পৃথিবীতে নির্মিত প্রাচীন বিশাল প্রাচীরের বিস্তারিত বর্ণনা সহ কোন প্রাচীর কে বা কারা, কখন, কী দিয়ে এবং কেন, কীভাবে তৈরি করেছিলো?
ChatgptAI2025:
পৃথিবীতে বেশ কয়েকটি প্রাচীন বিশাল প্রাচীর নির্মিত হয়েছে, যা ঐতিহাসিক এবং আর্কিওলজিক্যাল দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রাচীর সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হলো।
১. চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China)
- অবস্থান: চীন
- নির্মাতা: প্রথমে চীনের বিভিন্ন রাজবংশের অধীনস্থ সাম্রাজ্যের অধিবাসীরা নির্মাণ শুরু করেন, পরে একীভূতভাবে মিং সাম্রাজ্যের শাসনামলে এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয়।
- নির্মাণের সময়কাল: খ্রিস্টপূর্ব ৭ম শতাব্দী থেকে ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত সময় ধরে এর নির্মাণ চলেছে।
- প্রধান উপাদান: মাটি, ইট, কাঠ এবং পাথর
- উদ্দেশ্য: মূলত বিভিন্ন বর্বর উপজাতি ও যাযাবরদের আক্রমণ থেকে চীনা সাম্রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এই প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। এছাড়া এটি রক্ষাকবচ হিসেবে এবং সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ব্যবহৃত হতো।
- বৈশিষ্ট্য: এই প্রাচীর প্রায় ২১,১৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা বিশ্বের বৃহত্তম মানবনির্মিত কাঠামো হিসেবে চিহ্নিত।
২. হাদ্রিয়ানের প্রাচীর (Hadrian’s Wall)
- অবস্থান: যুক্তরাজ্য, ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে
- নির্মাতা: রোমান সম্রাট হাদ্রিয়ান
- নির্মাণের সময়কাল: ১২২ খ্রিস্টাব্দ
- প্রধান উপাদান: পাথর এবং মাটি
- উদ্দেশ্য: এই প্রাচীরটি রোমান সাম্রাজ্যের উত্তর সীমান্তে নির্মিত হয়েছিলো, যাতে পিকটস নামক উপজাতির আক্রমণ থেকে রোমান ব্রিটেনকে রক্ষা করা যায়।
- বৈশিষ্ট্য: এটি প্রায় ১১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এতে ৮০টি দুর্গ ছিল, যা সামরিক ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
৩. বেরলিন প্রাচীর (Berlin Wall)
- অবস্থান: জার্মানি, বার্লিন শহর
- নির্মাতা: পূর্ব জার্মানি সরকার (জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক)
- নির্মাণের সময়কাল: ১৯৬১ সালে নির্মাণ শুরু এবং ১৯৮৯ সালে ভাঙা হয়।
- প্রধান উপাদান: কংক্রিট, স্টিল এবং অন্যান্য আধুনিক নির্মাণসামগ্রী
- উদ্দেশ্য: পূর্ব এবং পশ্চিম বার্লিনকে পৃথক করার জন্য এই প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিলো, যাতে পশ্চিমে পালিয়ে যাওয়া থেকে পূর্ব জার্মানির নাগরিকদের বাধা দেয়া যায়।
- বৈশিষ্ট্য: এটি প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল এবং এতে বেশ কিছু চেকপয়েন্ট ছিল।
৪. গোরগানের লাল প্রাচীর (Great Wall of Gorgan)
- অবস্থান: ইরান
- নির্মাতা: পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের রাজা খসরু
- নির্মাণের সময়কাল: ৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দী
- প্রধান উপাদান: পাথর এবং ইট (বিশেষ করে লাল ইট ব্যবহৃত হয়েছে)
- উদ্দেশ্য: আক্রমণকারী নোম্যাডিক জনগোষ্ঠী এবং সম্ভাব্য বাইরের আক্রমণ থেকে ইরানকে সুরক্ষিত করার জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল।
- বৈশিষ্ট্য: প্রায় ১৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, এই প্রাচীরকে প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম প্রতিরক্ষা প্রাচীর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
৫. সাকসাইহুয়ামান (Sacsayhuamán)
- অবস্থান: পেরু, কুসকো শহরের কাছে
- নির্মাতা: ইনকা সাম্রাজ্য
- নির্মাণের সময়কাল: ১৫শ শতাব্দী
- প্রধান উপাদান: বিশাল পাথরের ব্লক
- উদ্দেশ্য: এটি একটি সামরিক দুর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হত, যাতে শত্রুর আক্রমণ থেকে ইনকা সাম্রাজ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
- বৈশিষ্ট্য: এই প্রাচীরটি বিশাল পাথরের ব্লক দিয়ে নির্মিত, যা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে একে অপরের সাথে ফিট করা, যাতে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে।
উপসংহার
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন বিশাল প্রাচীরগুলো নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সামরিক সুরক্ষা, আক্রমণ থেকে রক্ষা, এবং রাজনৈতিক সীমান্ত সংরক্ষণ। বিভিন্ন সাম্রাজ্যের শাসকরা তাদের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে এবং নিজেদের শাসনকে শক্তিশালী করতে এই প্রাচীরগুলো নির্মাণ করেছিলেন। এসব প্রাচীর শুধু প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনা নয়, বরং ঐতিহাসিকভাবে মানবজাতির প্রযুক্তিগত উৎকর্ষেরও নিদর্শন।
--------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Heartfelt Thanks for your valuable comments.