • যেন তা আল্লাহর প্রশংসার সমকক্ষ না হয়।

🟩 হাদীসে প্রশংসার নির্দেশ ও সতর্কতা

পজিটিভ উদাহরণ:

রাসূল ﷺ বলেছেন:

“যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ নয়।”
— (তিরমিযী)

⚠️ সতর্কতা:

রাসূল ﷺ বলেন:

“তোমরা অতিরিক্ত প্রশংসাকারীদের মাটি দিয়ে মুখ ভরে দাও।”
— (মুসলিম)

অর্থাৎ অতিরিক্ত, অপ্রাসঙ্গিক প্রশংসা থেকে বিরত থাকা জরুরি।


🟩 ইজমা ও কিয়াস অনুযায়ী ব্যাখ্যা:

✔️ ইজমা (ঐকমত্য):

সমস্ত ওলামা একমত —
আল্লাহর প্রশংসা ঈমানের অংশ।
মানুষের বৈধ প্রশংসা করা বৈধ ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রশংসনীয়।

✔️ কিয়াস (অনুরূপ নির্ণয়):

যেমন দানের পরে “জাযাকাল্লাহ খাইরান” বলা হয়, তেমনি— ✅ নেক আমল ও উত্তম চরিত্রের প্রশংসাও ইবাদতের মতো ফজিলতপূর্ণ।


🟩 ইমামদের ব্যাখ্যা:

◼️ ইমাম গাজ্জালী (রহ.):

তিনি বলেন:

“আল্লাহর প্রশংসা হলো বান্দার হৃদয়ের সর্বোচ্চ রূহানী পর্যায়। কারণ এতে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।”

◼️ ইমাম নববী (রহ.):

“মানুষের মাঝে সদাচরণ ও সৌজন্যবোধের জন্য সঠিক প্রশংসা অনুমোদিত। কিন্তু তাতে বাড়াবাড়ি ও মিথ্যা যেন না থাকে।”


🟩 প্রশংসার প্রয়োজনীয়তা (উল্লেখযোগ্য দিক):

দিক গুরুত্ব
🎯 আধ্যাত্মিক আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়।
🤝 সামাজিক ভ্রাতৃত্ব, কৃতজ্ঞতা ও সৌহার্দ্য বাড়ে।
💖 ব্যক্তিত্ব মানুষ উৎসাহ পায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
নিয়ন্ত্রণ চাটুকারিতা ও মিথ্যা প্রশংসা থেকে দূরে থাকতে শেখায়।

সংক্ষেপে উত্তর:

প্রশ্ন উত্তর
প্রশংসা কী? গুণের স্বীকৃতি দিয়ে সম্মান প্রকাশ।
কাকে করা উচিত? মূলত আল্লাহকে, এবং সীমিতভাবে সৎ মানুষকে।
কেনো? আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও বান্দার প্রতি সৌজন্য প্রকাশে।
কত প্রকার? মূলত দুই প্রকার— আল্লাহর জন্য ও মানুষের জন্য।
শর্ত মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত না হওয়া, আল্লাহর প্রশংসার জায়গায় না নেওয়া।

📘 উপসংহার:

প্রশংসা ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সামাজিক আচরণ। আল্লাহর প্রশংসা সর্বোচ্চ স্তরে ও সবসময় আবশ্যক। অন্যদের প্রশংসা শিষ্টাচার, সৌজন্য ও নৈতিকতা রক্ষা করে — তবে সেটি যেন সর্বদা সীমার মধ্যে থাকে।


আল্লাহ ﷻ কুরআনুল কারিমে অসংখ্য আয়াতে নিজেকে প্রশংসা করেছেন। এভাবে নিজের প্রশংসা করা শুধু আল্লাহর ক্ষেত্রেই শোভনীয় ও যথাযথ, কারণ তিনিই সকল গুণ, ক্ষমতা, সৃষ্টির মালিক এবং দোষহীন। নিচে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:


🟩 প্রথমে সরল উত্তর:

📌 প্রশ্ন ১: আল্লাহ কত জায়গায় কুরআনে নিজের প্রশংসা করেছেন?

🔹 "الحمد لله" (আলহামদু লিল্লাহ = সকল প্রশংসা আল্লাহর) বাক্যটি সরাসরি এসেছে প্রায় ৫টি স্থানে:

সূরা আয়াত আয়াতের অর্থ
সূরা ফাতিহা ১:২ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের পালনকর্তা।"
সূরা আন'আম ৬:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন..."
সূরা কাহফ ১৮:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন..."
সূরা সাবা ৩৪:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সব তাঁরই..."
সূরা ফাতির ৩৫:১ "সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা..."

🔹 এছাড়াও আরও বহু আয়াতে (৪০+ জায়গায়) আল্লাহ নিজ গুণাবলি, দয়া, মহিমা, কুদরত, হিকমত, কিবরিয়া, মালিকানা ইত্যাদি উল্লেখ করে পরোক্ষভাবে নিজ প্রশংসা করেছেন।


🟩 প্রশ্ন ২: কেনো আল্লাহ নিজেই নিজের প্রশংসা করেছেন?

📌 কারণসমূহ:

✅ ১. আল্লাহ একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি যিনি নিজের প্রশংসা করতে পারেন।

  • মানুষের মাঝে আত্মপ্রশংসা গর্ব, অহংকার বা সীমালঙ্ঘন হতে পারে।
  • কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা কোনো বাড়াবাড়ি নয়; বরং তাঁর প্রকৃত অবস্থা ও গুণের স্বীকৃতি।

✅ ২. তাঁর বান্দাদের শেখানোর জন্য।

  • বান্দারা যেন আল্লাহর প্রশংসা করে।
  • যেমন: ফাতিহা সূরায় “আলহামদু লিল্লাহ” শেখানো হয়েছে — এটা সব নামাজে আবশ্যক।

✅ ৩. তাওহীদের মৌলিক পরিচয় ও ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য।

  • যেন মানুষ বুঝতে পারে: সব গুণ, মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য।
  • এটা শিরক বিরোধী বার্তা — অন্য কারো মহিমা ও শক্তিকে আল্লাহর সমকক্ষ ভাবা চলবে না।

✅ ৪. আল্লাহর কুদরতের বর্ণনা দিতে গিয়ে নিজ গুণাবলি প্রকাশ।

  • যেন মানুষ চিনে নেয়, কে তাঁদের রব, এবং কার উপর নির্ভর করা উচিত।

🟩 প্রশ্ন ৩: এই আয়াতগুলোর প্রয়োজনীয়তা কী ছিল?

📌 প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য:

বিষয় ব্যাখ্যা
🎯 আকীদা মজবুত করা বান্দাদের ঈমান ও তাওহীদ স্পষ্ট করতে
🕋 ইবাদতের পথ দেখানো কোন সত্তার জন্য কৃতজ্ঞতা, ইবাদত ও দোয়া হবে সেটা বোঝাতে
🧠 চেতনা ও জ্ঞান দান আল্লাহর গুণাবলি জানলে বান্দা চিন্তাশীল হয়, গাফলতি দূর হয়
💞 ভালোবাসা ও ভয় সৃষ্টি প্রশংসার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা বাড়ে
📿 দোয়া ও ইবাদতের ভাষা শেখানো "আলহামদু লিল্লাহ" সহ বিভিন্ন যিকির আয়াত মানুষের মুখে সহজ করে দেওয়া

🟩 বিশিষ্ট ইসলামী পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা:

◼️ ইমাম ইবনে কাসীর (রহ.):

“আল্লাহ নিজের প্রশংসা করেছেন, যেন তাঁর বান্দারাও একই ভাষায় তাঁকে ডাকতে ও বুঝতে পারে।”

◼️ ইমাম রাযী (রহ.):

“আল্লাহর আত্মপ্রশংসা এমন এক সত্য, যেটা অপরিহার্য — কারণ তিনি সব কিছুর উৎস ও শেষ গন্তব্য।”


🟩 উপসংহার:

🔹 কুরআনে ৫টি জায়গায় সরাসরি "আলহামদু লিল্লাহ" বলা হয়েছে, এবং অনেক আয়াতে আল্লাহ নিজের গুণাবলি বর্ণনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নিজ প্রশংসা করেছেন।

🔹 আল্লাহর আত্মপ্রশংসা কোনো অহংকার নয়; বরং বান্দাদের জন্য দিকনির্দেশনা, তাওহীদের শিক্ষা এবং কৃতজ্ঞতার ভাষা।

🔹 মানুষের উচিত এই প্রশংসা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি করা।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Heartfelt Thanks for your valuable comments.

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

প্রেম আর ভালোবাসা কবিতাটির সারাংশ বা সারমর্ম চাই

কবিতাটির সারাংশ বা সারমর্ম চাই প্রেম আর ভালোবাসা ___আরিফ শামছ্ দৃষ্টির সীমানায়, হৃদয়ের মোহনায়, কে এলো? কে যায়? জান্নাতী সমীরণে, বাসনার ঢেউ ...