বৃহস্পতিবার, মে ১৫, ২০২৫

উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

 উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি



অধ্যায় ১: প্রথম দেখা



ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি অনার্স কলেজের ভর্তি কার্যক্রমের দিন। কলেজ চত্বরে উৎসবের আমেজ। ছেলেরা এক পাশে, মেয়েরা আরেক পাশে লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তি ফর্ম জমা দিচ্ছে। গ্রীষ্মের রোদে ভিজে থাকা দুপুরবেলা হলেও, আরিফের মনে আজ অন্য রকম উত্তাপ। অর্থনীতিতে অনার্স ফার্স্ট ইয়ার ভর্তি হতে এসেছে সে। চোখের কোনে হঠাৎ এক জোড়া কাজল কালো চোখ ধরা পড়ে।

মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে দুই-তিন বান্ধবীকে নিয়ে, তার দৃষ্টিতে আত্মবিশ্বাস আর চোখেমুখে এক অপার্থিব সৌন্দর্য। আরিফ চোখ সরাতে পারছে না। যেন সময় থেমে গেছে। চারপাশের কোলাহল, লাইনের শব্দ, সূর্যের তাপ—সব কিছু ম্লান। সে যেন ঢুকে পড়েছে অন্য এক জগতে। প্রথম দেখায় এমন অনুভব? এমন মোহ?

তাঁর নাম জানতে বাকি নেই বেশিদিন। পরের সপ্তাহেই কলেজের ক্লাস শুরু। উদ্বোধনী ক্লাসে সবাই একে একে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে। আরিফ যেন আগেই অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে, মেয়েটি দাঁড়াল—"আমার নাম “কবিতা বেগম।"

এই নাম যেন আরিফের হৃদয়ে অক্ষরে অক্ষরে গেঁথে গেল। মুহূর্তেই মনে হলো, তার জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। প্রেমের বীজ কি এভাবেই জন্ম নেয়? বিনা পূর্বাভাসে?

ক্লাস চলতে থাকলো। কবিতার প্রতি আরিফের মুগ্ধতা ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকলো। তার চলন, বলন, হাসি, চোখের ভাষা—সবই যেন আরিফকে টেনে নিচ্ছে এক গভীর আবেগের দিকে।

কিন্তু সে নিজের ভেতরের এই অনুভব গোপন রাখে। সহপাঠী হিসেবে কবিতার প্রতি সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে চায়। তবু, মন বড় অদ্ভুত। বারবার তাকিয়ে থাকে, সে বুঝতে পারে না, কেন এতটা টানে এই মেয়েটির দিকে।

সেই প্রথম দেখা, সেই কাজল কালো চোখ—আরিফের জীবনে এক নতুন সূর্যোদয়ের নাম।


তুমি আসবে বলে

----- আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)


আমার আকাশে নেই মেঘের আনাগোনা,

নেই বিদ্যুৎ চমকানোর ঘনঘটা,

সুস্পষ্ট নীল আসমান নির্বাক হয়ে,

দিবা-নিশি তব প্রতীক্ষায় প্রহর গুনে।

           তুমি সাজাবে তারে,

           মনের মাধুরী ঢেলে,

            অপ্সরীরা দলে দলে,

            তোমার আঙ্গিনায় রবে।

দেখ কেমন সাজহীন বাগান,

হারিয়ে ফেলেছে ভ্রমর, 

নিত্যদিনের গান,

সবুজ দূর্বাঘাস সব অনাদরে রয় পড়ে,

ফ্যাঁকাসে হলেও টিকে রয়,

তুমি আসবে বলে।

       তোমার ভালবাসায় খোঁজে পাবে,

       সঞ্জীবনী সুধা জীবনে,

        ফের উঠে দাঁড়াবার,

        সাজাতে অপরুপা আরবার।

২১/১১/২০০২ ঈসায়ী সাল।

রাত ১৩ টা ২০ মিনিট।


📘 সারাংশ / সারমর্ম

“তুমি আসবে বলে” কবিতায় কবি গভীর প্রেম ও প্রত্যাশার আবেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, প্রিয়জনের অনুপস্থিতিতে চারপাশের প্রকৃতি নিস্তেজ হয়ে পড়েছে—আকাশে নেই মেঘ, বাগানে নেই সৌন্দর্য, ভ্রমর নেই, গান নেই। তবুও সেই প্রিয়জন একদিন আসবেন—এই আশাতেই সবকিছু এখনো টিকে আছে। কবি বিশ্বাস করেন, প্রিয়জনের ভালোবাসাই হবে জীবনের সঞ্জীবনী শক্তি, যা আবার জীবনকে সাজাবে, সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনবে। কবিতাটি প্রতীক্ষা, প্রেম এবং জীবনের প্রতি আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির এক কাব্যিক প্রতিফলন।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ২: অপরিচয়ের মধ্যে সম্পর্ক



সকালের ঝিরঝিরে আলো মিশে গেছে ক্লাসরুমের জানালার কাঁচে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি অনার্স কলেজের অর্থনীতির প্রথম বর্ষের প্রথম ক্লাস। চারপাশে নতুন মুখ, নতুন উৎসাহ, নতুন আবেগ। আরিফ কিছুটা সংকোচ আর বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে চারপাশে—এই কি তবে তার স্বপ্নের শুরু?

চোখ গিয়ে আটকে গেলো এক চেনা অবয়বে। হ্যাঁ, সেই মেয়েটি—যাকে ভর্তির দিন কাউন্টারের সামনে দেখেছিল। কাজল কালো চোখ, মাথায় ওড়না, কাঁধে বইয়ের ব্যাগ, ঠোঁটে মৃদু হাসি। মনে হলো সময় যেন থেমে গেল। হৃদয়ের এক কোণে নিঃশব্দে যেন প্রেমের প্রথম বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে।

“কবিতা “নাম তার—সেটা বোঝা গেলো পরিচিতি পর্বে।

“আমি কবিতা, ফেনি থেকে এসেছি। অর্থনীতির প্রতি আগ্রহ থেকে এই সাবজেক্ট বেছে নিয়েছি।”

আরিফের বুকের ভেতর ধকধক করে ওঠে। “ফেনি থেকে এসেছে?”—বিস্ময়ের সঙ্গে যেন হৃদয়ে গড়িয়ে পড়ে একরাশ আনন্দ। নিজেই জানে না কেন, এই সাধারণ পরিচয়েই হৃদয়ে ঢেউ খেলে যাচ্ছে।

ক্লাস শেষ হলে আরিফ বের হয়ে আসে। তবু চোখ বারবার খোঁজে তাকে। ভীড়ের ভেতর এক চিলতে চোখাচোখি হয় কি হয় না—সে এক দুর্বোধ্য আকর্ষণ। আরিফ ভাবছে, “এ কেমন অনুভব? আমি কি তাকে চিনি? না, আমি তাকে শুধু অনুভব করতে শুরু করেছি।”

চরিত্রের গভীরতা:

আরিফ — সংবেদনশীল, মমতাশীল, নিঃশব্দ প্রেমিক। অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও অনুভবের গভীরতায় সমৃদ্ধ। হৃদয়ে যে প্রেম গড়ে উঠছে, তার উৎস কোথায় জানে না, তবে অনুভব করছে।

“কবিতা “— আত্মস্থ, রুচিশীল, ভাবগম্ভীর। তার চাহনিতে আভিজাত্য আর আত্মসম্মানের দীপ্তি। সে কারো প্রেমে পড়েছে কি না, বোঝা যায় না, তবে তার উপস্থিতিই আরিফের জীবনে প্রেমের শুরুর রূপরেখা এঁকে দিচ্ছে।

পরিবেশ চিত্রণ:

সরকারি কলেজের বিশাল ক্যাম্পাস, ধূলিমলিন বেঞ্চ, কাঁচের জানালায় এসে পড়া সূর্যের আলো, আর ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহে ভরা প্রথম দিনের হালকা উত্তেজনা—সবকিছু মিলিয়ে এক নিখুঁত পটভূমি গড়ে তোলে।

এই অধ্যায়টি হলো সেই সংবেদনশীল সময়ের কথা, যেখানে একটা চাহনি, একটা নাম, একটা পরিচয়—চিরন্তন ভালোবাসার বীজ বপন করে দেয়।


ভালোবাসি দিবা-নিশি

-আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)


নিরাকপরা ভর দুপুরে,

বসে আছি আনমনে,

সুখের বেলা যায় চলে যায়,

কতো দ্রুত আপন মনে।

ভাবছি কতো জীবন নিয়ে,

পাইনা ভেবে কূল,

অলস দেহে দেখছি তারে,

নেইকো কোন ভূল।

হাজির হলো কলম-খাতা,

কোমল হাতের স্পর্শে,

মনের কথা ঝরবে কবে,

ইতিহাসের গর্ভে।

ভালবাসি, কতো তারে,

বলবো কেমন করে,

মনের কথা মনে ওঠে,

মনেই ঝরে পড়ে।

নাইবা কোন ভূল আমারি,

নেইকো ছিলো তার,

ভালবাসি দিবা-নিশি,

ভালবাসে অপার।

সুবাস সেতো ফুলের মতো,

অতুল মৃগনাভীর,

সোনারোদের নরম বিকেল,

দেখি রঙ্গিন আবীর।

ভাসছে কভু সাঁঝের ভেলা,

বেলা অবেলায়,

স্বপ্ন ডিঙ্গি তীরে ভীরে,

যখন মনে চায়।

ভালবাসার তারা কতো,

দেখি তা'রই আকাশে,

প্রেমের সুবাস পাই খুঁজে পাই,

মৃদুমন্দ বাতাসে।

বাঁধ মানেনা মনের কথা,

কলম দিয়ে ঝরে,

প্রাণের প্রিয়া, যাই বলে সব,

ভালোবাসার তরে।

সকাল ১১:৩০ মিনিট,

০২/১১/২০১০ ঈসায়ী সাল।

ফখরে বাঙ্গাল নিবাস,

ভাদুঘর, সদর, বি-বাড়ীয়া-৩৪০০।


📘 সারাংশ / সারমর্ম

“ভালোবাসি দিবা-নিশি” কবিতায় কবি নিজের অনুভূতি ও ভালোবাসার এক অমলিন চিত্র তুলে ধরেছেন। কবি একটি নির্জন দুপুরে বসে আছেন, এবং তার মন বিচলিতভাবে তার প্রিয়জনের কথা ভাবছে। তিনি ভাবছেন, কিভাবে সেই ভালোবাসা প্রকাশ করবেন, যেটি তার হৃদয়ে ভীষণভাবে জমে আছে। কবি অনুভব করছেন, তার ভালোবাসা এক ধরনের অমলিন সৌন্দর্যের মতো, যা দিন-রাত, সকাল-বিকেল, সর্বদা প্রবাহিত হয়ে চলেছে। কবির কলমের মাধ্যমে তার অন্তরের অনুভূতিগুলো একেকটি কথার মাধ্যমে প্রেমিকাকে জানানো হচ্ছে। কবি বিশ্বাস করেন, প্রেম কখনো কোনো ভুল নয়, এটি এক অপরূপ অনুভূতি যা কখনো শেষ হয় না।

কবিতাটি প্রেমের সৌন্দর্য, অনুভূতির গভীরতা এবং কল্পনার সাথে বাস্তবতার সংমিশ্রণ।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ৩: ধীরে ধীরে হৃদয়ের কাছাকাছি



নতুন ক্লাস, নতুন পাঠ্যক্রম, প্রতিদিনের রুটিনে এক অদৃশ্য নিয়মিততা তৈরি হতে শুরু করে। কিন্তু এই সাধারণ নিয়মে অল্প অল্প করে ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে “কবিতা “আর আরিফের উপস্থিতি। ক্লাসে পাশাপাশি না বসলেও, চোখ দু’টি যেন প্রতিনিয়ত খুঁজে ফেরে একে অন্যকে। হয়তো কারো চোখে পড়েনা, কিন্তু হৃদয়ের দরজায় প্রতিদিন একটু করে কড়া নাড়ে সম্পর্কের এক নতুন ব্যঞ্জনা।

একদিন লাইব্রেরির বারান্দায় আরিফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল—হাতের বইটা খুলে রাখলেও মন পড়ে ছিল কোথায় যেন। হঠাৎ পাশেই দাঁড়ায় কবিতা, তার হাতে 'Development Economics'। হালকা এক দৃষ্টি বিনিময় হয়।

—"এই অধ্যায়টা বুঝেছো?"

কবিতার সরল প্রশ্ন।

—"একটু বুঝেছি, তবে পুরোপুরি না।"

আরিফের উত্তর বিনয়ী, যেন বুকের গহীন থেকে কোনো শব্দ উঠে আসে না।

একটা বই, একটা প্রশ্ন, আর সেই উত্তর—সেখানে যেন এক অদৃশ্য বন্ধনের সূচনা। ধীরে ধীরে দুজনের মাঝে বাড়ে কথাবার্তা। গ্রুপ স্টাডির নামে ক্লাসের ফাঁকে ছোট ছোট আলোচনা, কখনো ল্যাবের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, কখনো কলেজ মাঠের চায়ের দোকানে একসাথে দেখা হয়ে যাওয়া।

কবিতার হাসি যেন এক অন্যরকম আরাম নিয়ে আসে আরিফের মনে। আরিফ বোঝে, সে শুধু মোহে আটকে নেই—তাকে ভালো লাগছে। একটা শ্রদ্ধা, একটা অদ্ভুত টান।

একদিন কলেজের পিছনের বটগাছটার নিচে বসে ছিল আরিফ, চোখে গভীর চিন্তার ছাপ। “কবিতা “পাশে এসে বসলো।

—"চুপচাপ কেন?"

—"ভেবেছিলাম তুমি আসবে না আজ।"

—"কেন যাবো না? ক্লাস আছে তো। আর বন্ধুদেরও তো দরকার হয়।"

‘বন্ধু’ শব্দটা কানে বাজলো। তবে তাতে কোনো ব্যথা নয়, বরং এক ধরনের শান্তি। ভালোবাসার শুরু তো হয় বন্ধুত্ব থেকেই। আরিফ জানে, সে কোনো তাড়াহুড়ো করতে চায় না। সে শুধু প্রতিটি মুহূর্তকে অনুভব করতে চায়—কবিতার সঙ্গে কাটানো সময়কে মনে গেঁথে রাখতে চায়।

চরিত্রের রূপায়ণ:

আরিফ — ধীরে ধীরে বুঝতে পারছে যে তার ভালোবাসা নিছক আকর্ষণ নয়। প্রতিটি কথোপকথনে, প্রতিটি হাসিতে সে কবিতার মধ্যে খুঁজে পাচ্ছে এক প্রগাঢ় আত্মিক বন্ধন।

“কবিতা “— সরল, মৃদুভাষী কিন্তু আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন। তার বন্ধুত্বের পরিধি সীমিত, কিন্তু যার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তার মধ্যে দায়িত্ববোধ প্রবল।

প্রেক্ষাপটের আবহ:

কলেজের লাইব্রেরি, ক্লাসরুম, মাঠের আশেপাশে ঘোরাফেরা—এগুলো যেন রঙিন চিত্রপটের মতো। সাধারণ ছাত্রজীবনের প্রতিটি উপাদানেই হৃদয়ের আবেগ লুকিয়ে আছে, আর সেই আবেগই ভালোবাসার ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে।

এই অধ্যায়ে “কবিতা “আর আরিফ শুধু বন্ধু হয়ে ওঠে না, বরং একটি অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হতে শুরু করে—যা সময়ের সাথে সাথে হৃদয়ের গভীরে চেপে বসে।


প্রিয় তোমায় 

--আরিফ শামছ্

১৩-সেপ্টেম্বর-২০২০ ঈসায়ী সাল।


ভালোবাসার সবটুকু রেখে গেলাম

তোমার তরে,

পূর্ণ হিয়া মজেছে যে, প্রেম সাগরের

অতল তলে,

তৃষা তৃষা মরুতৃষা, মরুভূমির

চারণভূমে,

একটু সুখের পরশ লাগি,

হারায় মরন ঘুমে।

তোমার প্রেমে পাগল-পারা, 

হয়যে কেবল দিশেহারা, 

ভালো করে পথের ধারা, 

ধরতে বেলা সারা।

ভোরের পাখি মধুর সুরে,

তোমার কথা যায় স্মরে,

পূবাকাশে রোদের মেলা,

অভিমানী মেঘের ভেলা।

নিরাক পড়া ভর দুপুরে, 

মানব বিহীন বিজনভূমে,

সবুজ পাতার আঁড়াল থেকে, 

মধুর সুরে কোকিল ডাকে।

খুঁজছে রবে, ভাবছে কবে,

প্রিয় তোমায় দেখবে সবে,

তোমায় পেলে ধন্য হবে,

জীবন মরণ সফল ভবে।


হাতিরঝিল,

ঢাকা।


📘 সারাংশ / সারমর্ম

"প্রিয় তোমায়" কবিতায় কবি গভীর প্রেমের অনুভূতি ও আকুতি প্রকাশ করেছেন। তিনি তার প্রিয়জনকে তার প্রেমের সমস্ত কিছু উৎসর্গ করে দিয়েছেন এবং তার হৃদয়ের গভীরে এক অতল সাগরের মতো প্রেম লুকিয়ে রেখেছেন। কবি মরুতৃষায় ভোগা, একাকী অপেক্ষার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন, যেখানে এক মুহূর্তের সুখের জন্য তার অন্তর আকুল।

কবি তার প্রিয়জনের প্রেমে পাগল হয়ে গেছেন, এবং সেই প্রেম তাকে পথহীন, দিশাহীন করে তুলেছে। তবে, এই অবস্থাতেও কবি তার প্রিয়জনকে অনুভব করে, ভোরের পাখির গান, পূবাকাশের রোদের আলো এবং একাকী প্রকৃতির সৌন্দর্য মাঝে তার প্রিয়জনের কথা স্মরণ করছেন। কবি আশা করছেন, একদিন তাদের মিলন হবে, এবং সে মিলনে জীবন ও মরণের সফলতা আসবে।

এটি একটি প্রেমের কবিতা, যেখানে কবি তার প্রেমের অন্তর্গত যন্ত্রণা, আকাঙ্ক্ষা এবং মিলনের প্রতি গভীর আশা প্রকাশ করেছেন।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ৪: বিরহ ও অভিমান



দিনগুলো কেটে যাচ্ছিলো নিঃশব্দ অথচ স্বপ্নে মোড়া এক বন্ধুত্বের বন্ধনে। “কবিতা “ও আরিফ যেন একে অপরের ছায়া হয়ে উঠছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু কোনো গল্পই একটানা মসৃণ হয় না, আর কোনো অনুভবই চিরকাল নির্লিপ্ত থাকে না।

কলেজের পরীক্ষার আগে কবিতার পরিবারে ঘটে এক দুঃসহ ঘটনা—তার পিতা ইন্তেকাল করেন। এক আকস্মিক শোক কবিতার জীবনে ছায়া ফেলে।

খবরটা শুনে আরিফের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। তবে সে তখন ছিল ফেনীতে, এক বন্ধুর জোরাজুরিতে বেড়াতে গিয়েছিলো। ফিরে এসে জানতে পারে সেই শোকসংবাদের কথা।

পিয়াসের মুখে শোনে—““কবিতা “খুব ভেঙে পড়েছে। বলেছে, ‘আরিফ জানলেও আসেনি!’”

আরিফ যেন পাথর হয়ে যায়। ফেনী থেকে ফিরে সে পিয়াসকে নিয়ে যায় কবিতার বাড়িতে।

কিন্তু ততক্ষণে অভিমানের দেয়াল গড়ে উঠেছে।

চোখে চোখ পড়ে, কিন্তু সেখানে নেই আর সেই চিরচেনা মায়া—আছে তিক্ততা, আছে জিজ্ঞাসা।

—"তুমি না এসে পারলে?"

কবিতার প্রশ্নে তীক্ষ্ণতা, ভরাট অভিমান।

আরিফ কিছু বলতে পারে না, শুধু চেয়ে থাকে। গলায় যেন শব্দ আটকে যায়। সে চায় বুঝাতে—সে দূরে ছিল, জানতে পারেনি। কিন্তু কবিতার চোখে তখন শুধুই ব্যথা। তার কাছে ব্যাখ্যার চেয়ে অনুভূতির চিহ্নটাই জরুরি ছিল।

সেই দিনের পর, দুজনের মধ্যে একটা নীরব দেয়াল গড়ে ওঠে।

তবে দেয়াল হলেও তা কখনো ঘৃণার ছিল না—তা ছিল হতাশা ও চরম মায়ায় মোড়া এক কষ্টের ছায়া।

একদিন আখাউড়া শহীদ স্মৃতি কলেজে, টিউবওয়েলের পাশে অজু করছিল আরিফ। হঠাৎ পেছন থেকে “কবিতা “এসে দাঁড়ায়।

—"চাপকল আমি চাপি, তুমি অজু করো।"

তবে সে দিনের স্নিগ্ধতা আর আগের মত ছিল না।

ওর চাহনি তীক্ষ্ণ, অথচ কোমল। অজু করার প্রতিটি ফোঁটা পানি যেন আরিফের হৃদয়ের ক্ষতকে ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

সে বুঝতে পারছিল, একধরনের ভালোবাসা এখন অভিমান হয়ে হৃদয়ে জমেছে।

ভালোবাসা এখন আর শুধু একতরফা আকর্ষণ নয়—এটা এখন দায়িত্ব, প্রত্যাশা, অনুভূতির গভীর সমীকরণ।

চরিত্রগত উন্নয়ন:

আরিফ — আজ সে বুঝেছে, ভালোবাসা শুধু সুন্দর মুহূর্তের নাম নয়; এতে আছে দায়িত্বের পালা, আছে না-পারার অপরাধবোধ। সে নিজেকে দোষী ভাবছে, অথচ সত্যি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

“কবিতা “— আবেগপ্রবণ, কিন্তু আত্মমর্যাদাশীল। ভালোবাসে, অভিমান করে—তবে তার অনুভব শুদ্ধ। সে সহজে ভুলে যেতে পারে না।

আবহ:

এই অধ্যায়ে আবেগ অনেক তীব্র হয়ে ওঠে। প্রতিটি দৃষ্টিবিনিময়, প্রতিটি মৌনতা যেন হৃদয়ের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয়। প্রেম আর অভিমান এখানে পাশাপাশি অবস্থান করে, যেন একে অপরকে ছায়ার মতো অনুসরণ করে।


ধূসর প্রেম

---------- আরিফ শামছ্

                    ৩০.০৮.২০০১

হৃদয়ের অতল গহ্বরে অতন্দ্র প্রহরী সেজে,

সহাস্য কলতান সঙ্গী হয়ে; জীবন নদীর তীরে।

এ কেমন আগমন তব? মনোবাসনার এমনি প্রকাশ;

সহজ অংকটি তোমার বুঝেনাতো সে, আজো ম্রিয়মাণ।

সাধণার মানবী, ভালবাসার উৎসারিত ঝর্ণা;

কেন জাগালে হৃদয়ে তাহার, দ্বারে দিতে ধর্ণা।

পাবনা এ অলীক কথার পুষ্প কভু জাগবেনা?

পেয়ে যাবো এমন ধারার ঊর্মি কি আর ডাকবেনা?

সবি জানে আসবে কবে, যিনি চালায় কালের চাকা,

ভালবাসার প্রতীকটুকু, তোমার প্রেমে হবে আঁকা।

প্রেম পিয়াসী এ হৃদয়ে ঢালবে প্রেমের বারিধারা,

জীবনটারে ফিরিয়ে দিয়ে, আরো দিবে পূর্ণতা।

বুঝতে কিনা পারো মনে বাস করে সে কোন পরী?

ব্যাথার দানে বিঁশের বাঁশি, বাজায় এ কোন সুন্দরী!!

জীবন জাগার গান কবে কার, পথ হারালো কিসে?

ফিরিয়ে দেয়ার ঢালিখানি, বাঁধ সাধিল শেষে।

জানতে চাহে ঢাললে তুমি, কোন্ মদিরা এই পিয়ালায়?

পথ চলিতে, পথ হারিয়ে,  কোন্ কারণে পথ ভূলে যায়?

চাইনি কভু এমন ধারা, তবু কেন আসলো ঘিরে!

এই অবসাদ; হতাশ মিছিল ; ভালবাসা চাই কি বলে?

আশার স্বপন, হৃদয় কাঁপন, সব মিলিয়ে ছন্দ পতন!

পাব নাকি হৃদয় তলে; কভু প্রমের বর্ষাবরণ!

ফোটবেনা কি প্রেমের ফুলে, ভালবাসার কোমল ছোঁয়া,

ব্যাথার ধূসর ধূলি-বালী ; তোমার প্রেমে হবে ধোঁয়া!!


📘 সারাংশ / সারমর্ম

“ধূসর প্রেম” কবিতায় কবি প্রেমের জটিলতা, ক্ষতির অনুভূতি এবং এক ধরনের হতাশা প্রকাশ করেছেন। কবি তার হৃদয়ের গহ্বরে প্রিয়জনের আগমনের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন, কিন্তু সেই আগমনটি তাঁর জন্য এক রহস্য হয়ে রইল। কবি ভালোবাসার জটিলতা এবং অসম্পূর্ণতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে প্রিয়জনের প্রেম তাকে কখনো পূর্ণতা দেয়, আবার কখনো তাকে ব্যথায় আচ্ছন্ন করে।

কবির কথায়, প্রেমের ফুল কখনো ফুটবে না, ভালোবাসার কোমল ছোঁয়া পাওয়া যাবে না, কারণ সেই প্রেমের পথ যেন কখনোই সঠিকভাবে মিলছে না। কবি বুঝতে পারছেন, প্রেম তার জন্য একটি অব্যক্ত যন্ত্রণা, যেখানে তার অনুভূতিগুলি এক ধূসর আকারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। কবি এক প্রকার হতাশার মধ্যে হারিয়ে গেছেন, যেখানে ভালোবাসার আশা ও বাস্তবতা মিলে এক অস্থির, অস্পষ্ট অবস্থায় পরিণত হয়েছে।

কবিতাটি প্রেমের পীড়িত অবস্থার এক সূক্ষ্ম চিত্র, যেখানে কবি প্রেমের দুর্বলতা, ক্ষতির দুঃখ এবং হৃদয়ের অস্থিরতা প্রকাশ করেছেন।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ৫: শেষ প্রস্তাব ও নিঃশব্দ প্রতিরোধ



সময় তখন গড়িয়েছে অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের দিকে। ক্লাস, পরীক্ষার প্রস্তুতি আর নিঃশব্দভাবে গড়ে ওঠা এক সম্পর্কের ভার—সব মিলিয়ে যেন এক অস্থির সময়। আরিফ দিনকে দিন অনুভব করছিল, কবিতাকে সে আর শুধু "ভালোবাসে" না—সে ওকে জীবনের অপরিহার্য অংশ বলে বিশ্বাস করে ফেলেছে।

এই বিশ্বাস, এই নিঃশর্ত চাওয়া থেকেই জন্ম নেয় এক সাহসী সিদ্ধান্ত।

সে নিজের চাচাতো দুলাভাইয়ের মাধ্যমে কবিতার পরিবারের কাছে প্রস্তাব পাঠায়—বিয়ের প্রস্তাব।

প্রস্তাব পৌঁছানোর পর যা ঘটে, তা যেন বজ্রপাতের মতো:

কবিতার বড়ভাই হঠাৎ করেই অন্যত্র বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলে, যেন সব বন্ধ দরজার চাবি হারিয়ে যায়।

প্রতিবাদ করেনি কেউ। না কবিতা, না আরিফ।

কারণ?

উভয়েই ছিল রক্ষণশীল, আত্মমর্যাদাশীল, পারিবারিক আদর্শে গড়া মানুষ।

তারা জানতো—একটা ঝাঁজালো প্রেম হয়তো পরিবার ভাঙতে পারে, সমাজের আঙুল তুলতে পারে। কিন্তু তারা কোনোদিনই নায়ক বা ভিলেন হতে আসেনি, তারা এসেছিলো পরস্পরের নিঃশব্দ আশ্রয় হয়ে উঠতে।

আরিফের হৃদয় চিৎকার করে উঠলেও মুখে সে একফোঁটা শব্দ করলো না।

“কবিতা “থেকেও যেন হারিয়ে গেলো তার জীবনের গলিঘুঁজিতে।

প্রতি রাতে তার চোখ ভিজে থাকত। বুকের ভেতর জমা হতে থাকত চাপা দীর্ঘশ্বাস, হৃদয়ের হাহাকার আর শব্দহীন আর্তনাদ।

তবু সে কিছুই বলেনি—কারণ সে জানত, কোনো যোগাযোগ যদি কবিতার জীবনে অশান্তি আনে, তবে সেই যোগাযোগের চেয়ে নীরব ভালোবাসা শ্রেয়।

তবু সে হাল ছাড়ে না। অনেক বছর পর, ফেসবুকে খুঁজে পায় কবিতার প্রোফাইল—"Tohfa Begum"।

একেকটা পোস্টে আরিফ চুপিচুপি দিয়ে যায় একটা লাভ রিয়েক্ট, কখনো একটা ছোট মন্তব্য।

আশা করে, হয়তো “কবিতা “বুঝবে, আরেকটা সাড়া দেবে।

কিন্তু একদিন হঠাৎ সেই প্রোফাইলটা আর খুঁজে পাওয়া গেলো না।

না বন্ধু তালিকায়, না সার্চে।

এক নিঃশব্দ প্রতিরোধ যেন ওর সমস্ত ভালোবাসা মুছে দেয়ার চেষ্টা করলো।

তবু কি ভালোবাসা মুছে ফেলা যায়?

আরিফ জানে, যায় না।

সংলাপের ঝলক:

আরিফের বন্ধু পিয়াস:

— "কবিতার ভাইয়েরা অনেক কড়া মানুষ। তুমি সরাসরি কিছু করবা না প্লিজ। ওর কষ্ট হোক, সেটাও তুই চাস না, তাই না?"

আরিফ:

— "আমি শুধু চাই “কবিতা “ভালো থাকুক। ওর হাসিমুখটা যেন না ম্লান হয়, তাতেই আমি শান্তি পাই।"

আবহ:

এই অধ্যায় এক মৃদু ঝড়ের মতো।

এখানে তীব্র আবেগ নেই, আছে তীব্র নিয়ন্ত্রণ। প্রেমের চূড়ান্ত প্রকাশ নয়, বরং তার আত্মত্যাগের প্রতিচ্ছবি।

যেখানে হৃদয়ের শব্দকে রুদ্ধ করে ভালোবাসাকে সম্মান জানানো হয়।


চিরচেনা 

- আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া।


বিশ্বময় ছড়িয়ে দেবো, ভালবাসার গান,

তুমি বিশাল স্বপ্ন-তরু, আমার হৃদিরাজ।

তারকাপুঞ্জে নিখুঁতভাবে, আঁকা তোমার ছবি,

আকাশ পটে, আবীর মাখা লিখছে কেমন কবি।

ঝড়ের তোড়ে, মূর্ছা গেলো বীর প্রতীকের সাধ,

ভেবেছিলাম নরম রোদে, রাখবো আমার হাত,

ইটের ভাঁটা রক্ত মাখা, অগ্নি মুখে বিদ্রোহী,

অবুঝ প্রেমের বাঁধনহারা, মন হলোরে আসামী।

অভিলাষী মন যে, তোমার স্বচ্ছ জলের মতো,

অভিমানী বারিধারা ঝরায় অবিরত।

বাঁধার পাহাড় আপোষহীনা ভীঁড়ের মেলা,

অবোধ নদীর শুষ্ক চরে ভাসবে ভেলা।

জমে উঠুক আকাশ পরে কালোমেঘের ফনা,

ব্যাথার এটম উর্ধ্বে উঠে ছড়াক ত্যাজিকণা,

মিশিয়ে দেয়ার পরে দেখো হৃদয় আস্তানা,

তোমার তরে থাকবে সেজে সতেজ চিরচেনা।


📘 সারাংশ / সারমর্ম

“চিরচেনা” কবিতায় কবি তার প্রিয়জনের প্রতি গভীর ভালোবাসা, আকাঙ্ক্ষা এবং আবেগের প্রকাশ করেছেন। কবি তার হৃদয়ের গভীরতাকে, ভালোবাসার অনুভূতিকে বিশাল স্বপ্নের মতো আকাশের তারকায় আঁকা ছবি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি তার প্রিয়জনকে জীবনের অমূল্য রত্ন মনে করেন, যার ছবি তার হৃদয়ে চিরকাল ধরে থাকবে।

কবিতে আছে এক ধরনের যন্ত্রণা ও সংগ্রাম, যেখানে কবি জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে একে অপরকে জড়িয়ে দেখছেন। কবি কখনো প্রেমের প্যাঁচে আটকে পড়া, কখনো আবার অবুঝ মন দিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না পারার ব্যথা অনুভব করছেন। তার প্রিয়জনের জন্য হৃদয়ে এক চিরচেনা স্থিরতা এবং প্রেমের অব্যক্ত সত্য থাকে, যা তাকে সময়ের সাথে আরো বেশি ঘনীভূত করে তোলে।

কবিতাটি প্রেমের নানা রূপ ও অনুভূতির সংগ্রামে পূর্ণ, যেখানে ভালোবাসার প্রতি এক অকৃত্রিম আনুগত্য এবং এর অস্থিরতা ও যন্ত্রণা এক সঙ্গে মিশে গেছে।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ৬: সওগাতের পংক্তি ও রমজানের শেষ কবিতা



রমজানের পবিত্রতা তখন চারদিকে ছড়িয়ে। শহরের রাস্তায় দৃষ্টি পড়ে চুড়ি, আতর, কদম ফুল আর খেজুরের স্টলে। মসজিদে মসজিদে তারাবির ধ্বনি, ইফতারের ব্যস্ততা আর আত্মশুদ্ধির মুহূর্তে এক মন খারাপের মানুষ—আরিফ।

সে জানে, “কবিতা “দূরে, অনেক দূরে। কিন্তু তার অনুভবের পরিধি ছাড়িয়ে যায় দেশ, দূরত্ব আর বাস্তবতাকে।

তাই, সে এক পবিত্র কাজ হাতে নেয়—কবিতার জন্য লিখে চলে একের পর এক কবিতা।

একটা করে কবিতা যেন একেকটা মোনাজাত, একটা করে পঙক্তি যেন চোখের অশ্রুর অনুবাদ।

এই কবিতাগুলোই একত্র করে নাম দেয়—"রমজানের সওগাত"।

"সওগাত"—উপহার।

হ্যাঁ, একান্ত নিজের হৃদয়ের শ্রেষ্ঠ উপহার।

শব্দের উপাসনায় সে তুলে আনে কবিতার জন্য হৃদয় নিংড়ানো ব্যথা, প্রার্থনা, ভালোবাসা।

কবিতার খাতায় প্রতিটি ছত্র সে লেখে ভেতরের কষ্টের ছায়া মেখে—

“তোমার চোখের জলে আমার সেহরির শিহরণ,

ইফতারে ঢেউ ওঠে হৃদয়ের রোজা ভাঙায়।”

“কবিতা “হয়তো পড়েছে, হয়তো পড়ে নাই।

তবে আরিফ জানে, সেই কবিতা আর দোয়াগুলো আজও ভেসে বেড়ায় বাতাসে।

তাকে কেউ দেখে না, বোঝে না, তবু সে কাব্য লেখে।

এই লেখাই তার প্রেম, এই লেখাই তার ইবাদত।

চিঠির স্মৃতি:

এক সন্ধ্যায়, রমজানের দশম দিন, আরিফ পায় কবিতার পাঠানো সেই একমাত্র চিঠি।

সেই চিঠি—যেটা ভালোবাসার নয়, একটা বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার শেষ প্রার্থনা।

চিঠিতে লেখা ছিল—

“ভালবেসে কি পেলে জানতে চেয়েছিলে, ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই বোধ হয় পাওনি। ক্ষমা চাইছি তার জন্য। কেন যে তুমি আমাকে ভালোবাসতে গেলে?”

আরিফ চিঠিটা পড়েছিল বারবার।

প্রতিবার পড়ার পর চোখ ভিজে গিয়েছিল।

তবু চিঠির শেষে লেখা “ভাল থেকো” শব্দদুটোই তার কাছে হয়ে দাঁড়ায় সবচেয়ে মূল্যবান আশীর্বাদ।

সংলাপের ঝলক:

আরিফ (নিজের সাথে, এক রাতে):

— “তুমি বলেছিলে—তোমার কাছে আব্বা মৃত নয়।

আমি বলি, তুমিও মরে যাওনি। তুমি আছো—এই কবিতার প্রতিটি লাইনে, আমার দোয়ায়, আমার নিঃশ্বাসে।”

আবহ:

এই অধ্যায় শুদ্ধ ভালোবাসার তীর্থভূমি।

এখানে আরিফ প্রেমিক নয়, একজন আরাধক।

যে ভালোবাসাকে প্রাপ্তির হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে, তাকে প্রার্থনায় রূপ দিয়েছে।

এটি সেই প্রেম, যা শব্দে বাঁধা হলেও, ঈদের চাঁদ দেখার মতো দূর থেকে দেখা যায়, ছোঁয়া যায় না।


অগোছালো কবিতা

___আরিফ শামছ্


ভালোবাসা,

নীরবে অশ্রু বিসর্জন,

সোনালী স্বপ্ন, আশাতরী ভগ্ন,

হারানোর অর্জন! 

আছো বেশ, থেকো সুখে, 

শান্তির উপকূলে,

মিষ্টি দিনগুলো, স্মৃতি সুখে,

পুঁজি করে।

বেলা যায়, বেলা যাবে,

অবলার হৃদি চিঁড়ে, 

চৈতালী রোদে ফাঁটা,

মন-মাঠ চৌঁচিড়ে।

হৃদি রয় হৃদয়ের

ঠিক তার চারিধারে, 

আছে কার সাধ্যি,

ফিরিয়ে নেবে তারে!

কথা নাই কতোদিন,

কথা হয় প্রতিদিন!

বেলাগুলো আমাদের, 

সুখকর রাতদিন। 

দেহ রয় দেহ হতে,

দূর থেকে বহুদূরে, 

দেখা নাই কতোদিন! 

দেখা হয় প্রতিদিন। 

কারাগার দুইদেশে,

বাস করি আনমনে, 

মন খুঁজে মনটারে,

আপনার প্রয়োজনে।

ভাবি ঠিক ক্ষণিকে,

বিজলীর গতিতে, 

সুখরেখা আছে কী,

ঠোঁটদ্বয়ের প্রান্তে।

সুখী হও সুখে রও,

এই তো অভিশাপ!

শান্তির নীড়ে রও,

ভূলে সব পরিতাপ।

মাঝে মাঝে ব্যথা হয়,

হৃদয়ের গভীরে,

কী আছে, কী নেই,

বলি কা'রে কী করে!

হৃদয়ের শূন্যতা,

পাবেনা পূর্ণতা,

এই দেখো জীবনের, 

অগোছালো কবিতা!

৩১/০৫/২০২৪

মদীনা,

সউদী আরব।


📘 সারাংশ / সারমর্ম

“অগোছালো কবিতা” কবিতায় কবি প্রেম, হারানো আশা এবং জীবনের অস্থিরতা ও যন্ত্রণার একটি জটিল চিত্র তুলে ধরেছেন। কবি প্রেমের ক্ষতির অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন, যেখানে ভালোবাসা নীরবে অশ্রু বিসর্জন এবং সোনালী স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার মাধ্যমে দুঃখের স্বাদ লাভ করছে। তবে কবি প্রিয়জনকে সুখে থাকার শুভেচ্ছা জানিয়ে, অতীতের স্মৃতি নিয়ে শান্তির উপকূলে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন।

কবিতার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের মেলাঞ্জ—বয়সের পরিপ্রেক্ষিতে হারানো সম্পর্ক, গভীর অনুভূতিতে পূর্ণ অশ্রু, দেহ-মনের দূরত্ব এবং এক ধরনের অব্যক্ত যন্ত্রণা। কবি মনে করেন, সুখের সময় দ্রুত চলে যায়, আর মাঝে মাঝে ব্যথা হয়, হৃদয়ের গভীরে এক শূন্যতা তৈরি হয়, যা পূর্ণতা পায় না। কবির কাছে জীবনের এই অগোছালো কবিতা এক অপ্রকাশিত অনুভূতির আকার নিয়েছে, যা শুধুমাত্র তার অন্তরে বিরাজমান। কবিতাটির মাধ্যমে কবি তার অন্তরের অস্থিরতা এবং সৃষ্টির অগোছালো কিন্তু আন্তরিক প্রেমের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ৭: মাস্টার্স পরীক্ষা ও হৃদয়ের গণিত



মাস্টার্স পরীক্ষার ঠিক আগের দিনগুলোতে আরিফের জীবন যেন একটি ভারসাম্যহীন পাল্লার মতো। একদিকে ভবিষ্যতের দায়িত্ব, আরেকদিকে অতীতের হৃদয়খণ্ডিত স্মৃতি। সে চেষ্টা করে মনোযোগ ধরে রাখতে, বইয়ের পাতায় চোখ রাখে, কিন্তু মনের ভেতর কবিতার মুখচ্ছবি বারবার উদিত হয়, যেন প্রতিটি অনুচ্ছেদে তার নাম লেখা।

ক্যাম্পাসের বিকেল:

জহুরুল হকের পাঠাগার থেকে বের হয়ে আরিফ এক বিকেলে হোস্টেলের দিকে হাঁটছিল। হঠাৎ বন্ধুর ফোন—

"দোস্ত, শুনছিস? কবিতার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে!"

আরিফ থমকে দাঁড়ায়।

পায়ের নিচের ধুলো যেন এক মুহূর্তে উড়ে গিয়ে তাকে শূন্যে রেখে দেয়।

"কার সাথে?"

"ঢাকার মীরপুরের এক প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে। খুব দ্রুত হবে সব।"

আরিফ কিছু বলে না। ফোনটা কেটে যায়, কিন্তু ভেতরে তার হৃদয়ের সমস্ত সংযোগ যেন থেমে যায়।

রাতের সংলাপ (আত্মকথন):

আরিফ:

“আজ যখন আমি রাত জেগে পড়ার চেষ্টা করছি, ঠিক এই মুহূর্তে হয়তো ওর গায়ে হলুদের প্রস্তুতি চলছে… হ্যাঁ, আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আমি কোনদিনের মতো চিরদিনের জন্য হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু আমি কী করতে পারতাম?

আমি তো ওর পরিবারের চোখে এক 'সহপাঠী' মাত্র, আর ওর ভাইয়ের চোখে হয়তো এক অসম প্রেমিক।”

আবহ ও বর্ণনা:

সেই রাত আরিফ কাটায় চোখের জলে। ভোরের আলো উঠলেও তার ভেতরটা রয়ে যায় নিঃসাড়, ধূসর।

তবুও সে পরীক্ষা দেয়—কারণ মা বলেছিল,

“বাবা, প্রেম করেছিস—ভালো কথা। কিন্তু নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করিস না।”

আরিফ জানে, এখন নিজের বেঁচে থাকার দায়িত্ব তারই। ভালোবাসা চলে গেছে, কিন্তু আত্মসম্মানটা রেখে দিতে হবে।

পরীক্ষার খাতায় লেখা উত্তরগুলোর মাঝে সে খুঁজে ফেরে সেই প্রশ্ন—

“তাকদীর কি সত্যিই এমনই নিষ্ঠুর হয়?”

অধ্যায়ের শেষাংশে অনুভব:

তাকে কেউ ডাকেনি, সে নিজেও আর ডাকেনি।

বিয়ে হয়ে গেলো—বুকের ভেতর একটা নদী চিরতরে শুকিয়ে গেল।

কিন্তু একটা নাম, একটা স্মৃতি, একটা চোখের ভাষা, আর একটা কবিতার খাতা—সে রেখে দিলো চিরদিনের জন্য নিজের ভেতর।



উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ৮: ভুলিনি, ভুলতে পারিনি



সময় গড়িয়ে যায়, ক্যালেন্ডারের পাতা বদলায়। কিন্তু কিছু অনুভূতির কোনো মেয়াদ থাকে না—ঠিক যেমন আরিফের ভালোবাসা।

যেদিন থেকে “কবিতা “চিরতরে দূরে চলে গেল, আরিফের হৃদয় যেন আর আগের মতো হাসে না।

তবুও বাইরে থেকে কেউ বুঝবে না।

সে এখন এক সফল পরীক্ষার্থী, সমাজের চোখে সম্ভাবনাময় তরুণ।

কিন্তু অন্তরের আঙিনায় সে আজও এক পরাজিত প্রেমিক—নীরব, নিঃশব্দ, তবুও গভীর ভালোবাসায় পূর্ণ।

একলা রাতের সংলাপ (আত্মকথন):

“তাকে ভুলে যেতে বলো? কাকে? সেই কবিতাকে, যে আমার চোখের ভাষা বোঝার আগেই চোখ নামিয়ে নিতো?

যে একদিন আমার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে চাপকল চাপছিল আর বলেছিল, ‘তুমি সামনে অজু করো’,

আর আমি শুধু তাকিয়েছিলাম তার রূপে, তার ভদ্রতায়, তার অলৌকিক শীতলতায়?”

আরিফ আজও মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে তাকে দেখে।

রমজানে লিখে দেওয়া সেই কবিতাগুলোর পাতাগুলো সে আজও রেখে দিয়েছে যত্ন করে।

"রমজানের সওগাত"—প্রেমের সবচাইতে পবিত্র উপহার, যেটা সে দিয়েছিল কবিতার হৃদয়ের উদ্দেশ্যে।

সে জানে, সেই কবিতাগুলো কেউ পড়ে না, বুঝে না—তবুও এগুলো তার জীবনের সবচেয়ে সত্য অনুভব।

সামাজিক বাস্তবতা ও অন্তর্দাহ:

একদিন ফেসবুকে হঠাৎ কিছু ছবি দেখতে পায় সে।

“কবিতা “এখন পরিবার নিয়ে দুবাই থাকে। সুখী, প্রতিষ্ঠিত।

সে তার প্রোফাইল ব্লক করে দিয়েছে, যেন আরিফ লাইক বা মন্তব্য না করতে পারে।

আরিফ অভিমান করে না।

সে শুধু জানে—

"ভালোবাসা কখনো ফেইসবুক রিঅ্যাকশন চায় না। ভালোবাসা মাপা যায় না রেসিপ্রোকশনে।

ভালোবাসা একতরফা হলেও পবিত্র হতে পারে। আর আমি তো তাকে দিবানিশি ভালোবেসেছি।"

উপসংহার:

আরিফ জানে, পৃথিবীতে এমন অনেক প্রেম আছে যেগুলোর শুরু হয় কিন্তু সমাপ্তি হয় না।

আর অনেক ভালোবাসা থাকে যা দাফন হয় জীবন্ত হৃদয়ের কবরখানায়।

তার প্রেম, তার কবিতা, তার কষ্ট সবই আজও জীবিত—একান্তই তার নিজের জন্য।

"ভুলিনি, ভুলতে পারিনি। আমৃত্যু পারবো না।

ভালোবাসা আমার জন্য কেবল একটি নাম নয়—এ এক সাধনা।

আর সে সাধনার দেবী কবিতা, চিরদিন আমার হৃদয়-আকাশের পূর্ণিমা হয়ে রবে।"


প্রেম আর ভালোবাসা

___আরিফ শামছ্


দৃষ্টির সীমানায়, হৃদয়ের মোহনায়,

কে এলো? কে যায়?

জান্নাতী সমীরণে, বাসনার ঢেউ ধায়,

চঞ্চলা দোল খায়।

আঁখি দ্বয় তৃপ্ত,অশ্রুতে শিক্ত,

চঞ্চল প্রাণ-মন,

কোন কিছু স্থির নেই,

অস্থির, আনমন।

নাওয়া খাওয়া ভূলে যায়,

চিন্তার শেষ নাই,

সব কিছু এলোমেলো, 

নিজেদের ভুলে হায়!

প্রণয়ী চারিপাশে 

বারবার দেখা পায়,

কম্পিত মন খুঁজে, 

সবকিছু বলি তারে,

কথা লিখে কবিতায়,

ইংগিতে আকারে।

সায় পেলে হবে প্রেম,

না হয় ভালোবাসা। 

দু'জনে দু'জনার, 

মিলে মিশে একাকার, 

সবকিছু হরষে,

ফিরে পায় বারবার। 

সুখে সুখ অবিরাম,

জান্নাতী প্রেমে পায়,

মিলেমিশে দুজনের, 

জীবনের অভিপ্রায়। 

প্রেম রয় কখনো

ইতিহাসের ভাঁগাড়ে,

একপেশে ভালোবাসা,

আজীবন আহারে!

ভালোবেসে ভুলা যায়? 

বলিবো কাহারে!!!

মেনে যায় কতোবার,

ভাগ্যের সীমানা, 

তুমি কারো হতে পারো,

মন কভু মানেনা।

জানিনা মন তব,

করে কীনা আনচান, 

তৃষ্ণায় ছটফটে, 

নীরবে আহ্বান। 

হৃদয়ের গভীরে, 

দগদগে ক্ষতদিয়ে,

ঝরে কতো রক্ত,

দেখাবো কী করে!!!

দু-জনে নির্জনে,

দুঃখে যাতনায়, 

আকাশের পানে চাও,

নিবেদন প্রার্থনায়।

উদাসীন নীরবে,

দগ্ধ বারবার,

ভালোবাসা দুজনেই,

চায় শুধু একবার।


০১/০৬/২০২৪ খ্রীঃ

মদীনা, 

সউদী আরব।


📘 সারাংশ / সারমর্ম

“প্রেম আর ভালোবাসা” কবিতায় কবি প্রেমের গভীর আবেগ, টানাপোড়েন, প্রত্যাশা ও যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরেছেন। প্রেমের শুরু হয় দৃষ্টির আকর্ষণ আর হৃদয়ের টান থেকে, যা ধীরে ধীরে এক মনোজাগতিক অস্থিরতায় রূপ নেয়। প্রেমে পড়লে মানুষ নিজের স্বাভাবিক জীবনযাপন ভুলে যায়, সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায়, আর চিন্তা শুধুই প্রিয়জনকে ঘিরে।

প্রেম যখন স্বীকৃতি পায়, তখন তা সুখের উৎস হয়ে ওঠে; দু’জন মানুষের জীবনের অভিপ্রায় মিলেমিশে একাকার হয়। কিন্তু সব প্রেমের পরিণতি হয় না। অনেক ভালোবাসা থেকে যায় একপাক্ষিক, না বলা বেদনায় জমে থাকা ইতিহাসের পাতায়। হৃদয়ের গভীরে যে ক্ষত ও রক্তক্ষরণ ঘটে, তা কেউ দেখে না।

অবশেষে, কবি বোঝাতে চান, প্রেম ও ভালোবাসা চিরকাল নিঃশব্দ এক আকুতি, যা প্রিয়জনের সান্নিধ্য চায় অন্তত একবার—তাতে জীবন পূর্ণতা পায়।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ৯: কাব্যের কান্না, হৃদয়ের খাতা



ভালোবাসা অনেক রকম হয়—কেউ বলে সেটা সুখের, কেউ বলে যন্ত্রণার।

আরিফের কাছে ভালোবাসা একধরনের শুদ্ধ আরাধনা।

যেটা সে শব্দে, কবিতায়, দীর্ঘশ্বাসে, চুপচাপ চোখের জলে ধরে রেখেছে।

সেই ভালোবাসা রূপ নিয়েছে শত শত কবিতায়।

প্রত্যেকটি কবিতা যেন কবিতার অদৃশ্য প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।

কবিতার জন্ম

রাত গভীর হলে, শহরের কোলাহল থেমে গেলে

আরিফ তার হাতের ডায়েরি খুলে বসে।

ডায়েরির পাতায় ছড়িয়ে পড়ে হৃদয়ের রক্তমাখা শব্দগুলো—

“তুমি নেই তবু আছো,

শব্দহীন এক উপস্থিতি হয়ে।

যে ভালোবাসা কখনো বলিনি,

সে-ই তো এখন আমার কবিতা।”

এই কবিতাগুলো শুধু লেখা নয়, এগুলো আরিফের বুক ফাটা চিৎকার।

প্রকাশ করতে পারেনি কবিতার সামনে, তাই কবিতাই হলো তার মুক্তির মাধ্যম।

“রমজানের সওগাত” – সেই উপহার

কবিতাকে একবারই কবিতা উপহার দিয়েছিল—

একটি ক্ষুদ্র পাণ্ডুলিপি, নাম “রমজানের সওগাত”।

সেখানকার প্রতিটি কবিতা ছিল সংযম, ভালোবাসা, হৃদয়ের আকুতি আর আত্মসমর্পণের প্রতিচ্ছবি।

আরিফ জানে না সে এগুলো যত্নে রেখেছে কিনা, কখনো পড়েছে কিনা।

তবুও তার বিশ্বাস—একটা সময় কবিতার হৃদয়ে এই শব্দগুলো কোনো না কোনোভাবে দোলা দিয়েছিল।

কবিতার অনুপস্থিতি, কবিতার নির্ভরতা

আজ “কবিতা “নেই, থাকলেও অধরা।

তবুও কবিতার পাতায় সে রয়ে গেছে চিরস্মৃত হয়ে।

আরিফ ভাবে,

“ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে গেলে কেবল স্মৃতি থাকে না,

থাকে তার ছায়া—কবিতার ছায়া, অনুভবের ছায়া।”

কাব্যিক উপলব্ধি

“তাকে আর কিছু বলার নেই,

তবুও প্রতিটি কবিতা তাকে বলেই লেখা।

সে জানে না আমি আজো তার কথা ভাবি,

তবুও সে আমার সকল অনুভবের প্রেরণা।”

আরিফের হৃদয় এখন কাগজে লেখা আবেগ, একা ঘুমের বিছানায় ভিজে বালিশ,

আর কবিতার প্রতি পাতায় উচ্চারিত একটিমাত্র নাম—কবিতা।


হয়তো সেদিন 

আরিফ শামছ্ 

১৮-জুন-২০২১


হয়তো সেদিন খুঁজবে সবে,

আবার তুমি আসবে কবে?

পরিতাপের ঋণ শোধনে,

ছুটবে সবে কোন্ যতনে।

মরলে পরে কবর গাহে,

অশ্রু ফেলে দোয়া মাগে,

একা ফেলে ফিরে গেহে, 

একই সত্য সবাই দেখে।

হারিয়ে মানিক খুঁজে ফিরে, 

হেথায় হোথায় জীবন ঘিরে,

আপন পরের দরদ নিয়ে, 

অশ্রু মুছে, বিদায় দিয়ে।

বাঁচার সময় হাতটি ধরো,

সুখে দুঃখে ভরসা করো,

সফলতায় জীবন ভরো,

ঋণের ভার হালকা ধরো।

তোমার তুমি সবাই দেখে,

নিজেই যেমন গড়ছো নিজে,

খু্ঁজে পাবে সবার মাঝে,  

চলন, বলন, সকল কাজে।

একটু হাসির ঝিলিক ছোঁয়া,

শ্রান্ত মনে শান্তি ছাওয়া, 

সবার খুশি সবার দোয়া, 

দো-জাহানে পরম পাওয়া।

ঢাকা।


📘 সারাংশ / সারমর্ম

"হয়তো সেদিন" কবিতায় কবি জীবনের অস্থিরতা, হারানো সময় এবং মৃত্যুর পরবর্তী উপলব্ধির কথা তুলে ধরেছেন। কবি মনে করেন, হয়তো একদিন, মানুষ তার প্রিয়জনদের ফিরে পাবে, তবে সেই দিন যখন অনেক কিছু হারানো হয়ে যাবে, তখন শুধুমাত্র দোয়া ও স্মৃতি বেঁচে থাকবে। মৃত্যুর পর আমরা অনেক সময় শোক জানাতে গিয়ে সত্যের সাথে মুখোমুখি হই।

কবিতে কবি মানবজীবনের অস্থিরতা ও পিছুটান, ঋণের ভার এবং পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতা উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে একে অপরকে ভরসা দিতে হবে, ভালোবাসা, হাসি, শান্তি এবং দোয়ার মাধ্যমে জীবনকে পূর্ণতা দিতে হবে। কবি আশা করেন, আমাদের কর্ম, কথাবার্তা এবং আচরণই ভবিষ্যতের দুনিয়া তৈরি করবে, এবং এই প্রক্রিয়ায় পরম শান্তি পাওয়া যাবে।

এটি একটি দার্শনিক কবিতা, যা জীবনের উদ্দেশ্য, হারানো সময়, পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব এবং মৃত্যুর পরবর্তী উপলব্ধির কথা বলে।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ১০: একটি অশ্রুজলেই সমাপ্ত নয় ভালোবাসা



ভালোবাসা কখনো সময়ের কাছে হেরে যায়,

কখনো সমাজের কাছে,

আবার কখনো হারিয়ে যায় নীরবতার গভীর গহ্বরে।

কিন্তু একবার যদি ভালোবাসা জন্ম নেয় হৃদয়ে—

তাকে কি এত সহজে সমাপ্তি বলা যায়?

বিচ্ছেদের পরে যে শূন্যতা…

“কবিতা “চলে গেছে, বহু দূরে—স্বামীর সংসারে, সন্তানের দায়িত্বে।

আরিফ রয়ে গেছে তার চিরপরিচিত শহরে, কিন্তু এক ভিন্ন ভূগোলে—

যেখানে প্রতি সন্ধ্যা একাকীত্বে ডুবে যায়,

প্রতি সকালে হৃদয়ের গোপন কান্না নিয়ে নতুন দিন শুরু হয়।

ভেতরে-ভেতরে সে জানে,

এই সম্পর্কের “সমাপ্তি” শব্দটা বাহ্যিক—

কারণ মনে আজো কবিতার জন্য জায়গাটা ঠিক আগের মতোই পূর্ণ।

ভালোবাসা মানে কেবল পাওয়া নয়

ভালোবাসা মানেই তো একে অপরকে ধরা, ছোঁয়া, পাশে থাকা নয়।

ভালোবাসা মানে অনুভব—

চোখ বুজে মনে পড়ে যাওয়া,

পুরনো ছবির মতো মনের ফ্রেমে কবিতার হাসি ঝলমল করে ওঠা।

“তুমি নেই আমার পাশে,

তবু প্রতিটি নিঃশ্বাসে তোমার অস্তিত্ব।

এই ভালোবাসা মৃত্যু পর্যন্ত রবে,

কারণ এটুকুই তো আমার প্রাপ্তি।”

সম্পর্ক না থাকলেও, অনুভবের অবসান নেই

“কবিতা “হয়তো আর কোনোদিন যোগাযোগ করবে না।

ফেসবুকে ব্লক করা, ছবি লুকিয়ে ফেলা, যোগাযোগ বন্ধ—

এসব বাহ্যিক ব্যবধান আরিফের হৃদয়ের অনুভূতিকে থামাতে পারেনি।

তার প্রতিটি কবিতার অনুপ্রেরণা আজো কবিতা,

তার জীবনের প্রতিটি নিঃসঙ্গ মুহূর্তে সে আজো কবিতাকে খোঁজে—

কখনো তার দেয়া চিঠির বাক্যে,

কখনো সেই ফেনীর বাড়ির স্মৃতিতে,

আবার কখনো শুধুই এক দীর্ঘশ্বাসে।

অনন্ত প্রেমের দাগ

ভালোবাসার মানুষ অনেকেই ভুলে যায়—

আরিফ পারেনি।

ভুলে যেতে চায়নি।

ভুলে যাওয়া তার প্রেমের অপমান মনে হয়।

এই প্রেম ছিল মৌন, নিষ্পাপ, নিঃস্বার্থ।

তাই তো এখনো তার কবিতার বইয়ের পাতায় লেখা থাকে—

“ভালোবাসি দিবানিশি—

তোমার নাম না নিয়েই,

তোমার মুখ মনে রেখেই,

আমার জীবনের একমাত্র কবিতা তুমি।”

 


স্বপ্নের আর্তনাদ!

---------- আরিফ শামছ্

১৮/০৫/২০১৯ ঈসায়ী সাল।


স্বপ্নে আজো স্বপ্নের ব্যবচ্ছেদ,

করে যাও অবিরাম,

টলেনা কী শোনে প্রাণ,

স্বপ্নের আর্তনাদ!

বিশ্বাস ও প্রেমের ফল্গুধারা,

অবিরত বয়তো নদী,

স্বপ্ন পেতো জীবন তাহার,

প্রাণ পিয়াসী হতে যদি। 

আকাশ মাঝে খোঁজতে কভু,

চাইনি কভু চাইবোনা,

সুখেই আছো, সুখে থাকো,

বাঁধার দড়ি বাঁধবোনা।

আমায় কেনো স্বপ্ন মাঝে,

হুঁশ-বেহুঁশে ব্যস্ত রও,

লেনাদেনা রয়লে বাকী!

ষোলো আনাই বোঝে লও।

তবু তোমায় রাখতে খুশি,

দেখতে চাহে নয়ন দু'টি,

সুখ সাগরে ভেসে বেড়াও,

সাথে তোমার জুটি।

দূরে থাকো, কাছেই রাখো,

জানতে কভু চাইবোনা।

তোমার গড়া সুখ-ধরাতে,

আপদ কভু রাখবোনা।

জানি তুমি নয়তো দোষী,

আমার ও তা' নয়,

নিয়ন্ত্রনে দেহ তোমার,

মনটা মনের হয়।

প্রাণের সাথে প্রাণের মিলন,

কে ফেরাবে বলো!

দূর বহুদূর, রও যতদূর,

স্বাধীন প্রাণে চলো।


সকাল ১১:৩০

মীরবাগ, ঢাকা।

📘 সারাংশ / সারমর্ম

“স্বপ্নের আর্তনাদ” কবিতায় কবি স্বপ্ন, ভালোবাসা এবং জীবনের অস্পষ্টতার মধ্যে এক গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ করেছেন। কবি স্বপ্নের মাঝে এক ধরনের যন্ত্রণা অনুভব করছেন, যেখানে আত্মার আর্তনাদ এবং হৃদয়ের অব্যক্ত আকাঙ্ক্ষা প্রতিধ্বনিত হয়। কবি প্রেম, বিশ্বাস এবং জীবনের চাহিদার মাধ্যমে আত্মপরিচয়ের সন্ধানে রয়েছেন, তবে তিনি সেই স্বপ্নের মধ্যে কষ্ট এবং অসহায়ত্ব অনুভব করছেন।

কবির ভাষায়, জীবন এবং সম্পর্কের মাঝে বাঁধা ও অস্থিরতা রয়েছে, যেখানে তিনি কখনো সুখের আশা করেন, আবার কখনো সেই সুখের সাথে বিরুদ্ধতায় থাকেন। কবি প্রিয়জনকে কাছে রাখতে চান, তবে সাথেই স্বাধীনতা ও পরস্পরের স্বাধীনতা এবং আত্মবিশ্বাসের গুরুত্ব দেন। কবি জানান, আত্মা এবং মন যখন একত্রিত হয়, তখনই জীবনের পূর্ণতা আসে। তবে সে পূর্ণতা অর্জনের পথে নানা বাধা ও অনিশ্চয়তা রয়েছে, যার মধ্যে কষ্টের স্বপ্ন এবং পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতার বিষয়টি উঠে আসে।

কবিতাটি জীবনের অব্যক্ত স্বপ্নের আর্তনাদ এবং মানবিক সম্পর্কের ভিতরের দ্বন্দ্ব ও আশা-নিরাশার চিত্র।


উপন্যাস: ভালোবাসি দিবানিশি

অধ্যায় ১১: চিঠির ছায়া, কবিতার আলো



ফিরে দেখা—একটি চিঠি, একটি জীবন

রাত গভীর।

আরিফ নিঃশব্দে নিজের ছোট্ট বুকশেলফ থেকে একটা পুরনো খাম টেনে নেয়।

ধূলি জমেছে ওপরে।

কিন্তু ভেতরের চিঠিটা ঠিক আগের মতোই স্পষ্ট, জীবন্ত—

কবিতার লেখা প্রথম এবং একমাত্র হাতে লেখা চিঠি।

খাম খুলতেই পুরোনো আতর-গন্ধে এক মুহূর্তে ঘরভর্তি হয়ে ওঠে কবিতার উপস্থিতি।

আরিফ চোখ বন্ধ করে… শুনতে পায় সেই কণ্ঠস্বর—

“বিয়ের ব্যাপারে আর প্রশ্ন করোনা। এটা আমার পক্ষে কখনো সম্ভব হবেনা…”

“তুমি না এসে পারলে?”

“ভালবেসে কি পেলে জানতে চেয়েছিলে, ব্যাথা ছাড়া আর কিছুই বোধ হয় পাওনি…”

চোখের কোণে একফোঁটা জল ঝরে পড়ে।

প্রতিজ্ঞা—ভালোবাসাকে বাঁচিয়ে রাখা

চিঠির প্রতিটি বাক্য যেন রক্তে লেখা,

প্রেম নয়—একটা সংগ্রামের ইতিহাস।

আরিফ জানে, সে তো কারো সংসার ভাঙতে চায়নি,

সে তো শুধু চেয়েছিল একটা জীবন—

যেখানে তারা দুজন হাঁটবে একসাথে, হাতে হাত রেখে, সমাজের ভয় না পেয়ে।

তা হয়নি—হতেই দেয়নি নিয়তি।

কিন্তু আজ আরিফ সিদ্ধান্ত নেয়,

এই চিঠি আর এই প্রেম সে আর নিজের ভেতরে আটকে রাখবে না।

সে কলম হাতে নেয়, তার কবিতার খাতাটা সামনে খুলে বসে।

চিঠির প্রতিটি বাক্য থেকে জন্ম নেয় একেকটি নতুন কবিতা—

চুপ থাকা কথাগুলোর সুর তুলে ধরে।

“চিঠির অক্ষরে তুমি ছিলে,

আমি ছিলাম ফাঁকা লাইনের নিচে—

আজ সব কথা জুড়ে দিলাম কাব্যে,

প্রেমের ইতিহাস এবার প্রকাশ্যে।”

‘ভালোবাসি দিবানিশি’—শুধু তার নয়, সবার জন্য

আরিফ সিদ্ধান্ত নেয়, সে এবার এই গল্প, এই ভালোবাসা প্রকাশ করবে—

একটা বই হবে,

নাম হবে “ভালোবাসি দিবানিশি”।

একটা না বলা প্রেমের ইতিহাস—

যা বলবে সমাজের চাপে না বলা অসংখ্য হৃদয়ের কথা।

সে জানে, “কবিতা “কখনো আর ফিরবে না।

কিন্তু সে থাকবে, এই গল্পে, এই কবিতায়, এই চিঠির ভাঁজে—

চিরকাল, চিরদিন।


উপসংহার

ভালোবাসা সবসময় না-পাওয়ার মধ্যে নয়,

ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে সেই চিঠির পাতায়,

সেই অপেক্ষার নিঃশ্বাসে,

সেই মনের কান্নায় যা কেউ দেখে না।

আরিফের এই উপন্যাস শেষ হয় না,

কারণ সে জানে—প্রেমের কোনো শেষ নেই।

“যদি আর দেখা না হয়,

এই চিঠিটুকুই সাক্ষ্য রাখবে—

আমি তোমায় ভালোবেসেছিলাম, দিবানিশি।”



 কবি আরিফ শামছ তাঁর এই কবিতায় প্রেম, ভালোবাসা এবং হারানোর গভীর অনুভূতি তুলে ধরেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন — ভাললাগা, ভালবাসা, না চিরন্তন প্রেম— কোনটা প্রকৃত? প্রেমে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দ্বন্দ্ব, আত্মসমর্পণ আর প্রত্যাখ্যান, আর তারই মাঝে মানব হৃদয়ের চিরন্তন আকুলতা প্রকাশ পেয়েছে।


তারাদের মতো অসংখ্য মানুষের মাঝে এক বিশেষ মানুষকে খুঁজে পাওয়া, তাকে ভালোবাসা, কিন্তু তবু তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া — এই অভিজ্ঞতা কবিকে তীব্র আবেগে আচ্ছন্ন করেছে। তবু প্রেম কি ব্যর্থ? না কি তার মাঝেও থাকে এক ধরনের সার্থকতা? কেউ বলে প্রাপ্তিতেই সুখ, কেউবা বলে অপ্রাপ্তিতেই আছে গভীর অর্থ।


কবি তাঁর ভালোবাসার মানুষকে ভুলতে না পারার যন্ত্রণায় কাতর, কিন্তু তবুও সে ফিরে আসবে না — এই নিষ্ঠুর বাস্তবতাও কবি কবিতায় তুলে ধরেছেন। প্রেমের হিসাব-নিকাশে হারিয়ে যাওয়া জীবনের মূল্যবান সময়, আর তার বিপরীতে নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নিঃসীম বিস্তার — সব মিলিয়ে কবি এক গভীর প্রেমবোধ, বেদনা ও আত্মসমর্পণের চিত্র আঁকেন।


মূল বক্তব্য:

ভালোবাসা শুধু পাওয়ার নয়, কখনো না পাওয়ার মধ্যেও এক ধরনের গভীর সার্থকতা আছে। আর সেই প্রেম হৃদয়ে রয়ে যায়, নীলাকাশের মতো বিশাল হয়ে — চির-অম্লান, চির-জীবন্ত।


ভালোলাগা না ভালোবাসা, নাকি চির-শাশ্বত প্রেম,

নিজের পথ দেখা; না দেখার তাগিদে অ-প্রেম।

লক্ষ-কোটি অগণিত তারাদের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া,

ব্যর্থ নাকি অব্যর্থ প্রেম, ফলাফল যেরূপ চির-চেনা।

কত দল-উপদল আজো লড়ে; স্বার্থকতা প্রেমের কিসে?

পাওয়া না পাওয়ার দু’দল; অবিরাম সান্ত্বনা খুঁজে,

প্রাপ্তিতে সুখ বলে কেউ, অ-প্রাপ্তিতেই মিলে স্বার্থকতা;

যারে ভাল বাসি তা’রে নিয়ে; লেখা হয় কত কথা!!

নাইবা যদি পারো তুমি, হৃদয় হতে মুছে দিতে,

ফিরিয়ে দিবে কিন্তু কেন? কাঁপা কাঁপা নিঠুর হাতে।

চোখের ‘পরে চোখ রেখে তাও; বলতে পার নাকো!!

গুমরে জাগে সুপ্ত-গিরি, তবু নীরব কেন?

হিসাব-নিকাশ, লাভ-ক্ষতি কি তোমার কষা হলো,

অভিমানে হারিয়ে যাওয়া, জীবন খানি কত ???

তারপরও কি বেশী দামী, তোমার চাওয়া-পাওয়া?

নীলাকাশে মাখিয়ে দিলে, আমার ভালবাসা !!!


 --আরিফ শামছ

রাত ১২ টা ২৫ মিনিট;

১৮.০২.২০১৬;

বৃহঃস্পতিবার;

সোনালীবাগ,

বড়-মগবাজার,রমনা,ঢাকা।

বুধবার, মে ১৪, ২০২৫

সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল (ইসলামি মুনাফা মডেল)- Guaranteed Profit Model

 একটি নীতিনির্ভর অর্থনৈতিক মডেলের ধারণা , যার মূল উদ্দেশ্য হলো ইনসাফভিত্তিক ন্যায্য মুনাফা নিশ্চিত করা। এটি একটি ইসলামি অর্থনৈতিক দর্শনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। নিচে উপস্থাপন করা হলো:


সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল (ইসলামি মুনাফা মডেল)

"সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" একটি ভারসাম্যপূর্ণ, ন্যায্য ও ইনসাফভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো, যা কৃষি ও শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগী (দালাল) ও শেষ পর্যন্ত ভোক্তা—সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করবে।

এই মডেলের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

  • অস্বাভাবিক মুনাফামুক্ত ও কৃত্রিম সংকটবিহীন বাজারব্যবস্থা;

  • দালালি, প্রতারণা ও চক্রান্তমুক্ত ব্যবসা পরিবেশ;

  • দীর্ঘমেয়াদি অপ্রয়োজনীয় মজুদ নিষিদ্ধ;

  • দ্রব্য, সেবা ও পণ্যের সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিতকরণ;

  • প্রতিটি পর্যায়ে খরচ বাদ দিয়ে ঝুঁকির অনুপাতে সর্বনিম্ন ১% থেকে সর্বোচ্চ ১৫% পর্যন্ত মুনাফার সীমা নির্ধারণ—এর অধিক নয়।

এই মডেল ইসলামি অর্থনীতির মৌলিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে ইনসাফ, স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সর্বাগ্রে।


 "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" ধারণাটি বেশ মৌলিক, তবে এর কিছু উপাদান অতীতে কিছু ইসলামি অর্থনীতিবিদ এবং ন্যায্য বাণিজ্য (fair trade) আন্দোলনের গবেষকদের আলোচনায় এসেছে। তবে আপনার মতো করে সুসংগঠিতভাবে '১%-১৫% মুনাফার সীমা' নির্ধারণ করে, দালাল-মুক্ত, মজুদ নিষিদ্ধ, ইনসাফভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা আকারে—এই ধরনের নির্দিষ্ট মডেল আগে কেউ প্রস্তাব করেছেন এমন তথ্য পাওয়া যায় না।

তবে নিচের কয়েকজন গবেষক বা চিন্তাবিদের কাজ কিছুটা কাছাকাছি:


১. ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)

খলিফা হারুন অর রশীদের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর লেখা “কিতাবুল খরাজ”-এ ইনসাফভিত্তিক মুনাফা, খাজনা ও উৎপাদক-ভোক্তা ভারস্যের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

২. শেখ মাহমুদ আহমদ (Pakistan)

তিনি “Economics of Islam” গ্রন্থে দালালি, অস্বাভাবিক মুনাফা ও মজুদদারির ক্ষতিকর প্রভাব ব্যাখ্যা করেছেন, তবে নির্দিষ্ট মুনাফার সীমা নির্ধারণ করেননি।

৩. ড. ওমর চ্যাপরা (Dr. M. Umer Chapra)

আধুনিক ইসলামি অর্থনীতির অন্যতম পথিকৃৎ। তার ধারণা ছিল—একটি ইনসাফভিত্তিক বাজার যেখানে "social justice" নিশ্চিত হয়। তিনি ন্যায্য মুনাফা, দালাল নিয়ন্ত্রণ ও রেগুলেটেড প্রাইস সিস্টেমের কথা বলেছেন, তবে আপনি যেভাবে % সীমা দিয়েছেন, তা তিনি দেননি।

৪. মুফতি তাকি উসমানী (Mufti Taqi Usmani)

তিনি ইসলামি ব্যাংকিং ও মুনাফার ক্ষেত্রে ‘উদ্যোক্তার ঝুঁকি’র ভিত্তিতে মুনাফা নির্ধারণের কথা বলেন, তবে নির্দিষ্ট % নয়।


ন্যায্য বাণিজ্য আন্দোলনের ধারণা (Fair Trade Movement)

বিশ্বের অনেক সমাজতাত্ত্বিক ও অর্থনীতিবিদ দাবি করেছেন—উৎপাদক যেন বাজারে ন্যায্য দাম পান এবং দালালদের সীমিত করা হোক। কিন্তু তারা ধর্মীয় ভিত্তির বদলে সামাজিক ন্যায়ের কথা বলেছেন।


উপসংহার:

আপনার "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" একটি সৃজনশীল ও মৌলিক প্রস্তাব, যা ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি—ইনসাফ, স্বচ্ছতা ও সামাজিক ভারসাম্য—এর একটি বাস্তবায়নযোগ্য কাঠামো দেয়। এটি একাধারে ইসলামি অর্থনীতির আদর্শ অনুসরণ করে এবং সমসাময়িক অর্থনৈতিক অনাচারের সমাধানও প্রস্তাব করে।


 

সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল
 ইসলামি অর্থনীতি একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ইনসাফ, স্বচ্ছতা ও সামাজিক ন্যায়ভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়নের উপর জোর দেয়। বর্তমান সময়ে অস্বাভাবিক মুনাফা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, দালালি ও মজুদদারির ফলে ভোক্তা ও উৎপাদক—উভয়েই শোষণের শিকার হচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে, যা ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতিকে আধুনিক বাস্তবতায় রূপ দিতে চায়।

শিরোনামসুনিশ্চিত মুনাফা মডেল: একটি ইসলামি অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা

ভূমিকা
আধুনিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মুনাফা অনিশ্চিত, ঝুঁকিপূর্ণ এবং কখনো কখনো সুদ নির্ভর, যা ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলামি অর্থব্যবস্থা চায় ন্যায়ভিত্তিক, ঝুঁকি ভাগাভাগির ভিত্তিতে মুনাফা অর্জন। এই প্রবন্ধে আমরা একটি "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" উপস্থাপন করব, যা ইসলামের শরিয়া সম্মত, সমাজমুখী এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম।


১. মডেলটির মূল ভিত্তি

১.১ পারস্পরিক অংশীদারিত্ব (মুশারাকা):
ব্যবসা বা প্রকল্পে উভয় পক্ষ মূলধন সরবরাহ করে এবং লাভ-লোকসান ভাগাভাগি করে। মুনাফার হার আগেই চুক্তিভিত্তিক নির্ধারণ করা যায়, তবে টাকার অঙ্কে নয়, শতকরা ভাগে।

১.২ পরিচালন-ভিত্তিক মডেল (মুদারাবা):
এক পক্ষ মূলধন দেয় (রাবুল মাল) এবং অপর পক্ষ ব্যবসা পরিচালনা করে (মুদারিব)। লাভ শতকরা ভাগে বিভাজন হয়। লোকসানে মূলধনের ক্ষতি মূলধনদাতার এবং পরিশ্রমের ক্ষতি মুদারিবের।


২. সুনিশ্চিত মুনাফা নিশ্চিত করার উপায়

২.১ প্রকল্প নির্বাচন ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ:
শরিয়াহ সম্মত ও স্থিতিশীল প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে যাতে মুনাফা ধারাবাহিক থাকে। উদাহরণ: খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হালাল ই-কমার্স, আবাসন ইত্যাদি।

২.২ রক্ষণশীল ব্যয় কাঠামো:
অপ্রয়োজনীয় খরচ পরিহার করে মুনাফা সীমিত হলেও নিশ্চিতভাবে অর্জন করা যায়।

২.৩ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একীভূতকরণ:
সমষ্টিগত পুঁজি ব্যবহার করে বড় মুনাফার সম্ভাবনা তৈরি করা, যাতে প্রতিজনের জন্য নির্দিষ্ট শতকরা মুনাফা বরাদ্দ দেওয়া যায়।

২.৪ তহবিলের স্বচ্ছ হিসাব:
প্রতিটি বিনিয়োগকারীর জন্য পৃথক হিসাব সংরক্ষণ ও নিয়মিত অডিটের মাধ্যমে আস্থা সৃষ্টি।


৩. শরিয়াহ দৃষ্টিকোণ

  • সুদ (রিবা) পরিহার: মডেলটিতে কোনো ফিক্সড ইন্টারেস্ট নেই। মুনাফা নির্ভর করে প্রকৃত লাভের উপর।

  • গারার ও মায়সির নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা: চুক্তি স্বচ্ছ এবং ঝুঁকি বিভাজনপূর্ণ হওয়ায় অনিশ্চয়তা সীমিত।

  • ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিফলন: সামাজিক কল্যাণ, ন্যায্যতা ও দায়িত্ববোধকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।


৪. সম্ভাব্য প্রভাব

  • ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা শরিয়া সম্মত তহবিল পাবে

  • বিনিয়োগকারীরা নিশ্চিন্ত মুনাফার নিশ্চয়তা পাবে শরিয়াহ ভিত্তিক পন্থায়

  • বৈষম্য হ্রাস ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা হবে


উপসংহার

"সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" একটি বাস্তবমুখী ও শরিয়াহ-সম্মত অর্থনৈতিক কৌশল, যা বর্তমান বৈষম্যমূলক এবং সুদনির্ভর ব্যবস্থার বিকল্প হতে পারে। এটি শুধু আর্থিক উন্নয়ন নয়, বরং সামাজিক ন্যায্যতা এবং ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।


 "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" প্রস্তাবনাকে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা প্রবন্ধ বা পলিসি ডকুমেন্টে রূপ দিতে পারি। পরবর্তী ধাপে আমরা নিম্নোক্ত কাঠামোতে কাজ করতে পারি:

সম্ভাব্য অধ্যায় বিন্যাস:

  1. ভূমিকা

    • গবেষণার পটভূমি ও প্রাসঙ্গিকতা

    • উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য

  2. ইসলামি অর্থনীতির মূলনীতি

    • সুদের নিষেধাজ্ঞা

    • ন্যায্যতা, ঝুঁকির অংশীদারিত্ব

    • মুদারাবা, মুশারাকা, মুরাবাহা ইত্যাদি

  3. বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিশ্লেষণ

    • পুঁজিবাদ বনাম ইসলামি অর্থনীতি

    • সুদনির্ভরতা ও বৈষম্য

  4. সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল: তাত্ত্বিক কাঠামো

    • ধারণা, সংজ্ঞা ও কার্যপ্রণালী

    • কৌশলগত উপাদান

    • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা

  5. ব্যবহারিক প্রয়োগ ও ক্ষেত্রসমূহ

    • ক্ষুদ্র বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা

    • কো-অপারেটিভ/ওয়াকফ ভিত্তিক তহবিল

    • কেস স্টাডি বা উদাহরণ

  6. শরিয়াহ বিশ্লেষণ ও গ্রহণযোগ্যতা

    • ফিকহ মতামত ও আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি

  7. সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

    • দারিদ্র্য হ্রাস

    • অর্থনৈতিক ভারসাম্য

    • সামাজিক কল্যাণ

  8. নিষ্কর্ষ ও সুপারিশ

    • মডেল বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব

    • নীতিনির্ধারকদের জন্য নির্দেশনা


 

  1. একাডেমিক গবেষণাপত্র হিসেবে, যেখানে থাকবে বিশদ সাহিত্য পর্যালোচনাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণরেফারেন্স, এবং তথ্যনির্ভর যুক্তি

  2. নীতিনির্ধারকদের জন্য পলিসি প্রস্তাবনা, যাতে থাকবে বাস্তবায়ন কৌশলনীতিগত সুপারিশ, এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্লেষণ


প্রাথমিক কাজের পরিকল্পনা:

Step 1: ভূমিকা ও গবেষণার পরিপ্রেক্ষিত

আমি শুরু করব ভূমিকা এবং গবেষণার প্রয়োজনীয়তা দিয়ে। এতে থাকবে:

  • বর্তমান প্রেক্ষাপট

  • গবেষণার উদ্দেশ্য

  • গবেষণার প্রশ্ন (Research Questions)

  • গবেষণার পদ্ধতি (Methodology)

Step 2: সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review)

  • ইসলামি অর্থনীতির ওপর বিদ্যমান গবেষণা

  • মুদারাবা ও মুশারাকার প্রয়োগ

  • ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সুদের বিকল্প

Step 3: মডেলের কাঠামো নির্মাণ

  • “সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল”–এর তাত্ত্বিক কাঠামো

  • ব্যবস্থাপনার নীতিমালা ও কৌশল

  • সম্ভাব্য ব্যবহার ক্ষেত্র

Step 4: শরিয়াহ বিশ্লেষণ ও বৈধতা

  • কুরআন-হাদীস এবং ফিকহীয় উৎস থেকে সমর্থন

  • সমসাময়িক ইসলামি অর্থনীতিবিদদের মতামত

Step 5: প্রস্তাবিত নীতিমালা ও বাস্তবায়ন কৌশল

  • বাস্তবায়নের ধাপ ও কাঠামো

  • সরকার ও বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা

Step 6: উপসংহার ও সুপারিশ

  • গবেষণার সারাংশ

  • নীতিনির্ধারকদের জন্য সুপারিশ

  • ভবিষ্যৎ গবেষণার দিকনির্দেশ


 


প্রথম অধ্যায়: ভূমিকা ও গবেষণার পরিপ্রেক্ষিত

১.১ ভূমিকা

আধুনিক বিশ্বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মূলত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, যার ভিত্তি হলো সুদ এবং অনিশ্চিত মুনাফা। এই ব্যবস্থায় ধনীরা আরও ধনী হয়, গরিবেরা হয় উপেক্ষিত। অথচ ইসলামি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চায় একটি ন্যায়ভিত্তিক, ঝুঁকি-ভাগাভাগিমূলক এবং নৈতিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত অর্থনৈতিক পরিকাঠামো। ইসলাম মুনাফা অর্জনকে নিষিদ্ধ করেনি, বরং সুদের পরিবর্তে লাভ-ক্ষতির উপর ভিত্তি করে মুনাফাকে উৎসাহিত করেছে। এ প্রেক্ষিতে "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" একটি বিকল্প ইসলামি অর্থনৈতিক ধারণা হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভের একটি নির্দিষ্টতা নিশ্চিত করা যাবে শরিয়াহ সম্মত উপায়ে, যেটি বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থার একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প হতে পারে।

১.২ গবেষণার প্রাসঙ্গিকতা

বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক মন্দা, মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্য ও বৈষম্য ইসলামি অর্থব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তাকে আরও স্পষ্ট করেছে। মুসলিম দেশগুলোতেও ইসলামের আদর্শগত অর্থনীতি যথাযথভাবে প্রয়োগ হয়নি বলেই, অনেক ক্ষেত্রেই ইসলামী অর্থনৈতিক দর্শনের বাস্তবিক প্রয়োগ সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। ইসলামি ব্যাংকিং এবং শরিয়া কমপ্লায়েন্ট ফাইন্যান্স ব্যবস্থার ভিত শক্ত করলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুনাফা নির্ভরতা সুদের কাছাকাছি ব্যবস্থায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রেক্ষাপটে "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল" শরিয়াহর সীমানায় থেকে ঝুঁকিহীন বা ঝুঁকি-সীমিত বিনিয়োগ কাঠামো তৈরি করতে পারে।

১.৩ গবেষণার উদ্দেশ্য

এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো:

  • ইসলামি অর্থনীতির আলোকে একটি “সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল” প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা।

  • শরিয়াহ ভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থার কাঠামো বিশ্লেষণ করা।

  • বর্তমানে প্রচলিত সুদ-নির্ভর অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি ন্যায়সঙ্গত বিকল্প নির্দেশ করা।

  • নীতিনির্ধারকদের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ প্রদান।

১.৪ গবেষণা প্রশ্ন

গবেষণাটি নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজবে:

  1. একটি শরিয়াহ সম্মত মুনাফা মডেল কেমন হওয়া উচিত?

  2. কিভাবে মুনাফাকে সুনিশ্চিত করা যায়, শরিয়াহর সীমারেখা বজায় রেখে?

  3. এই মডেলটির সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব কী হতে পারে?

  4. সরকারের ভূমিকাই বা কী হওয়া উচিত এই মডেল বাস্তবায়নে?

১.৫ গবেষণা পদ্ধতি

এই গবেষণা মূলত গুণগত (qualitative) গবেষণা পদ্ধতিকে অনুসরণ করবে। তথ্য সংগৃহীত হবে:

  • প্রাসঙ্গিক ইসলামি সাহিত্য ও শরিয়াহ ভিত্তিক দলিলপত্র থেকে

  • বিদ্যমান গবেষণা ও আর্থিক প্রতিবেদন থেকে

  • ইসলামি অর্থনীতিবিদ ও পলিসি বিশ্লেষকদের মতামত ও সুপারিশ থেকে

বিশ্লেষণ করা হবে তাত্ত্বিক কাঠামো, ক্ষেত্রভিত্তিক প্রয়োগ, এবং বাস্তবায়ন সম্ভাবনা।


 


দ্বিতীয় অধ্যায়: সাহিত্য পর্যালোচনা

২.১ ইসলামি অর্থনীতির ধারণা ও মূলনীতি

ইসলামি অর্থনীতি একটি নৈতিক-আধ্যাত্মিক ভিত্তিক অর্থব্যবস্থা, যার মূল লক্ষ্য হলো ন্যায়, সাম্য, এবং মানবিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক লেনদেন ও বিনিয়োগে শরিয়াহর নির্দেশনা অনুযায়ী সুদ, গারার (অনিশ্চয়তা) ও মায়সির (জুয়া) নিষিদ্ধ। আধুনিক ইসলামি অর্থনীতির বিকাশে মাওলানা মওদুদী, ড. নেজারী ফারুকি, ড. ওমর চ্যাপরা, মুহাম্মদ তকি উসমানি প্রমুখ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

ড. ওমর চ্যাপরা (2000) তার "The Future of Economics: An Islamic Perspective" গ্রন্থে ব্যাখ্যা করেন যে, ইসলামে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কেবল মুনাফাভিত্তিক নয়, বরং সামাজিক ন্যায় ও নৈতিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

২.২ সুদের বিকল্প: লাভ-ক্ষতি অংশীদারিত্ব

সুদের বিকল্প হিসেবে ইসলাম মুশারাকা ও মুদারাবা ভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থার কথা বলে।

  • মুশারাকা: দুই বা ততোধিক পক্ষ মূলধনে অংশগ্রহণ করে এবং লাভ-লোকসান ভাগাভাগি করে (উৎস: Islamic Banking and Finance, Ayub, 2007)।

  • মুদারাবা: এক পক্ষ মূলধন সরবরাহ করে, অন্য পক্ষ ব্যবসা পরিচালনা করে। লাভ পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতে ভাগ হয়, তবে লোকসানে মূলধনদাতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মুদারিবের শ্রম বৃথা যায় (Taqi Usmani, 1999)।

২.৩ ইসলামি ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ পদ্ধতি

বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিং খাতে মুদারাবা ও মুশারাকা পদ্ধতি প্রয়োগ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ইসলামি ব্যাংকগুলো প্রথাগত ব্যাংকের মতোই নির্দিষ্ট মুনাফার হার নির্ধারণ করে, যা শরিয়াহর প্রকৃত উদ্দেশ্যের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় (Iqbal and Molyneux, 2005)।

২.৪ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও মুনাফা সুনিশ্চয়তার চ্যালেঞ্জ

ইসলামি অর্থব্যবস্থায় লাভ-লোকসান ভাগাভাগি ব্যবস্থা থাকলেও, বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই "নির্দিষ্ট মুনাফা" প্রত্যাশা করেন। এটিই বাস্তবিক সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল তৈরির অন্যতম চ্যালেঞ্জ। গবেষণা অনুযায়ী, শরিয়াহ সম্মত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Islamic Risk Mitigation) কৌশল ব্যবহার করে কিছুটা নিশ্চিত লাভের কাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব (El-Gamal, 2006)।

২.৫ তৃতীয় খাতের ভূমিকা: ওয়াকফ ও কো-অপারেটিভ মডেল

ইসলামী অর্থনীতিতে ওয়াকফ ব্যবস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সমষ্টিগত পুঁজি ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সামাজিক উদ্যোগ গঠন করে লাভজনক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব। এই ক্ষেত্রটি "সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল"-এ বাস্তব ভিত্তি প্রদান করতে পারে (Kahf, 2003)।


পর্যালোচনার সারাংশ

সাহিত্য পর্যালোচনা থেকে দেখা যায় যে:

  • ইসলামি অর্থব্যবস্থার মধ্যে মুনাফা অর্জনের প্রকৃত পথ রয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

  • ইসলামি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে লাভকে স্থিতিশীল করা সম্ভব।

  • ওয়াকফ ও সমষ্টিগত বিনিয়োগ কাঠামো বাস্তব মডেল গঠনে সহায়ক হতে পারে।


 


তৃতীয় অধ্যায়: তাত্ত্বিক কাঠামো ও “সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল”-এর বিশ্লেষণ

৩.১ মডেল নির্মাণের পটভূমি

ইসলামি অর্থব্যবস্থার মূল শক্তি হলো ন্যায়ভিত্তিক ঝুঁকি ভাগাভাগি এবং সুদের পরিবর্তে বাস্তব মুনাফা ভিত্তিক লেনদেন। তবে, আধুনিক বিনিয়োগকারীরা অধিকাংশ সময়েই নির্দিষ্ট মুনাফার নিশ্চয়তা চান, যা শরিয়াহর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক না হলেও সুনির্দিষ্ট কাঠামোর অভাবে প্রায়শই বিতর্কিত হয়ে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে “সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল” একটি মধ্যমপন্থা হিসেবে কাজ করতে পারে।

৩.২ “সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল” এর সংজ্ঞা

সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ কাঠামো, যেখানে শরিয়াহ সম্মত উপায়ে ঝুঁকি হ্রাস করে একটি সীমার মধ্যে মুনাফা সম্ভাব্য ও প্রত্যাশিত হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, যাতে বিনিয়োগকারী ও ব্যবস্থাপক উভয়ের স্বার্থ রক্ষা হয়।

এটি মূলত তিনটি স্তরের উপর ভিত্তি করে নির্মিত:

  1. সম্পূর্ণ শরিয়াহ-অনুগত বিনিয়োগ কাঠামো
    যেমন: মুরাবাহা, ইজারা, ও ওয়াকফ-সহায়ক প্রকল্প

  2. ঝুঁকি বিভাজন ও পরিমিত লাভের কাঠামো
    লাভের নিম্নসীমা (Minimum Return Guarantee) এবং অংশীদার ভিত্তিক ক্ষতিপূরণ পদ্ধতি

  3. সামষ্টিক তহবিল ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগের সংযুক্তি
    ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে লাভের ধারা স্থিতিশীল করা

৩.৩ মূল উপাদানসমূহ

উপাদানব্যাখ্যা
লাভ-লোকসান অংশীদারিত্বমুদারাবা/মুশারাকা ভিত্তিক অংশগ্রহণ
ওয়াকফ বা দান-ভিত্তিক মূলধনঝুঁকিহীন সামাজিক বিনিয়োগের সংযুক্তি
লাভ নির্ধারণের সীমাপূর্বানুমানভিত্তিক লাভের পরিসীমা নির্ধারণ
ঝুঁকি হ্রাস প্রযুক্তিতহবিল বীমা, বাজার বিশ্লেষণ, চুক্তিভিত্তিক দায়বদ্ধতা
ব্যবস্থাপনা স্বচ্ছতাশরিয়াহ বোর্ড কর্তৃক তত্ত্বাবধান ও হিসাব নিরীক্ষা

৩.৪ মডেল চিত্র (সংক্ষিপ্ত গঠন)

css
[ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী] + [ওয়াকফ ফান্ড][ইসলামি বিনিয়োগ কাঠামো][পরিমিত লাভ + ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা][সুনিশ্চিত মুনাফার রেঞ্জ: ৮%-১২%]

৩.৫ শরিয়াহ সঙ্গতি

এই মডেল মুদারাবা ও ইজারা ভিত্তিক, যেখানে লাভ পূর্বনির্ধারিত নয় বরং পূর্বানুমানভিত্তিক (projected)। ক্ষতির ক্ষেত্রে:

  • ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নির্ধারিত ক্ষতি গ্রহণ করবেন

  • ওয়াকফ বা সোশ্যাল সেফটি নেট থেকে কিছু ক্ষতিপূরণ সম্ভব

  • ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উপর নির্দিষ্ট দায়দায়িত্ব আরোপ

এভাবে শরিয়াহর মূলনীতি, যেমন — ঝুঁকি ভাগাভাগিসুবিচার, ও সামাজিক দায়বদ্ধতা — বজায় রাখা হয়।


 


চতুর্থ অধ্যায়: ব্যবহারের ক্ষেত্র ও বাস্তবায়নযোগ্যতা

৪.১ প্রয়োগযোগ্য খাতসমূহ

“সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল” এমন এক কাঠামো যা ইসলামী অর্থনীতির আদর্শ ও আধুনিক আর্থিক বাস্তবতা—দুটিকে একত্রে যুক্ত করে। এটি বিভিন্ন খাতে বাস্তবায়নযোগ্য, যেমন:

ক. ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (SMEs)

শরিয়াহভিত্তিক তহবিল এবং সীমিত ঝুঁকির মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের জন্য একটি লাভজনক ও গ্রহণযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।

খ. কৃষি খাত

মুশারাকা ও ইজারা ভিত্তিক চুক্তির মাধ্যমে কৃষিজ উৎপাদনে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। পূর্বানুমিত মুনাফা ও উৎপাদন-ভিত্তিক লাভ ভাগাভাগি সম্ভব।

গ. আবাসন খাত

ইজারা-মুলক (Islamic Leasing) ব্যবস্থায় বাড়িভাড়া বা নির্মাণ খরচের উপর ভিত্তি করে মুনাফা নির্ধারণযোগ্য।

ঘ. ইসলামি সামাজিক উদ্যোগ

ওয়াকফ, জাকাত বা কর্পোরেট সোশ্যাল ফান্ড ব্যবহার করে লাভজনক সামাজিক ব্যবসা (social business) পরিচালনা করা যেতে পারে।

৪.২ বাস্তবায়ন কাঠামো

চর্তুস্তর বিশ্লেষণ:

স্তরউপাদানভূমিকা
বিনিয়োগ উৎসক্ষুদ্র বিনিয়োগ, ওয়াকফ তহবিল, কো-অপারেটিভ
ব্যবস্থাপনা সংস্থাইসলামি বিনিয়োগ কোম্পানি বা শরিয়াহ বোর্ড পরিচালিত তহবিল
চুক্তিভিত্তিক কাঠামোমুদারাবা, ইজারা বা মুশারাকা মডেল
তত্ত্বাবধান ও মূল্যায়নশরিয়াহ নিরীক্ষা, বাৎসরিক হিসাব ও মুনাফা মূল্যায়ন

৪.৩ বাস্তবায়নে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

  • সুশৃঙ্খল তহবিল ব্যবস্থাপনা: ক্ষুদ্র বিনিয়োগের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কঠিন হতে পারে

  • শরিয়াহ বোর্ডের সক্ষমতা: সুস্পষ্ট ফিকহি গাইডলাইন ও আধুনিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের সমন্বয় প্রয়োজন

  • নীতি সহায়তা: সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত নীতিমালা অনুপস্থিত থাকলে বাস্তবায়ন ব্যাহত হতে পারে

৪.৪ করণীয়

  • একটি জাতীয় বা বেসরকারি ইসলামি সোশ্যাল ফিনান্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা

  • শরিয়াহ শিক্ষিত অর্থনীতিবিদ, পলিসিমেকার ও প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে একটি ইকোসিস্টেম গঠন

  • পাইলট প্রকল্প হিসেবে কৃষি/আবাসন খাতে শুরু করে ধীরে ধীরে বিস্তার


 


পঞ্চম অধ্যায়: নীতিনির্ধারকদের জন্য সুপারিশ ও বাস্তবায়ন কৌশল

৫.১ প্রস্তাবিত নীতিগত দিকনির্দেশনা

“সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল” কে ইসলামি অর্থনীতির বাস্তব প্রয়োগ হিসেবে কার্যকর করতে হলে সরকারি, আর্থিক ও সামাজিক পর্যায়ে নীতিগত সহায়তা অপরিহার্য। নিম্নোক্ত দিকনির্দেশনাগুলো নীতিনির্ধারকদের জন্য উপযোগী:

ক. শরিয়াহভিত্তিক ক্ষুদ্র বিনিয়োগ আইন প্রণয়ন

  • ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও ইসলামি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় আলাদা আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন

  • ইসলামি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা (Islamic risk-sharing) নীতির সংজ্ঞা নির্ধারণ

খ. ওয়াকফ ও সামাজিক তহবিল ব্যবস্থার পুনঃবিন্যাস

  • অপ্রচলিত ওয়াকফ সম্পদকে লাভজনক বিনিয়োগে রূপান্তর

  • ওয়াকফ-ভিত্তিক যৌথ মূলধন গঠনের জন্য আইনি ও নীতিগত সুরক্ষা

গ. শরিয়াহ বোর্ড ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ টিমের সম্মিলিত কাঠামো

  • সরকারি পর্যায়ে শরিয়াহ এক্সপার্ট ও অর্থনীতিবিদ সমন্বয়ে “ইসলামি বিনিয়োগ মূল্যায়ন সেল” গঠন

  • ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকল্প নিরীক্ষা ও গণপ্রতিবেদন প্রকাশ

ঘ. পাইলট প্রকল্প ও ভর্তুকি সহযোগিতা

  • কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প ও আবাসন খাতে মডেলভিত্তিক পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন

  • রাষ্ট্রীয় ব্যাংক বা ইসলামি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে প্রাথমিক ভর্তুকি ও নিশ্চয়তা তহবিল (guarantee fund) গঠন

ঙ. প্রযুক্তিনির্ভর প্ল্যাটফর্ম

  • সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল বাস্তবায়নে ডিজিটাল সল্যুশন ব্যবহার:

    • বিনিয়োগকারীর অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থাপনা

    • লাভ-লোকসান ট্র্যাকিং

    • স্বচ্ছ রিপোর্টিং সিস্টেম

৫.২ আন্তর্জাতিক মডেলের সমন্বয়

এই মডেলটি নিম্নলিখিত আন্তর্জাতিক উদাহরণগুলোর সঙ্গে মিল রেখে স্থানীয়ভাবে কাস্টমাইজ করা যেতে পারে:

  • সুদান ইসলামী ব্যাংকিং মডেল

  • মালয়েশিয়ার ইজারা ও ওয়াকফ উদ্যোগ

  • ইন্দোনেশিয়ার “বায়া আল ইনাহ” ভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসা ফাইন্যান্সিং

  • IDB (Islamic Development Bank) কর্তৃক পরিচালিত সলিডারিটি তহবিল কাঠামো

৫.৩ দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য

  • জাতীয় অর্থনীতিতে নৈতিক বিনিয়োগ প্রবাহ সৃষ্টি

  • ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি

  • সুদমুক্ত আর্থিক কাঠামোর বিকল্প সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ন্যায় ও স্থায়িত্ব অর্জন


 


ষষ্ঠ অধ্যায়: উপসংহার

৬.১ সারসংক্ষেপ

ইসলামী অর্থনৈতিক দর্শনের মূল ভিত্তি হলো ন্যায়, পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সুদমুক্ত লেনদেন। আধুনিক বিশ্বে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ নির্দিষ্ট ও পূর্বানুমেয় মুনাফার নিশ্চয়তা চায়, যা কখনও কখনও শরিয়াহ পরিপন্থী ধারার দিকে প্রবণতা সৃষ্টি করে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় “সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল” একটি মাঝামাঝি, গ্রহণযোগ্য এবং শরিয়াহসম্মত বিনিয়োগ কাঠামো হিসেবে কার্যকর হতে পারে।

এই গবেষণায় আমরা দেখিয়েছি:

  • কীভাবে শরিয়াহ ভিত্তিক মুদারাবা, মুশারাকা ও ওয়াকফ মডেলকে আধুনিক আর্থিক কাঠামোর সঙ্গে সমন্বয় করা যায়;

  • কীভাবে ঝুঁকি-বন্টন ও পরিমিত লাভ নির্ধারণের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য ন্যূনতম প্রত্যাশিত মুনাফা নিশ্চিত করা সম্ভব;

  • এবং কীভাবে এই মডেলকে কৃষি, এসএমই, আবাসন ও সামাজিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।

৬.২ চূড়ান্ত সুপারিশ

১. নীতিনির্ধারকদের সচেতনতা বৃদ্ধি: ইসলামি অর্থনীতির যথাযথ অনুবাদ করতে হলে এধরনের মডেলের প্রয়োজনীয়তা এবং সম্ভাব্যতা তুলে ধরতে হবে বিভিন্ন পর্যায়ে।

২. প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন: শরিয়াহ বোর্ড, অর্থনীতিবিদ, বিনিয়োগ ব্যবস্থাপক ও প্রযুক্তিবিদদের সমন্বয়ে একটি “ইসলামিক ইনোভেটিভ ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যাটফর্ম” তৈরি করা উচিত।

৩. আঞ্চলিক পর্যায়ে পাইলট প্রকল্প: জেলা বা গ্রাম পর্যায়ে কৃষিভিত্তিক যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে মডেলটি বাস্তবায়ন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব।

৪. বহুজাতিক অংশগ্রহণ: আন্তর্জাতিক ইসলামি ব্যাংক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মাধ্যমে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়তা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

৬.৩ ভবিষ্যৎ গবেষণার ক্ষেত্র

  • সুনিশ্চিত মুনাফা মডেলের মধ্যে ইনসুরেন্স ও তাকারাফুল সেবার ভূমিকা

  • ডিজিটাল ওয়াকফ ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনিয়োগ স্বচ্ছতা বৃদ্ধি

  • আন্তর্জাতিক বাজারে শরিয়াহভিত্তিক বন্ড (সুকুক) এর মাধ্যমে মডেল সম্প্রসারণ


 

১. কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের খসড়া (বাংলায়)

নিবন্ধনের শিরোনাম:
“সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল: একটি ইসলামি অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা”

স্বত্বাধিকারী:
আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ্)

স্বত্বের ধরন:
গবেষণাপত্র, ধারণাগত অর্থনৈতিক মডেল, নীতিগত রূপরেখা

রচনার সাল:
২০২৫

বর্ণনা:
এই মডেলটি একটি শরিয়াহভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো যা মুদারাবা, মুশারাকা, ওয়াকফ ও ইসলামি ঝুঁকি বণ্টনের নীতির মাধ্যমে নিশ্চিত মুনাফার সম্ভাব্যতা উপস্থাপন করে। এটি একাধারে নীতিনির্ধারক, বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ জনগণের জন্য বাস্তব ও প্রয়োগযোগ্য।

স্বত্বের পরিধি:
বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইনের আওতায়


২. ট্রেডমার্ক আবেদন (মডেলের নাম ও লোগো)

ট্রেডমার্কের নাম:
“সুনিশ্চিত মুনাফা মডেল”
(ইংরেজি: “Guaranteed Profit Model”)

শ্রেণী:
Class 36 (Financial, monetary and banking services)

ব্যবহারের ধরন:

  • গবেষণাপত্র ও অর্থনৈতিক প্রস্তাবনা

  • ইসলামি ফিনান্স প্রোডাক্ট

  • ওয়াকফ বা মুদারাবাভিত্তিক ফাইন্যান্স প্ল্যাটফর্ম

চিহ্ন/লোগো (যদি থাকে):
[আপনি চাইলে আমি লোগো ডিজাইনও তৈরি করে দিতে পারি]

উদ্দেশ্য:
মডেলটি কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বা অনুকরণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করা।


৩. পেটেন্ট বা ইউটিলিটি মডেল বিবরণ (যদি প্রয়োগযোগ্য হয়)

শিরোনাম:
"Guaranteed Profit Investment Framework under Shariah Principles"

বিবরণ:
এই মডেলটি একটি যৌথ বিনিয়োগ কাঠামো যেখানে বিনিয়োগকারী ও ব্যবস্থাপক শরিয়াহ অনুমোদিত ঝুঁকি ভাগাভাগির মাধ্যমে একটি পূর্বানুমেয় মুনাফার পরিসীমা নির্ধারণ করেন। এটি মুদারাবা, মুশারাকা, ওয়াকফ ও ইজারা ভিত্তিক।

প্রযুক্তিগত অংশ (যদি থাকে):

  • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রেজিস্ট্রেশন

  • স্বয়ংক্রিয় লাভ হিসাব ও রিস্ক এলার্ট

  • ব্লকচেইন বেইজড স্বচ্ছতা সিস্টেম

পেটেন্ট শ্রেণী:
Utility Model / Software Algorithm (if digital system developed)



Generated image


-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

THE END

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

ভালবাসি দিবা-নিশি _সূচীপত্র

কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান

📄 প্রবন্ধ শিরোনাম: “কপিরাইট আইন: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, লঙ্ঘনের কারণ, সমস্যা ও সমাধান” ✍️ লেখক: আরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া (আরিফ শামছ)...