শুক্রবার, আগস্ট ২২, ২০২৫

আল্লাহকে বোঝার জন্য “রব” (رَبّ) শব্দের মানে ও প্রমাণ জানা জরুরি।

আল্লাহকে বোঝার জন্য “রব” (رَبّ) শব্দের মানে ও প্রমাণ জানা জরুরি।

চলুন ধাপে ধাপে দেখি:


১️⃣ রব কে?

রব একমাত্র আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা।

  • তিনিই আসমান-জমিন, মানুষ, প্রাণী, গাছপালা, নক্ষত্র—সব কিছুর স্রষ্টা।
  • তিনিই প্রতিটি বস্তুকে জীবন, রিযিক, দিকনির্দেশ ও পরিণতি দেন।
  • রব মানেই যিনি লালন-পালনকারী, রক্ষা করেন, অভাব পূরণ করেন এবং ধ্বংসের পর পুনরায় জীবিত করবেন।

📖 কুরআনের প্রমাণ:

"সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বের রব।"
(সূরা ফাতিহা ১:২)


২️⃣ রব অর্থ কী?

আরবি “رَبّ” (রব) শব্দের মূল অর্থ:

  • স্রষ্টা (Creator) – যিনি সৃষ্টি করেছেন।
  • মালিক (Owner) – যিনি সব কিছুর মালিক।
  • পরিচালক (Controller/Administrator) – যিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন।
  • লালন-পালনকারী (Nurturer/Sustainer) – যিনি সৃষ্টিকে রিজিক দেন, বেড়ে উঠতে সাহায্য করেন।
  • সংস্কারকারী ও পরিণতিদাতা (Developer/Perfecter) – যিনি অসম্পূর্ণকে পূর্ণতায় পৌঁছে দেন।

➡️ তাই “রব” মানে শুধু “প্রভু” নয়; বরং সৃষ্টি করা, মালিকানা, পরিচর্যা, দিকনির্দেশ ও রক্ষা—সব অর্থ একত্রে বোঝায়।


৩️⃣ রব হওয়ার প্রমাণ কী?

কুরআন থেকে:

  • “বলুন, তোমাদের রব কে? তিনিই যিনি সৃষ্টি করেছেন, রিযিক দিচ্ছেন, জীবন দেন, মৃত্যু দেন।”
    (সূরা ইউনুস 10:31)

  • “আল্লাহই তোমাদের রব, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, তারপর আরশের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।”
    (সূরা আল-আ’রাফ 7:54)

হাদীস থেকে:

রাসূল ﷺ বলেছেন:

“হে আল্লাহ, তুমি আমার রব; তোমাকে ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার বান্দা।”
(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম – সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার)

যুক্তি (বুদ্ধি/আক্ল থেকে):

  • যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও রুবুবিয়াত থাকতো, তবে পৃথিবীতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা হতো।
  • আকাশ-জমিন, দিন-রাতের নিয়ম, রিজিকের বণ্টন—এসব প্রমাণ করে একমাত্র রব আছেন, যিনি সবকিছু পরিচালনা করেন।

সারাংশ:
“রব” মানে একমাত্র আল্লাহ্‌, যিনি সৃষ্টি করেছেন, মালিক, লালন-পালন করেন, এবং আমাদের জীবন-মৃত্যু ও পরকাল তিনিই নির্ধারণ করেন।


 কুরআনে আল্লাহ যেখানে “রব” বলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন—সেসব সব আয়াতের তালিকা  

নিম্নে এমন কয়েকটি কুরআনের আয়াত দেওয়া হলো, যেখানে আল্লাহ “رَبّ” (রব) শব্দ ব্যবহার করে নিজের পরিচয় দিয়েছেন বা নিজেকে রব হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাংলা ও সূরার নম্বরসহ সেটি উপস্থাপন করছি:


১. সূরা আল-ইখলাস (১)

  • قُلۡ أَغَيۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِي رَبّٗا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيۡءٖ
  • বাংলা অর্থ: বলো, “আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো রব অনুসন্ধান করব অথচ তিনি সব কিছুর রব?”
  • সূত্র:

২. সূরা আল-আ‘রাফ (৭:৫৪)

  • أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
  • বাংলা অর্থ: “শুনে রাখো—সৃষ্টি ও আদেশ একমাত্র তারই কাজ। বরকতময় আল্লাহ, জগৎসমূহের রব।”
  • সূত্র:

৩. সূরা ফাতির (৩৫:১৩)

  • ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمُ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ
  • বাংলা অর্থ: “এটাই আল্লাহ, তোমাদের রব; সাম্রাজ্য তারই, আর তোমরা যাদের ডাকো তারা একটি খেজুর আঁটি আবরণের মালিকও না।”
  • সূত্র:

৪. সূরা আর-রাদ (১৩:১৬)

  • قُل مَن رَبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ قُلِ اللَّهُ ... قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
  • বাংলা অর্থ: “বলুন, আসমান ও পৃথিবীর রব কে? বলো, আল্লাহ। ... বলো, আল্লাহই সকল কিছুর স্রষ্টা, এবং তিনি এক, সর্বশক্তিমান।”
  • সূত্র:

৫. সূরা বাকারা (২:২১)

  • يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
  • বাংলা অর্থ: “হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রব—the যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন—তাকে ইবাদত কর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন কর।”
  • সূত্র:

৬. সূরা হাদিদ (৫৭:৮–৯)

  • وَمَا لَكُمْ لَا تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ لِتُؤْمِنُوا بِرَبِّكُمْ
  • বাংলা অর্থ: “তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলকে অবিশ্বাস করো অথচ রাসূল (তোমাদের) আহ্বান করছেন যে, তোমরা তোমাদের রব—উপর ঈমান আনো।”
  • সূত্র:

৭. সূরা আন-নহল (১৬:১২৫)

  • ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ...
  • বাংলা অর্থ: “হিকমত এবং সুন্দর বয়ানে তোমার রবের পথে আহ্বান কর।”
  • সূত্র:

এছাড়াও, অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত রয়েছে যা মূলত দোয়ার মধ্যে ‘হে আমাদের রব…’ এই রূপেই ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন:

  • فُسِيلَة (৪১):৩০: “…যারা বলেন, 'আল্লাহ ই আমাদের রব', তারপর তারা দৃঢ় থাকে, — ফেরেশতারা তাদের উপর অবতীর্ণ হয়…”

    This is a beautiful reminder of the power of steadfastness coupled with declaring Allah as Rabb.

  • আরও অনুরূপ অনেক দোয়া সূরাতে আছে একান্ত ভাবে মনযোগে।


সারসংক্ষেপ:

নীচে ইংরেজিতে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেয়া হলো আল্লাহ যেখানে নিজেকে “রব” হিসেবে উল্লেখ করেছেন:


আরও আয়াতের সম্পূর্ণ তালিকা, আরবি ও বাংলা অনুবাদসহ বা তাফসীর সহ সমন্বয়  

 🌹কুরআনে আল্লাহ যেখানে “رَبّ” (রব) বলে নিজের পরিচয় দিয়েছেন সেসব আয়াতের পূর্ণ তালিকা :

⚠️ তবে মনে রাখতে হবে — “রব” শব্দটি এত বেশি (৯০০+ বারের মতো) এসেছে যে একবারে সব লেখা সম্ভব নয়। অনেক জায়গায় “رَبّ العالمين” (সকল জগতের রব), “رَبّ السموات والأرض” (আসমান-জমিনের রব), আবার অনেক জায়গায় বান্দাদের দোয়ার মধ্যে এসেছে — যেমন “رَبَّنَا آتِنَا…” (হে আমাদের রব, আমাদের দাও)।

তাই সুবিধার জন্য কয়েকটি ভাগে সাজাচ্ছি:


🕌 কুরআনে আল্লাহর পরিচয় “রব” হিসেবে (প্রধান আয়াতসমূহ)

১️⃣ সূরা ফাতিহা (১:২)

ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সকল জগতের রব।


২️⃣ সূরা বাকারা (২:২১)

يَا أَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُمۡ
হে মানুষ, তোমাদের রবের ইবাদত কর—যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন।


৩️⃣ সূরা আ‘রাফ (৭:৫৪)

تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ
বরকতময় আল্লাহ, যিনি জগতসমূহের রব।


৪️⃣ সূরা ইউনুস (১০:৩১)

قُلۡ مَن يَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ… فَسَيَقُولُونَ ٱللَّهُ فَقُلۡ أَفَلَا تَتَّقُونَ
বলো, কে তোমাদের আসমান ও জমিন থেকে রিজিক দেন? … তারা বলবে, আল্লাহ। বলো, তবে কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?


৫️⃣ সূরা রা‘দ (১৩:১৬)

قُلۡ مَن رَّبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ قُلِ ٱللَّهُ
বলো, আসমান ও জমিনের রব কে? বলো, আল্লাহ।


৬️⃣ সূরা ইসরা (১৭:১০২)

قَالَ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَآ أَنزَلَ هَٰٓؤُلَآءِ إِلَّا رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ بَصَآئِرَ
(মূসা আ. ফেরাউনের কাছে) বললেন, তুমি তো জানো এগুলো একমাত্র আসমান ও জমিনের রবই নাজিল করেছেন।


৭️⃣ সূরা মুমিনুন (২৩:৮৪-৮৯)

قُلۡ لِّمَنِ ٱلۡأَرۡضُ وَمَن فِيهَآ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ • سَيَقُولُونَ لِلَّهِ
বলো, জমিন ও তাতে যা কিছু আছে, তার মালিক কে? … তারা বলবে, আল্লাহ।


৮️⃣ সূরা সাজদা (৩২:৪)

ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ … ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ مَا لَكُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيّٖ وَلَا شَفِيعٍۚ
আল্লাহই আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন… তিনিই আরশে প্রতিষ্ঠিত। তোমাদের তাঁর বাইরে আর কোনো রব নেই।


৯️⃣ সূরা ফুসসিলাত (৪১:৩০)

إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ…
যারা বলে, ‘আমাদের রব আল্লাহ’, তারপর সে কথায় অটল থাকে…


🔟 সূরা আন-নাস (১১৪:১–৩)

قُلۡ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلنَّاسِ • مَلِكِ ٱلنَّاسِ • إِلَٰهِ ٱلنَّاسِ
বলো, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের রবের কাছে, মানুষের মালিকের কাছে, মানুষের উপাস্যর কাছে।


📖 মোট কতবার এসেছে?

📌 “رَبّ” (রব) শব্দটি কুরআনে প্রায় ৯৭০+ বার এসেছে।
📌 এর মধ্যে “رَبّ العالمين” (সমস্ত জগতের রব) সবচেয়ে বেশি বার এসেছে।
📌 অনেক স্থানে আল্লাহ নিজে বলেছেন “رَبُّكُم” (তোমাদের রব আমি), আবার অনেক স্থানে বান্দারা দোয়া করেছে “رَبَّنَا” (হে আমাদের রব)।


Source: ChatgptAI2025 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Heartfelt Thanks for your valuable comments.

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিস্তারিত বিশ্লেষণ

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অপরাধীদের বিস্তারিত বিশ্লেষণ দাও। বিশ্বের সকল দেশ ও সংস্থাগুলো মিলেও কি শাস্তি দিতে পারবেনা? ...